আপনজন ডেস্ক: কাশ্মীর থেকে মণিপুর পর্যন্ত ভয়ের পরিবেশ নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা সৈয়দ আরশাদ মাদানি বলেছেন, দেশের মানুষ বর্তমানে ভয় ও আতঙ্কের পরিবেশে বাস করছে। যদি এই পরিবেশ দূর না করা হয় তবে এটি দেশের পক্ষে অত্যন্ত ক্ষতিকারক প্রমাণিত হবে। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের রাজস্থানের সাধারণ সভায় জারি করা এক বার্তায় তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, আমাদের প্রবীণরা এমন একটি ভারতের স্বপ্ন দেখেননি যেখানে দেশের মানুষ ঘৃণা, ভয় ও সন্ত্রাসের ছায়ায় থাকে। তিনি বলেন, ক্ষমতাসীনরা ভয়-ভীতির রাজনীতিকে তাদের মূলমন্ত্রে পরিণত করেছে, তবে আমি স্পষ্ট করে বলতে চাই, সরকার ভয়-ভীতি দিয়ে নয়, ন্যায় ও ন্যায্যতার মাধ্যমে পরিচালিত হয়। মাওলানা মাদানি ঘৃণা নির্মূলের আহ্বান জানিয়ে বলেন, আগুন দিয়ে আগুন নিভিয়ে ফেলা যায় না। আজকের পরিবেশে ভালোবাসাই একমাত্র কার্যকর অস্ত্র যার সাহায্যে আমরা ঘৃণাকে পরাজিত করতে পারি। দেশের প্রতি আমাদের ভালোবাসার বাস্তব প্রমাণ আমরা প্রতিটি অনুষ্ঠানে দিয়েছি। এটাই আমাদের দেশ, আমাদের প্রবীণদের মহান আত্মত্যাগের ফলে আমরা যে স্বাধীনতা অর্জন করেছি। এমন পরিস্থিতিতে আমাদের কর্তব্য এই মুষ্টিমেয় সাম্প্রদায়িক উপাদানের হাতে আমাদের প্রবীণদের মহান আত্মত্যাগ নষ্ট হতে না দেওয়া। তিনি বলেন, আমাদের শান্তি ও ভালবাসার সমর্থক হওয়া উচিত। তাই আমাদের বিয়ে ও অন্যান্য অনুষ্ঠানে অন্যান্য ধর্মের ভাই-বোনদের আমন্ত্রণ জানানো দরকার। পাশাপাশি তাদের সুখ-দুঃখকে আমাদের ধর্মীয় কর্তব্য হিসাবে অংশ নেওয়া উচিত, তারা ডাকুক বা না ডাকুক। পুরনো ইতিহাসকে পুনরুজ্জীবিত করতে এই ভূমিকা অত্যন্ত মূল্যবান প্রমাণিত হবে। তিনি আরও বলেন, যারা ঘৃণার আগুন দিয়ে দেশের শান্তি ও ঐক্য ধ্বংস করতে বদ্ধপরিকর। অতীতের কথা উল্লেখ করে মাওলানা আরশাদ মাদানী বলেন, আলওয়ারের একটি অঞ্চলটি মেওয়াতের সাথে যুক্ত। জুলাই মাসে নুহ এবং আশেপাশের অঞ্চলে কী ঘটেছিল তা আপনারা সকলেই ভাল করেই জানেন। আমাদের সমাজে এমন কিছু শক্তি রয়েছে যারা শান্তি ও ঐক্যের শত্রু। কারান, তরবারি ও অস্ত্র বহন করে উস্কানি দেওয়ার কী দরকার ছিল? এ থেকে স্পষ্ট যে, তাদের উদ্দেশ্য শোভা যাত্রা বের করা নয়, বরং এই অঞ্চলের শান্তি ও ঐক্যকে বিঘ্নিত করা। মাদানির মতে, যখন বিশ্বের প্রতিটি ধর্ম মানবতা, সহিষ্ণুতা, ভালবাসা ও সংহতির বার্তা দেয়, তাই যারা ঘৃণা ও সহিংসতা উস্কে দেওয়ার জন্য ধর্মকে ব্যবহার করে তারা তাদের ধর্মের প্রকৃত অনুসারী হতে পারে না। জমিয়তে উলামা-ই-হিন্দ প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই শান্তি, ঐক্য এবং সাম্প্রদায়িক সদিচ্ছার বার্তাবাহক বলে মাদানির দাবি। তিনি আরও বলেন, শান্তি ও ঐক্য ছাড়া কোন দেশ অগ্রগতি করতে পারে না। সাম্প্রদায়িকতা এবং ধর্মীয় উগ্রবাদ কেবল শান্তি ও ঐক্যের শত্রু নয়, উন্নয়নেরও শত্রু। দাঙ্গাবাজদের হয়তো ভালো ধারণা থাকতে পারে যে তারা একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে তাদের মানসিকভাবে দুর্বল করছে, কিন্তু এটি তাদের ভুল ধারণা। দাঙ্গা কোন সম্প্রদায় বা সম্প্রদায়ের ক্ষতি করে না, বরং দেশের উন্নয়ন ও অর্থনীতির ক্ষতি করে। উল্লেখ্য, মাওলানা মাদানী অসুস্থতার কারণে জমিয়তে উলামা রাজস্থানের প্রাদেশিক সভায় যোগ দিতে পারেননি, তবে তার প্রেরিত বার্তার মাধ্যমে তার উপস্থিতি রেকর্ড করেছিলেন। বার্তাটি পাঠ করেন মাওলানা রশীদ। জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের নাজিম জেনারেল মুফতি মুহাম্মদ মাসুম সাকিব, মাওলানা সৈয়দ ইজহার মাদানি বক্তব্য রাখেন। সভাপতিত্ব করেন জমিয়তে উলামা রাজস্থানের সভাপতি মাওলানা হাসান মাহমুদ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct