আপনজন ডেস্ক: দিল্লি অভিযানের দ্বিতীয় দিনে একশো দিনের কাজ ও আবাস যোজনার বঞ্চিতদের নিয়ে বকেয়া আদায়ের দাবিতে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে তৃণমূল সাংসদ, বিধায়ক এবং জব কার্ডধারীরা মঙ্গলবার সকাল সাড়ে দশটায় বাংলার “ন্যায্য” তহবিলের দাবিতে যন্তর মন্তরে ধর্না দেন। এরপর দুপুরে তারা কৃষি ভবনে যান কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী তাদের সঙ্গে তো দেখাই করলেন না, উল্টে কৃষি ভবনে অবস্থান বিক্ষোভ থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়, মহুয়া মৈত্রদের দিল্লি পুলিশ চ্যাংদোলা করে কৃষি ভবনের বাইরে নিযে গিয়ে আটক করল। মঙ্গলবার দুপুরে তৃণমূলের জাতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের একটি দল এমজিএনআরইজিএস-সহ কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলির বঞ্চিতদের কাছ থেকে চাহিদাপত্র নিয়ে অফিসে যান। তৃণমূল কংগ্রেসের অভিযোগ, সারাদিন অপেক্ষার পর নির্ধারিত সময় সন্ধ্যা ৬টায় দিল্লির কৃষি ভবনে মন্ত্রীর দফতরে পৌঁছায় প্রতিনিধিদলটি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মাথায় করে চিঠির বোঝা নিয়ে যান কৃষি ভবনে। কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতির অফিসের বাইরে ৪০ সদস্যের তৃণমূল কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল ৯০ মিনিটেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করতে বাধ্য হয় এবং পরে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে না পারার কথা জানানো হয়। সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর কার্যালয়ের অপেক্ষামান স্থলে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ করেন, মন্ত্রী সাধ্বী নিরঞ্জন জ্যোতি গতকাল আমাদের বলেছিলেন যে তিনি দুপুর ১২ টায় আমাদের সাথে দেখা করতে পারবেন না। কারণ তিনি দিল্লির বাইরে থাকবেন এবং বিকেল ৫ টায় রাজধানীতে ফিরবেন। সে অনুযায়ী তিনি সন্ধ্যা ৬টায় সভার তারিখ পরিবর্তন করেন। আজ বিকেল চারটেয় বিজেপি নেতা শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে বৈঠক করার পর বোঝাই যায় তার বক্তব্য স্পষ্টতই মিথ্যে ছিল। এখন, আমাদের দেড় ঘন্টা অপেক্ষা করতে বাধ্য করার পরে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, তিনি আমাদের সাথে দেখা করতে পারবেন না।
তখন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা না হওয়া পর্যন্ত আমরা এখান থেকে সরে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় তৃণমূল কংগ্রেস। সেই সিদ্ধান্ত মোতাবেক তৃণমূল কংগ্রেস নেতারা কৃষি ভবনের ভিতরে ধর্নায় বসেছেন। ধর্নায বসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এটা প্রমাণ করে যে বিজেপি ভয় পাচ্ছে এবং সাধ্বী নিরঞ্জন, গিরিরাজ সিং, এমনকি জেপি নাড্ডা বা নরেন্দ্র মোদী কেউই এই প্রশ্নের উত্তর দিতে আসেননি। অনুরাগ ঠাকুরের মতো ব্যক্তিদের সহ কোনও বিজেপি প্রতিনিধি যারা আমাদের বিরুদ্ধে সাংবাদিক সম্মেলন করেছেন তাদের কেউ কি আমাদের সঙ্গে দেখা করতে আসতে পারেন না, সেই প্রশ্ন তোলেন। এটা বিজেপির জন্য লজ্জা বলে অভিহিত করেন। কৃষি ভবনে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বসে থাকতে দেখা যায় সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডেরেক ও’ব্রায়েন, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়দেরও। রাত ৮.৪৫ মিনিটে কৃষি ভবনের ভিতরে ধর্নাস্থল থেকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের বলা হয়েছে যে মন্ত্রী চলে গেছেন। কয়েক মাস আগে, যখন আমরা তার সাথে দেখা করতে এসেছিলাম, তিনি একই পালানোর কৌশল বেছে নিয়েছিলেন এবং তার পরিবর্তে তার সেক্রেটারিকে আমাদের সাথে দেখা করতে বাধ্য করেছিলেন। আমরা এখানে এমন লোকদের চিঠি নিয়ে এসেছি, যাদের মজুরি তারা ইতিমধ্যে যে কাজ করেছে তার জন্য বকেয়া রয়েছে এবং মন্ত্রীর কাছে জনগণের কণ্ঠস্বর শোনার সময় নেই। তবে কেন্দ্রীয় এজেন্সিগুলির স্ক্যানার থেকে বাঁচতে বিজেপি শিবিরে যোগ দেওয়া বিশ্বাসঘাতকের সাথে দেখা করার জন্য তাঁর কাছে সময় রয়েছে। অভিষেক আরও বলেন, আমরা এখানে প্রায় তিন ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করছি এবং বর্তমানে শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। এখানে প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে এবং তারা আমাদের এখান থেকে সরানোর জন্য আমাদের উপর শক্তি প্রয়োগ করতে পারে। আমাদের জোর করে অপসারণ করা হলে আমরা আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ ঘোষণা করব। তার এই ঘোষণার পরপরই কৃষি ভবন প্রাঙ্গণে পুলিশি তৎপরতাকে কেন্দ্র করেন বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। অভিষেককে পুলিশ চ্যাংদোলা করে নিয়ে যেতে গেলে তিনি প্রতিহত করার চেষ্টা করেন। সাংসদ দোলা সেন ও রাজ্যের মন্ত্রী বীরবাহা হাঁসদার সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায় পুলিশকে। এমনকী সাংসদ মহুয়া মৈত্রকে পুলিশ চ্যাংদোলা করে তুলে নিয়ে যেতে থাকে। শান্তনু সেনকেও কলার দিয়ে টেনে নিয়ে যেতে দেখা যায়। এভাবেই কৃষি ভবন প্রাঙ্গণে ধর্নাস্থল থেকে তৃণমূল প্রতিনিধিদলকে জোর করে সরিয়ে দেয় দিল্লি পুলিশ। তৃণমূলের অভিযোগ, পুলিশি হামলা এবং মারধর করা হয়েছে, নেতাদের ফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। অভিষেক-সহ সমস্ত নেতাকে আটক করে দিল্লি পুলিশ লাইন্সে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। আটক নেতাদের কৃষি ভবন থেকে সরিয়ে নেওয়ার সময়ও পুলিশের গাড়ি থেকে স্লোগান দিতে থাকেন। শেষ খবর অনুযায়ী তৃণমূল নেতাদের মুখার্জি নগরের (কিংসওয়ে ক্যাম্প) উৎসব সদনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct