এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: কেন্দ্ৰীয় সরকারের এমজিএনআরইজিএ-র আওতায় একশো দিনের কাজে রাজ্যের পাওনা আটকে রাখার কেন্দ্রের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ও আবাস যোজনার টাকা আদায়ের দাবিতে দিল্লিতে ২ ও ৩ অক্টোবর প্রতিবাদ সমাবেশে যোগ দিতে যাওয়ার আগে রবিবার ফের কেন্দ্রীয় সরকারকে টার্গেট করে সরব হলেন সর্বভারতীয় তৃণমূল কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক তৃণমূল কংগ্রেসের সেকেন্ড ইন কমান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, ‘বাংলার প্রতি কেন্দ্রীয় সরকারের বিমাতৃসুলভ আচরণ মানুষ বার বার চাক্ষুষ করেছে । কিন্তু কেন্দ্রের বর্তমান সরকার বিগত সাড়ে ৯ বছর ধরে যারা ক্ষমতায় আছে তারা সমস্ত লিমিট অতিক্রম করে ফেলছে । মানুষের রাস্তার টাকা বন্ধ, জলের টাকা, কলের টাকা বন্ধ, স্বাস্থ্য ব্যবস্থার টাকা বন্ধ, সর্বশিক্ষা মিশনের টাকা বন্ধ, একশো দিনের কাজের টাকা বন্ধ, আবাসের টাকা বন্ধ । ২০ হাজার কোটি টাকা খরচা করে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন হবে, আর দেড় লাখ টাকা করে মানুষের টাকা বন্ধ থাকবে ? এটা কী বাড়ির টাকা? এ কোথাকার দ্বিচারিতা ? কোথাকার একনায়কতন্ত্র ? কোথাকার স্বৈরাচারীতা ? এটা বেশি দিন চলতে পারে না ।’এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কেন্দ্রীয় আবাস যোজনা প্রকল্পের সুযোগ না পাওয়া পরিবারের মাটির ঘরের দেওয়াল ধসে তিন শিশুর মৃত্যুর জন্য কাঠগড়ায় তোলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী গিরিরাজ সিংকে। শিশু মৃত্যুর জন্য তাকে দায়ী করে গ্রেফতারের দাবি জানান। উল্লেখ্য, শনিবার বাঁকুড়া জেলার বিষ্ণুপুর থানার বাকাদহ বোড়ামারা বোরামারা গ্রামে একটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে, যেখানে খেলার সময় মাটির বাড়ির দেয়াল ধসে তিন নিরীহ শিশুর মৃত্যু হয়। সেই মৃত্যুর জন্য অভিষেক প্রশ্ন তোলেন এই নিষ্পাপ শিশুদের মৃত্যুর জন্য দায়ী কে?এদিন অভিষেক জানান, বোড়ামারা গ্রামের চারজন লোক আজ এখানে আমার সাথে আছে। বোড়ামারা গ্রামের ঘটনাটি কোনও বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। ছাতনায় মাটির দেয়াল ধসে ৬৮ বছর বয়সী এক মহিলার মৃত্যু হয়েছে। এমনই এক ঘটনা ঘটেছে বীরভূমের লাভপুরে।প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, গিরিরাজ সিং এবং বাংলার বিজেপি নেতারা এই মৃত্যুর জন্য দায়ী।
তৃণমূল কংগ্রেস বিষ্ণুপুর বিধানসভা কেন্দ্র এবং সংসদীয় কেন্দ্র দুটিতেই হেরেছে। তাদের জিজ্ঞাসা করুন কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলি বাস্তবায়নে রাজ্য সরকার বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণ করেছে কিনা। অভিষেকের মতে, রাজনৈতিক লড়াই শুধু নির্বাচনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত। অভিষেক বলেন, আমরা যখন নিশ্চিত করেছিলাম যে বাংলার প্রতিটি বাসিন্দা আমাদের কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির সুবিধা পান, তখন বিজেপি বাংলায় হেরে যাওয়ায় উন্নয়নের জন্য তহবিল বন্ধ করে দিয়েছে। সেই সঙ্গে বাংলার বিজেপি নেতাদের কটাক্ষ করে বলেন, পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি নেতারা চিঠি লিখে কেন্দ্রের কাছে বাংলার তহবিল বন্ধ করার অনুরোধ জানিয়েছেন। আজ তাদের হাতে রক্ত। তদন্ত হওয়া উচিত এবং গিরিরাজ সিং সহ সবাইকে গ্রেপ্তার করা উচিত। অভিষেক জানান, মৃত শিশুদের বাবা-মাও এমজিএনআরইজিএ মজুরি থেকে বঞ্চিত। এই জব কার্ডধারীরা মাত্র এক জোড়া জামাকাপড় নিয়ে দিল্লি যেতে প্রস্তুত। তাদের অধিকার ও ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাওয়ায় আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। অভিষেকের অভিযো্গ,
প্রায় ১৫-২০ দিন আগে আমরা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিংয়ের সঙ্গে দেখা করার জন্য সময় চেয়েছিলাম, কিন্তু তিনি আমাদের বলেছিলেন যে তিনি বৈঠকের জন্য উপলব্ধ নন এবং তৃণমূল নেতাদের একটি প্রতিনিধিদলের সাথে দেখা করতে পারবেন না। তবে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজের সঙ্গে বৈঠকের জন্য চার বিজেপি সাংসদকে দিল্লিতে ডাকা হয়েছে। এটি প্রমাণ করে যে তিনি দিল্লিতে রয়েছেন এবং তৃণমূল নেতা বা জনগণের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সাথে দেখা করতে চান না। তার বদলে তিনি বিজেপি নেতাদের সঙ্গে দেখা করছেন। এর মধ্য দিয়ে বাংলার প্রতি তাদের সৎমায়ের মনোভাব আবারও উন্মোচিত হল। অভিষেক বলেন, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী গিরিরাজ সিং যখন বলছেন যে বিজেপি শাসিত কেন্দ্রীয় সরকার কিছু অভিযোগের ভিত্তিতে কল্যাণমূলক প্রকল্পগুলির তহবিল বন্ধ করে দিয়েছে, তখন বিজেপি নেতা সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, তিনি একবার ফোন করলেই এই তহবিলগুলি দেওয়া হবে। প্রশ্ন উঠেছে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কার দ্বারা প্রভাবিত হচ্ছেন? উচ্চ আদালতে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে কিন্তু আমরা এ বিষয়ে বিচার বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাই। আমি রাজ্য সরকারকে একটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত করার আহ্বান জানাচ্ছি। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘যারা ক্ষমতায় আজ রয়েছে তারা ভাবছে আমরা ক্ষমতায় অনন্তকাল ধরে থাকব । তাদের কিন্তু ক্ষমতায় এনেছে মানুষ । মানুষকে যদি এরা পণ্য ভাবে, যে ভোট নিয়ে মানুষকে প্রত্যাখ্যান করে মানুষের আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলে মানুষকে বিভ্রান্ত করব, মানুষকে নিপীড়িত, লাঞ্ছিত, অত্যাচারিত, বঞ্চিত, শোষিত করে রাখব, অপমানিত, অবহেলিত করে রাখব, তাহলে মানুষ কিন্তু জবাব দেবে। ২০,০০০ কোটি টাকা খরচ করে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ি তৈরি করা হয়েছিল, কিন্তু মানুষ ১.৫ লক্ষ টাকা থেকে বঞ্চিত হয়েছিল, যা আবাস যোজনার জন্য ব্যবহার করার কথা ছিল। এটা একনায়কতন্ত্র। বঞ্চনার এই রাজনীতি চলতে পারে না। তাই এই লড়াই ২ এবং ৩ অক্টোবরের বিক্ষোভের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, তবে তহবিল প্রকাশ না হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct