প্রেরণা
সুচিত চক্রবর্তী
গ্রামের নাম মদনপুর। সেই গ্রামের মেয়ে প্রেরণা। প্রেরণার বয়স উনিশ বছর। গরম রক্ত টগবগ করে ফুটছে। বেশ স্কাউট বডি। শরীরও ফিট। ফিট হবেই না কেন? রোজ মর্নিং ওয়াক এবং ফিজিকল এক্সারসাইজ করে। প্রেরণা আবার ক্যারাডেতে বেঙ্গল চ্যাম্পিয়্যান। প্রেরণা গ্রামের প্রেরণাও বটে ।ওর কাজের সাথে ওর নামের বেশ মিল আছে। গ্রামের মানুষ বিপদে পড়লেই প্রেরণা এগিয়ে এসে হাত বাড়িয়ে দেয়। এলাকায় কিছু লম্পট ছেলে ছিল। ওরা একসময় গ্রামে অন্যায়ভাবে দাপিয়ে বেড়াত। ওদের কথায় গ্রামের মানুষরা চলত ।আজ গ্রামের পরিবেশ আবহাওয়া পালটে গেছে। প্রেরণা আজ গ্রামকে নতুনভাবে জন্ম দিয়েছে। একসময় লম্পটদের সরদার ছিল রাকেশ। এলাকায় রাকেশ বেশ প্রভাবশালী ছিল ।রাকেশের কথায় রাকেশের দল এলাকায় লাম্পট্য করে বেড়াত। হঠাৎ রাকেশের বাবা অসুস্থ হলেন। হাসপাতালে তাকে ভর্তি করা হল। ডক্টর সেন রাকেশের বাবাকে দেখে বললেন, ইমিডিয়েট ওনাকে একটা অপারেশন করতে হবে ।অপারেশন খরচ আনুমানিক দু- লক্ষ্ টাকা। এক ঘণ্টার মধ্যে পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা দিতে হবে। ইমিডিয়েট অপারেশন না করলে রোগীকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে যাবে।
রাকেশ ছুটে গেল ব্যাংকে ।ব্যাংক থেকে টাকা তুলে রাকেশ হাসপাতালে যাচ্ছিল।হঠাৎ পথে চারজন দুষ্কৃতী রাকেশের সামনে এসে দাঁড়াল।রাকেশ যখন ব্যাংক থেকে টাকা তুলছিল ওই সময় দুষ্কৃতীরা রাকেশকে ফলো করেছিল। ওরা যখন রাকেশকে আক্রমণ করে টাকা ছিনিয়ে নিতে চায় ঠিক সেই সময় দেবী দুর্গা হয়ে প্রেরণা ওদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। ক্যারাডের মাধ্যমে প্রেরণা দুষ্কৃতীদের মেরে সরিয়ে দিয়ে রাকেশকে উদ্ধার করল। তারপর প্রেরণা নিজেই রাকেশকে হাসপাতালে পৌঁছে দিল।
প্রেরণা এখন এলাকায় দেবী দুর্গা। ও এখন এলাকার গর্ব। প্রেরণা লেখাপড়ায় বেশ ভালো। ও এখন ডাক্তারি পড়ছে। ডাক্তারিতে চান্স পাওয়ার পর ওর ডাক্তারি পড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল। ভয়ংকর একটা ঝড় ওর জীবনকে ওলট-পালট করে দিতে চাইছিল। কিন্তু তা আর হলো না। পুরো গ্রাম প্রেরণার পাশে ছুটে এল। রাকেশ বলল, বিন্দু বিন্দু জল দিয়ে সমুদ্র হয়। প্রেরণা তুমি ডাক্তারি পড়, ছেড়ে দিও না। তোমার মত ভালো মেয়ে যদি অর্থের অভাবে ডাক্তারি পড়া বন্ধ করে দেয় তবে তা হবে গ্রামের পক্ষে অপমান। গ্রামের ছেলে তপন বলল, এই গ্রামে ভালো ডাক্তার নেই। কবিরাজ দিয়ে কোন মতে চলছে। কারোর সিরিয়াস রোগ হলে রোগীকে নিয়ে শহরে যেতে হয়। গ্রামে ডাক্তার থাকলে আমাদের আর শহরে যাবার কথা ভাবতে হবে না। আজ গ্রামের মেয়ে প্রেরণা ডাক্তার হলে ও এখানেই ডাক্তারি করবে।
প্রেরণা সেদিন গ্রামের মানুষের অর্থ সাহায্য নিয়েই শহরে গিয়েছিল ডাক্তারি পড়তে। ডাক্তারি পাশ করে প্রেরণা এখন গ্রামে ফিরে এসেছে। গ্রামে সে একটা ছোটো হাসপাতাল তৈরি করেছে। গ্রামের মানুষ এখন ভালই আছে প্রেরণার ভালোবাসাও প্রেরণায়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct