আপনজন ডেস্ক: বুধবার কলকাতা হাইকোর্টে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের আদালতকক্ষে নিম্ন আদালতের আরেক বিচারপতিকে অপসারণের নির্দেশ দেওয়ার পর তুমুল নাটকীয়তা শুরু হয়।
এই প্রক্রিয়ায় বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় শুধু কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকেই তার আদালত কক্ষে তলব করেননি, রাজ্যের আইনমন্ত্রী মলয় ঘটককে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে হাজিরা দেওয়ার সময়সীমাও বেঁধে দেন। মন্ত্রী মলয় ঘটক বাধ্য হয়ে বিকেল ৫টায় নির্ধারিত সময়সীমার আগেই গঙ্গোপাধ্যায়ের আদালত কক্ষে পৌঁছান এবং ১০ মিনিটের মধ্যে চলে যান। সন্তুষ্ট বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, যিনি ইঙ্গিত দিয়েছিলেন যে তিনি মন্ত্রীকে তাঁর আদালত কক্ষে দেখে খুশি হয়েছেন, পরে তাঁর আগের রায় পরিবর্তন করেন এবং নিম্ন আদালতের বিচারককে অপসারণের সময়সীমা আরও ৪৮ ঘন্টা বাড়িয়ে দেন।
সিবিআই-এর তদন্তাধীন স্কুল নিয়োগ কেলেঙ্কারি মামলার নির্ধারিত শুনানির সময় এই সমস্ত ঘটনা শুরু হয়েছিল। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এর আগে তদন্তে গড়িমসির জন্য এবং নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রত্যাশিত ফলাফল আনতে ব্যর্থ হওয়ার জন্য সিবিআইকে তিরস্কার করেছিলেন। তবে বিচারপতি বুধবার জানতে চেয়েছিলেন যে সংস্থাটি তদন্তে কোনও বাধার সম্মুখীন হচ্ছে কিনা। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে জানানো হয়েছিল, বিশেষ সিবিআই আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক অর্পণ চট্টোপাধ্যায়ের আদেশের কারণে সংস্থাটি অসুবিধার সম্মুখীন হচ্ছে।
সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়, প্রাথমিকে নিয়োগ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত কুন্তল ঘোষের অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হওয়া এই মামলায় কলকাতা পুলিশকে যুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে নগর পুলিশ এজেন্সির কর্মকর্তাদের ঘন ঘন তলব করে এবং কার্যকরভাবে তদন্তের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করে। এছাড়াও, এজেন্সি অভিযোগ করেছে যে চার জন সরকারি স্কুলের শিক্ষক এবং কেলেঙ্কারির সুবিধাভোগী, যারা ঘুষ দিয়েছিলেন তাদের মামলার সাক্ষী হিসাবে বিবেচনা করার পরিবর্তে বিচারক তাদের অভিযুক্ত হিসাবে অভিহিত করেছেন। এমনকি তাদের কারাবন্দি করেছেন। সিবিআই বলেছে, এটি এই জাতীয় অন্যান্য সুবিধাভোগীদের এগিয়ে আসার এবং সংস্থার তদন্তে সহযোগিতা করার সম্ভাবনাকে ব্যর্থ করেছে।
বিচারকের বদলির আদেশ ইতিমধ্যে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, তবে ফাইলটি বর্তমানে মন্ত্রীর চেম্বারে আটকে রয়েছে, যিনি এখনও বাধ্যতামূলক বদলির কাগজপত্রে স্বাক্ষর করেননি এ খবর জানতে পারে বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় আদালতের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে তলব করেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় প্রাথমিকভাবে নির্দেশ দেন, ৪ অক্টোবরের মধ্যে বদলির আনুষ্ঠানিকতা শেষ করতে হবে। সেই সঙ্গে মন্ত্রী মলয় ঘটককে তাঁর সামনে হাজির হতে এবং বিলম্বের ব্যাখ্যা দেওয়ার জন্য সমনও জারি করেছিলেন। যদিও এদিন আদালতে গিয়ে মন্ত্রী মলয় ঘটন গঙ্গোপাধ্যায়কে জানান, তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং ২৫ আগস্ট থেকে হাসপাতালে ছিলেন এবং হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর চিকিৎসকরা তাঁকে বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন।
এ কথা শুনে বিচারপতি বলেন, আপনাকে আদালতে দেখে আমি খুশি। সেই সঙ্গে আরও বলেন, দয়া করে আপনাকে এখানে ডাকার জন্য আমার সম্বন্ধে ভুল বুঝবেন না। মন্ত্রী মলয় ঘটক বিচারকের বদলিতে ফাইলে সইয়ের জন্য অতিরিক্ত ৪৮ ঘন্টা সময় চেয়েছিলেন। মন্ত্রীর অনুরোধ মেনে নিয়ে গঙ্গোপাধ্যায় তার আগের আদেশ সংশোধন করেন ও বিচারকের বদলির সময়সীমা ৬ অক্টোবর নির্ধারণ করেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct