মহবুবুর রহমান: গান্ধী জয়ন্তী হল ভারতের তিনটি জাতীয় ছুটির মধ্যে একটি। ভারতীয় জাতির জনক মোহন দাস করমচাঁদ গান্ধীর জন্মদিন। ১৮৬৯ সালের ২রা অক্টোবর গুজরাটের পুরবন্দরে জন্মগ্রহণকারী মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে প্রতিবছর ভারতে উদযাপিত একটি অনুষ্ঠান। প্রতিবছর ২রা অক্টোবর তাঁর জন্মদিন সারাদেশে সমান মর্যাদায় বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে সাড়ম্বরে পালিত হয়।
এই পৃথিবীতে এমন হাতে গোনা কয়েকজন মানুষই আছেন,যাঁরা বিশ্ব মাঝারে ছাপ রেখে গিয়েছেন। তারা মরেও মানব হৃদে অমর।যাঁদের আদর্শ এবং জীবনবোধ গোটা বিশ্ব পৃথিবীকে অনুপ্রাণিত করেছে। নিঃসন্দেহে তাঁদের মধ্যে প্রথম সারিতে আছেন মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী। ২০২৩ এর ০২ অক্টোবর আমরা তাঁর ১৫৪তম জন্মবার্ষিকী পালন করছি।
গোটা পৃথিবী জুড়েই প্রতি বছর ২রা অক্টোবর মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিবস পালন করা হয়। তাঁর দেওয়া শিক্ষা ও আদর্শ ফিরে দেখি আমরা। বিভিন্ন স্কুলে গান্ধীজয়ন্তী উপলক্ষে অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। গান্ধীর কথা, তাঁর কাজ আমাদের আজও অনুপ্রাণিত করে। বিশেষ করে আজকের দিনে এসে দাঁড়িয়ে তাঁর আদর্শ আঁকড়ে ধরার প্রয়োজন ফুটে উঠেছে গোটা বিশ্বেই।
পরাধীন ভারতে গান্ধীজির মর্মকথা উদ্দীপ্ত করেছিল গোটা দেশকে। ১৯৩০ সালে তিনি ডাণ্ডি অভিযান শুরু করলে বহু মানুষ এসে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন। ১৯৪২ সালে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে ভারত ছাড়ো আন্দোলন শুরু করেন তিনি। গান্ধীজি উপলব্ধি করেছিলেন যে দেশকে সত্যিকারের স্বাধীনতা অর্জন করতে হলে শুধু ব্রিটিশ সরকারের কাছ থেকে স্বাধীনতা অর্জন করলেই হবে না। স্বাধীনতা চাই জাতপাতের অন্ধকারে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা বাঁধন থেকেও। সেই কারণে দেশ থেকে জাতপাত এবং অস্পৃশ্যতা দূর করার জন্য লড়াই করেছিলেন তিনি।
একজন শিক্ষিত ব্রিটিশ আইনজীবী হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকায় নিপীড়িত ভারতীয় সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের আন্দোলনে গান্ধীজি প্রথম তাঁর অহিংস শান্তিপূর্ণ নাগরিক আন্দোলনের মতাদর্শ প্রয়োগ করেন। ভারতে ফিরে আসার পরে তিনি কয়েকজন দুঃস্থ কৃষক এবং দিনমজুরকে সঙ্গে নিয়ে বৈষম্যমূলক কর আদায় ব্যবস্থা এবং বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলেন। ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বে আসার পর গান্ধী সমগ্র ভারতব্যাপী দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারী স্বাধীনতা, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে ভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠা, বর্ণবৈষম্য দূরীকরণ, জাতির অর্থনৈতিক সচ্ছলতা সহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রচার শুরু করেন।
গান্ধীজি আপন মহৎ গুণাবলীর জন্য বিশ্বের সর্বত্র সমাদৃত।
গান্ধীজির মহৎ গুণ কে শ্রদ্ধা জানাতে তাঁর স্মৃতিমূলক অনেক কিছুই সরকারিভাবে করা হয়েছে।ভারতের শ্রদ্ধাস্পদ বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী গান্ধীজির মূল্যায়নে ২০১৪ সালের ২রা অক্টোবর মহৎ উদ্দেশ্য বিজড়িত স্বচ্ছভারত অভিযানের শুভ সূচনা করেন।
ভাবনীয় বিষয় হলো,অহিংসার দীপ্ত মশাল গান্ধীজির উত্তর সুরি হয়েও কালের বিবর্তনে আমরা আজ সেই অহিংসার পথ থেকে অনেক দূরে সরে এসেছি!তাই তো আমরা ভারতবাসী আজ অন্তর্কোন্দলে মত্ত। তার প্রভাব পড়েছে সমাজিক অবক্ষয়েও।আমরা সমূহ ভারতবাসী আজ জাতপাত,ধর্মদ্বন্দ,হিংসা হানাহানি ,খুন,শোষন,দমন ,পীড়ন,অন্যায়,অপরাধ আদিতে নিমজ্জিত! আমরা জুলুম নির্যাতন,গণ প্রহার,অপহরণ, ধর্ষণের মতো ন্যাক্কারজনক কর্মাদিতে সিদ্ধহস্ত! আমাদের মাঝে নেই শ্রদ্ধা,প্রেম,প্রীতি, ভালোবাসা,সৌজন্যবোধ, পরধর্ম-সহিষ্ণুতা! আমরা আজ নোংরা রাজনৈতিক বেড়াজালের শিকার!আফসোস !
একসময়ের জগৎসভায় শ্রেষ্ঠ আসনে আসীন ভারত আজ কালিমালিপ্ত হচ্ছে আমাদেরই মধ্য থেকে কিছু নীচ হীন মনোভাবের কুমতলবী নরাধমদের জন্য!যাদের মধ্যে নেই সংবিধানের প্রতি শ্রদ্ধা বোধ!নেই কোনো মানবতাবোধ!আছে শুধু কিছু কুরুচি ও হিংসা বিদ্বেষ! আছে শুধু ভ্রাতৃঘাতী সিদ্ধান্ত জনিত কিছু খারাপ ও বিনাশমূলক মনোভাব!
আমাদের এ সব থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।আমরা আজ যেমন সারা বিশ্বকে তাক লাগিয়ে চাঁদে সফল অবতরণ করেছি, তেমনিভাবেই আমাদের মন মানসিকতা কে উন্নততর করতে হবে।আমাদের নানা জাতি ভাষা ধর্মের মধ্যকার নান্দনিকতাকে চিত্তমাঝে ধারণ করে ঐক্যবদ্ধ শক্তিধর ভারতীয় জাতি গঠনে বদ্ধপরিকর হতে হবে।
মহাত্মার এ শুভ জন্মক্ষণে আমরা গান্ধীজির মত ও পথকে আঁকড়ে ধরার শপথ নিই। গান্ধীজির লাঠিকে আরও শক্ত করে ধরার প্রয়োজনীয়তা আজ খুব বেশি। তাহলেই সর্বগ্রাসী অবক্ষয় থেকে ভারতীয় সমাজকে রক্ষা করা সম্ভব। জয় হিন্দ।।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct