আপনজন ডেস্ক: কলকাতা লিগে এবছর প্রথমে ইস্টবেঙ্গলকে হারানোর পর শতাব্দী প্রাচীন মহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব বুঝিয়ে দিয়েছিল তারা টানা তিনবার কলকাতা লিগ জয়ের পথে। অবশেষে তা সত্যি হল। শুক্রবার কিশোর ভারতী ক্রীড়াঙ্গনে দাপট দেখিয়ে মোহনবাগানকে ২-০ গোলে হারিয়ে কলকাতা লিগ টানা তিনবার জয় করল। এই জয়ের ফলে তিরিশের দশকের মহমেডানের কথা মনে করিয়ে দিল। ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৮ টানা পাঁচ বার কলকাতা লিগ জিতেছিল মহমেডান। প্রথম জয়ের হ্যাটট্রিক করে ১৯৩৬ সালে। প্রায় ৯ দশক পর পর ফের টানা তৃতীয় বার কলকাতা লিগ জয় করল মহমেডান স্পোর্টিং ক্লাব। মোহনবাগানকে হারানোর ফলে ১৭ ম্যাচে ৪৪ পয়েন্ট নিয়ে কলকা লিগ চ্যাম্পিয়নের শিরোপা পেল মহমেডান। তবে, এই টানা তিনবার কলকাতা লিগ জয়ের কৃতিত্বের মূলে রাশিয়ান কোচ আন্দ্রে চের্নিশভ। তার কোচিংয়ে মহমেডানের এই সাফল্যে এখন খুশির জোয়ার সাদা কালো শিবিরে।এদিন মহামেডানের হয়ে জয়সূচক দুটি গোল করেন যথাক্রমে লালরেমসাঙ্গা ও ডেভিড। এদনের গোল নিয়ে কলকাতা লিগে ডেভিড মোট গোল করলেন ২১টি।কলকাতা লিগের শুরু থেকে মহামেডান যে দাপট দেখাতে শুরু করে তার ব্যতিক্রম হয়নি এদিন। খেলা শুরুর ৬ মিনিটের মাথায় ডেভিড প্রথম গোল করার পরিস্থিতি তৈরি করেন। মোহনবাগানের রক্ষণভাগ ঠেলে তরতর করে যখন এগিয়ে চলেন ডেভিড তখন তা প্রতিহত করেন মোহনবাগানের ডিভেন্ডাররা। খেলার ১২ মিনিটের মাথায় মহমেডানের স্যামুয়েলের শট প্রায় গোলের মুখ থেকে বাঁচান মোহনবাগানের একজন ডিফেন্ডার। কর্নার পায় মহামেডান। আর সেটাকেই কাজে লাগায় মহামেডান। কর্নার থেকে ভাসানো বল মাথা ছোঁয়ান লালরেমসাঙ্গা। সেই বল বারপোস্টে লেগে গোলের জালে জড়িয়ে যায়। মাত্র ১৩ মিনিটেই প্রথম গোল করে জয়ের স্বাদ পায় মহামেডান। এরপর মহমেডান গোলের সহজ সুযোগও হারায়। তন্ময় ঘোষের কাছ থেকে দুর্দান্ত পাস পেয়ে বিকাশের দুরন্ত গতির শট বার পোস্টে লেগে ফিরে আসে। ফিরতি বলে চেষ্টা করলেও অসফল হন লালরেমসাঙ্গা। কেলার ২৮ মিনিটের মাথায় আবারও সুযোগ পায় মহামেডান। সামাদ আলি মল্লিক ও লালরেমসাঙ্গা তালমিলে বল নিয়ে এগনোর পর তাদের বাড়ানো পাস আঙ্গুসানা মাথা ছোঁয়াতে ব্যর্থ হওয়ায় আরও একটি গোলের সুযোগ নষ্ট হয়। তবে খুব বেশিক্ষণ মহমেডানকে আটকানো যায়নি। খেলার ৩৮ মিনিটের মাথায় মাঝমাঠ থেকে লম্বা পাস থেকে বল পেয়ে ডেভিড মোহনবাগানের দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে গোলরক্ষক দেবনাথ মন্ডলকে ডজ দিয়ে বল জালে জড়ান। ফলে কলকাতা লিগে ডেভিড তার গোল সংখ্যা বাড়িয়ে করে ২১টি। ডেভিড বুঝিয়ে দেন তিনি অপ্রতিরোধ্য। এর পরপরই আঙ্গুসানার বাড়ানো বল দ্রুত গতি নিয়ে গিয়ে ডেভিড যে শট মারেন তা গোলরক্ষককে ভেদ করতে পারেনি। তবে, প্রথামার্ধে ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে মহামেডান অনেটাই নিশ্চিত হতে থাকে কলকাতা লিগ জয়ের ব্যাপারে।
দ্বিতীয়ার্ধে খেলা শুরুর খানিক্ষণ পরই আবার সেই ডেভিড তার কেরামতি দেখাতে থাকেন। ডেভিডের মারা ভলি দুর্দান্তভাবে বাাঁচান মোহনবাগানের গোল কিপার। তার কয়েখ মিনিট পরেও আরও একটি শট দক্ষতার সঙ্গে রুখে দেন মোহনাবাগানের গোলকিপার দেবনাথ মণ্ডল। মূলত দেবনাথের জন্যই মহামেডান গোল সংখ্যা আর বাড়াতে পারেনি।একের পর এক আক্রমণের জেরে মোহনবাগান দিশেহারা হয়ে পড়ে। তবে, তারা একটি গোলের সুযোগ পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি। শিবাজিতের বাড়ানো বল পেয়েছিলেন মোহনবাগানের ফারদিন আলি মোল্লা। কিন্তু ফারদিন শট মহামেডানের গোল অভিমুখে নিলেও তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। মহামেডান অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়ার পর ফের তেড়েফুঁড়ে ওঠেন ডেভিড। তাকে আটকাতে গিয়ে মোহনাবাগানের ডিফেন্ডার ফাউল করে বসলে মহামেডান ফ্রি কিক পায়। শেখ ফৈয়অজের নেওয়অ ফ্রি কিক দারুণবাবে বাঁচিয়ে দেন মোহনবাগান গোলরক্ষক। সে যাত্রায় বেঁেচ যায় সবুজ মেরুন শিবির। খেলা যত শেষের দিকে যায় ততই মহামেডান তাদের আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়াতে থাকে। যদিও গোল সংখ্যা আর বাড়াতে পারেনি। এমনকি ইনজুরি সশয় ৫ মিনিট পেলেও তা কাজে লাগাতে পারেনি মহামেডান। যদিও ততক্ষণে লিগ জয় নিশ্চিত হয়ে যায়। তিন তিনবার কলকাতা লিগ জিতে মহামেডান তিরিশের দশকের মহামেডানের স্মৃতি উস্কে দেয়। তবে মহামেডান কোচ চের্নিশভ এখানেই থামতে চান না। তার লক্ষ্য আই লিগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে আইএসএল-এর খেলার সুযোগ। সময় বলবে মহমেডান সেই যাত্রায় কতটা সফল হবে।অন্যদিকে, ৮৭ বছর পর কলকাতা ফুটবল লিগে জয়ের হ্যাটট্রিক করায় মহমেডান স্পোর্টিংয়ের সমস্ত খেলোয়াড়, কোচ এবং কর্মকর্তাদের অভিনন্দন রাজ্যেল ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস। তিনি বলেন, সামনে আই লিগ। আশা করব মহমেডান স্পোর্টিং সেখানেও এই ধারাবাহিক কথা বজায় রাখবে। তবে এই জয়ের জন্য বিশেষভাবে অভিনন্দন জানাবো দলের অন্যতম সেরা ফুটবলার ডেভিডকে। ওর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct