বিশেষ প্রতিবেদক, নয়াদিল্লি: সোমবার মহাত্মা গান্ধীর জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজঘাটে ধর্নায় বসেন তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিক্ষোভে অংশ নিতে পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসা সাংসদ, বিধায়ক এবং মন্ত্রীসহ দলের শত শত পুরুষ ও মহিলাকে নিয়ে লোকসভার সাংসদ স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটি কালো প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে কেন্দ্রের কাছে ‘বাংলার জন্য তহবিল ছাড়ার’ দাবি জানান। আরেকটি প্ল্যাকার্ডে লেখা ছিল, ‘বাংলা বঞ্চিত: ১ লাখ ১৫ হাজার কোটি পরিবার, ১৫ হাজার কোটি টাকা পাওনা’।
মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট (এমজিএনআরইজিএ) এবং প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার আওতায় বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকারের ১৫,০০০ কোটি টাকার বকেয়া আটকে রাখার অভিযোগ তুলেছে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস। সেই অভিযোগ তুলেই সোমবার গান্ধি জয়ন্তীতে রাজঘাটে ধর্না কর্মসূচির ডাক দেন তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। দুপুর থেকে সেখানে ভিড় জমান পশ্চিমবঙ্গ থেকে আগত নেতা কর্মীরা। কিন্তু সেই ধর্না কর্মসুচির পুলিশি অনুমোদন ছিল না। তাই দিল্লি পুলিশ মানুষের অসুবিধার কথা জানিয়ে জড়ো লোকজনকে এলাকা খালি করার কথা বলে। তা নিয়ে তৃণমূলের কর্মী সমর্থকদের সঙ্গে দিল্লি পুলিশের বচসা বাধে। ধর্না কর্মসূচি বাধ্য হয়ে ইতি ঘটিয়ে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলন করেন। সেখানে তখন প্রায় এক হাজার সমর্থকের ভিড়।
সংবাদ সম্মেলনের মাঝপথে তৃণমূল নেতা–কর্মীদের বাধা দিল পুলিশ। মঙ্গলবার যন্তর–মন্তরে তৃণমূল নেতা–কর্মী–সমর্থকেরা অবস্থান বিক্ষোভ করতে পারবেন কি না, এখনো নিশ্চিত নয়। কারণ, দিল্লি পুলিশ বিকেল পর্যন্ত সেই সমাবেশের লিখিত অনুমতি দেয়নি। তৃণমূলের প্রবীণ নেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগ, দলের নেতাদের প্রতিনিধিদল রাজঘাটে পৌঁছানোর পর দিল্লি পুলিশ তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর হামলা চালায়। সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই মাত্র তারা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে আক্রমণ করার চেষ্টা করেছে। আমি সেখানে ছিলাম। এই সরকারের জন্য লজ্জা, আমরা বিস্মিত। পশ্চিমবঙ্গের প্রতি মোদী সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে দলের দু’দিনের বিক্ষোভের আগে সোমবার নয়াদিল্লিতে তৃণমূল কংগ্রেস নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সহ দলের শীর্ষ নেতারা বৈঠক করেন।
রাজঘাটে এই হামলার বিষয়ে সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, নরেন্দ্র মোদীর পুলিশ আমাদের ভয় পেয়েছে। অন্যথায় তারা কেন এ ধরনের কাজ করবে? তৃণমূলের তরফে অভিযোগ করা হযেছে, সোমবার রাজঘাটে সাংবাদিকসহ মহিলাদের যেভাবে লাঞ্ছিত করা হয়েছে, তা লজ্জাজনক। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একই ধরনের ছবি ও ভিডিও রয়েছে। শান্তি ও অহিংসার প্রতীক এই স্থানে অস্থিরতা ছড়ানোর ষড়যন্ত্র করা হয়েছিল। এখানে প্রতিবাদ তৃণমূলের দাবির উপর ভিত্তি করে নয়; এটা মানুষের অধিকারের প্রশ্ন। তৃণমূল আরও জানায়, দু’বছর ধরে জনগণের তহবিল আটকে রাখার পর কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং আজ সাংবাদিক সম্মেলন করে সিবিআই তদন্তের দাবি জানিয়েছেন। ঘটনাটি সাংবাদিকদের মাধ্যমে তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে পৌঁছেছে। এমনকি তথ্য প্রচারে বাধা দেওয়ার জন্য রাজঘাটে ইন্টারনেট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। আমাদের সাংসদ, বিধায়ক, মন্ত্রী এবং অন্যান্য নির্বাচিত প্রতিনিধিরা দুপুর ১ টায় রাজঘাট পৌঁছেছিলেন। ১০ মিনিট পর আমরা শান্তিপূর্ণ অবস্থান ধর্মঘট শুরু করি। কিন্তু সিআইএসএফ, সিআরপিএফ এবং দিল্লি পুলিশ কর্মীরা আমাদের মহিলা নেত্রীসহ সবাইকে ক্রমাগত আক্রমণ করতে থাকে। আমরা দুই ঘণ্টা ধরে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ করেছি কিন্তু একটিও রাজনৈতিক স্লোগান ব্যবহার করিনি। সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সোমবার দুপুরে রাজঘাটে শুরু হওয়া অবস্থানে সাংসদ সৌগত রায়, সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যের শিল্পমন্ত্রী শশী পাঁজাসহ রাজ্যস্তরের শীর্ষ নেতারা বঞ্চনার প্রতিবাদ ও বকেয়ার দাবি লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে অবস্থান শুরু করেন। তাঁদের হাতে লাগানো ছিল কালো কাপড়। অবস্থান শেষে রাজঘাটেই সংবাদ সম্মেলন শুরু করেন অভিষেক। কিন্তু তা মাঝপথে বন্ধ করে দিয়ে সেখান থেকে তাদের সরিয়ে দেয় দিল্লি পুলিশ।
তৃণমূলের অভিযোগ, ওই সময় তাদের ওপর বলপ্রয়োগ করা হয়। লাঠি হাতে পুলিশ সক্রিয় হয়ে উঠলে তৃণমূল নেতারা বন্দে মাতরম স্লোগান দিতে থাকেন।
তৃণমূল নেতাদের আরও অভিযোগ, বিধায়ক সুজিত বসুর জুতো, সংসদ সদস্য শতাব্দী রায় ও শান্তনু সেনের মোবাইল ফোন রাজঘাটে খোয়া গেছে। মহিলা নেত্রীদের গায়েও পুলিশ হাত দিয়েছে।
তৃণমূলের দাবি, বাংলার তহবিল মুক্তির দাবিতে হাতে প্ল্যাকার্ড নিয়ে আমরা সবাই শান্তিপূর্ণভাবে বসে ছিলাম। আগামীকাল, আমরা যন্তর মন্তরে বাংলায় একটি বিশাল আন্দোলন করার পরিকল্পনা করছি। তৃণমূল আরও বলে, বিজেপি আজ একটি সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেছে যে চারটি জেলায় এই প্রকল্পের বাস্তবায়নে অসঙ্গতি রয়েছে। যদি যুক্তির খাতিরে আমি স্বীকার করি যে চারটি জেলায় অসঙ্গতি রয়েছে, তাহলে বাকি ১৭টি জেলাকে বঞ্চিত করার পিছনে বিজেপির ব্যাখ্যা কী?
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct