নিজস্ব প্রতিবেদক, কলকাতা, আপনজন: রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজের শীর্ষ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান আল আমীন মিশনে ছাত্র ভর্তির জন্য মুখিয়ে থাকেন সংখ্যালঘু অভিভাবকরা। তাই প্রতি বছর আল আমীন মিশনের প্রবেশিকা পরীক্ষার সময় অভিভাবকদের মধ্যে এক বিপুল উদ্দীপনা দেখা যায় তাদের ছেলেমেয়েদের মিশনের প্রবেশিকা পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। আল-আমীন মিশনের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণির প্রবেশিকা পরীক্ষায় তা এবছরও ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণের ধারা ক্রমবর্ধমান। আল আমীন মিশনে পঞ্চম শ্রেণি থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ভর্তির প্রবেশিকা পরীক্ষা রবিবার রাজ্যের ৭২টি কেন্দ্রে একযোগে অনুষ্ঠিত হয়। আল আমীন মিশন সূত্র জানিয়েছে, ২০২৩ শিক্ষাবর্ষের মোট ২৪৫২৫ জন পড়ুয়ার তুলনায় এবছর ১৮৩৩ জন ছাত্র-ছাত্রী বেশী। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে ১৫৩১৩ জন ছাত্র ও ১১০৪৫ জন ছাত্রী অর্থাৎ মোট ২৬৩৫৮ জন পরীক্ষার্থী রাজ্যের ৭২টি পরীক্ষাকেন্দ্রে প্রবেশিকা পরীক্ষায় বসেছে। মুর্শিদাবাদের চারটি ও মালদহ জেলার দুটি পরীক্ষাকেন্দ্রে নজরকাড়া ভিড় ছিল বলে জানান মিশনের প্রবেশিকা পরীক্ষা বিভাগের প্রমুখ সেখ মোমিনুর রহমান। চার দশক ধরে সংখ্যালঘু সমাজের পড়ুয়াদের মেধার পতন রোধে আল-আমীন অনেকটা সফল হলেও এখনও অনেক পথ অতিক্রম বাকিই বলে মনে করে মিশন কর্তৃপক্ষ। কেবলই ক্লাসরুম ও হস্টেলের অপ্রতুলতার কারণে বহু মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীর মিশনে পড়াশোনা হয়ে ওঠে না। ১৯৮৭ সালের মাত্র ৭ জন আবাসিক পড়ুয়ার সংখ্যা বাড়তে বাড়তে বর্তমানে প্রায় ২০ হাজারে পৌঁছেছে। বাংলা মাধ্যমের পাশাপাশি ইংরেজি মাধ্যমের প্রবেশিকা পরীক্ষা গত এক দশক আগে থেকে শুরু হলেও পরীক্ষার্থীর সংখ্যা, পরীক্ষাকেন্দ্রের সংখ্যা এবং আয়োজনের বিশালতায় বাংলা মাধ্যমের এই পরীক্ষাই মিশনের সবচেয়ে বড় প্রবেশিকা পরীক্ষা। আল-আমীনের নিজস্ব ৩৬ টি শাখা ছাড়াও মিশনের সহযোগী শিক্ষালয়ের ৩-টি অর্থাৎ মোট ৩৯-টি আবাসিক প্রতিষ্ঠানে ভর্তির সুযোগ অন্য কোনও প্রবেশিকা পরীক্ষার ক্ষেত্রে নেই। এই পরীক্ষার মাধ্যমে কয়েক হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মিশনে ভর্তির সুযোগ থাকে। এছাড়াও মিশনের পরিচালনায় বছরের বিভিন্ন সময় ইংরেজি মাধ্যমের পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণি, বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমের একাদশ (বিজ্ঞান) শ্রেণি, নিট (ইউজি), ডব্লিউবিসিএস প্রভৃতির প্রবেশিকা পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়।এবছর প্রত্যেক পরীক্ষার্থীর হাতে আল-আমীনের তরফে ‘সাফল্যের আলোকবর্তিকা ২০২৩’ তুলে দেওয়া হল। ২০২৩ সালের ছয় শতাধিক নিট (ইউজি) পরীক্ষায় সফলদের মধ্যে মাত্র ৫০ জন ছাত্র-ছাত্রীর সংগ্রাম ও সাফল্যের সংক্ষিপ্ত কাহিনী রয়েছে এই পুস্তিকায়। হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মাধ্যমে এটি রাজ্যের সর্বস্তরে ছড়িয়ে পড়বে বলেই আশা করা যায়। আল আমীনের তরফে দাবি করা হয়, এই পুস্তিকা পাঠে পড়ুয়ারা উৎসাহিত ও উজ্জীবিত হওয়ার পাশাপাশি প্রতিকূল পরিস্থিতিতেও নিজেদের অদম্য লড়াই বজায় রাখতে সক্ষম হবে। এতো বড়ো পরীক্ষার সুচারু আয়োজন ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার জন্যে আল-আমীন মিশনের সাধারণ সম্পাদক এম নুরুল ইসলাম অ্যাডমিশন টেস্ট বিভাগের সংশ্লিষ্ট পুরো টিমকে মুবারকবাদ জানিয়েছেন। সেই সঙ্গে তিনি সমস্ত অভিভাবক অভিভাবিকাদের সহযোগিতার প্রতি কৃতজ্ঞতা এবং পরীক্ষার্থীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মিশন শুরু থেকেই মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের মেধার অকালে পতন রোধে সক্রিয়। আর্থিক প্রশ্নে সব সময়ই বহু দুঃস্থ ছাত্র-ছাত্রীদের পাশে আমরা থাকি কিন্তু মেরিট নিয়ে মিশনের নীতি বরাবরই অনমনীয়। কারণ আজকের তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতাময় শিক্ষাক্ষেত্রে মেরিটের সঠিক অনুশীলন বিনা সাফল্য অসম্ভব। পাশাপাশি তিনি উল্লেখ করেন যে, কেবলই এতিম ও ঈমাম সাহেবদের সন্তানদের জন্যে আমরা উভয় ক্ষেত্রেই কিছুটা হলেও সহানুভূতিশীল ব্যতিক্রমী হয়ে থাকি। সেই ধারাবাহিকতায় প্রবেশিকা পরীক্ষার ফর্মে আলাদা করে এতিম কিংবা ঈমামের সন্তান কিনা সেই তথ্য জানার চেষ্টা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই পঞ্চম থেকে দ্বাদশ শ্রেণি এবং নিটের কোচিং মিলিয়ে প্রায় ৭০০ জন এতিম ছাত্র-ছাত্রী এবং বেশ কিছু ঈমাম সাহেবের সন্তান মিশনে পাঠরত। এর সঙ্গে যোগ করে তিনি জানান, গত বছর থেকে এতিম ছেলে-মেয়েদের জন্য নতুন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে মিশন। দেখা গেছে, পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণিতে যে-সব এতিম পড়ুয়া আল-আমীনে পড়তে আসে, মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও নানা সামাজিক আর পারিবারিক কারণে অনেক ক্ষেত্রেই অন্যদের থেকে পিছিয়ে থাকে। এই ভাবনা থেকে এতিমদের বিশেষ পর্যবেক্ষণসহ পাঠদানের উদ্দেশ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতেই ভর্তির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে—যাতে করে পঞ্চম শ্রেণি থেকে মিশনের বিভিন্ন শাখায় গিয়ে তারা বাকি সকলের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় সমানভাবে দক্ষ হয়ে ওঠে। এই উদ্দেশ্যে মিশনের খলতপুর ক্যাম্পাস সংলগ্ন আরও এক নতুন ক্যাম্পাসে একটি ছয় তলা ভবন নির্মিত হয়েছে, যার নাম রাখা হয়েছে ‘শান্তিনীড়’। দু-শোর বেশি ছাত্র-ছাত্রী এই ভবনে থেকে পড়াশোনার পর অন্যান্য পড়ুয়াদের সঙ্গে আল-আমীন মডেল স্কুল খলতপুর-এ ভর্তি হবে। গত বছর ২২ জন ছাত্র-ছাত্রী শান্তিনীড়ে ভর্তি হয়েছে এবং পড়াশোনা করছে। বিশেষভাবে প্রশিক্ষিত শিক্ষক-শিক্ষিকাদের তত্ত্বাবধানে নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে সম্পূর্ণ আধুনিক পদ্ধতিতে আনন্দের সঙ্গে এরা লেখাপড়া করছে স্নেহ আন্তরিকতা আর মূল্যবোধের স্পর্শ নিয়ে। এতিম অর্থে পিতৃহীন। কিন্তু মাতৃহীন শিশুদের অসহায়তা ও আমাদের অনেককে ভাবায়। এছাড়া রয়েছে আরও বঞ্চিতরা, যারা পিতামাতাহীন—সামাজিক কারণে এরা সকলেই এতিমেরই গোত্রভুক্ত। গত সেপ্টেম্বর মাস থেকে শান্তিনীড়-এ ভর্তির জন্য অনলাইন ও অফলাইনে ফর্ম পূরণ শুরু হয়েছে। ফর্ম পূরণের শেষ তারিখ ৩১ অক্টোবর। প্রবেশিকা পরীক্ষা হবে ১৯ নভেম্বর ২০২৩। আজকের এই শুভক্ষণে তিনি আরও বলেন, নিউটাউনে নির্মাণাধীন আল-আমীন মিশন ইন্সটিটিউট ফর এডুকেশন রিসার্চ অ্যান্ড ট্রেনিং-এ আগামী বছর ২০২৪ সালেই নিট (পোস্ট গ্র্যাজুয়েট)-এর প্রবেশিকা পরীক্ষার আবাসিক কোচিং শুরু হচ্ছে ইনশা আল্লাহ্। সঙ্গে থাকছে নবপর্যায়ের ডব্লিউ.বি.সি.এস. কোচিংয়ের ব্যবস্থাও। উল্লেখ্য, মাধ্যমিক পর্যায়ের এই প্রবেশিকা পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশিত হবে নভেম্বর ২০২৩-এর প্রথম সপ্তাহে। মিশনের ওয়েবসাইট www.alameenmission.org থেকে ফলাফল জানা যাবে। এছাড়া কেবলই সফল পরীক্ষার্থীদের মোবাইল নম্বরে এসএমএস মারফতও ফলাফল জানানো হবে। ফলাফলেই উল্লিখিত হবে কাউন্সেলিঙের তারিখ এবং পরবর্তী করণীয় বিষয়াদি প্রভৃতি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct