কাজী নিজামউদ্দীন
প্রধান শিক্ষক, বিজড়া হাই স্কুল, দুর্গাপুর
রতে শিক্ষকদিবস হতে পারে 5 ই সেপ্টেম্বর পৃথিবীতে 8 ই অক্টোবর কিন্তু বাংলা ভাষায় শিক্ষাদান এর উদ্যোগ যে মহামানব প্রথম গ্রহন করেছিলেন তিনি স্বয়ং ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। শিক্ষার অনেকগুলো বিষয়ে তিনি ই পথিকৃৎ। এই রেনেসাঁ ম্যান এর হাত ধরে বহুবিবাহ বাল্যবিবাহ কৌলিন্যপ্রথা রদ হল। স্ত্রীশিক্ষা নর্ম্যাল স্কুল চালু হল। এসব কথা সর্বজনবিদিত। তাই বাঙালির শিক্ষক এর জন্মদিন আজ26 শে সেপ্টেম্বর। আমার আলোচনা আজ কিভাবে তিনি দক্ষিণ বঙ্গের সহকারী বিদ্যালয় পরিদর্শক হয়ে 1855 সালের 20 এপ্রিলের ডি পি আই সাহেব (ম্যাকুলে) এর মিনিটের সূত্র ধরে এবং লং সাহেবের লেখা চিঠিতে হ্যালিডে সাহেবকে অনুরোধ অনুযায়ী(27 ফেব্রুয়ারি 1855) পয়লা মে তে দায়িত্ব পেলেন। তিনি ইনসপেক্টর নিয়োগ করে পাঁচ জেলায় নদীয়া হুগলী বর্ধমান মেদিনীপুর ও মুর্শিদাবাদে এলাকা ঠিক করতে বললেন। এরপর ধীরে ধীরে তিনি প্রতি জেলায় পাঁচটা করে স্কুল খুলে বসলেন।অনেক বাঙালি মালিকের ইংরেজি স্কুল এর বিরোধীতা করেছিল। কাঁচড়াপাড়ায় কৃষ্ণনগরে তিনি হেনস্থার শিকার হয়েছিলেন। একমাত্র বর্ধমানে কাজ করে তিনি ভীষণ আনন্দ পেয়েছিলেন। বর্ধমানের মানুষ তাঁকে সাদরে গ্রহন করেছিল। তিনি বর্ধমান শহরে পার্কাসরোডে বাড়ি ভাড়া নিয়ে প্রায় তিনবছর ছিলেন।এখানে তিনি মুসলিম কন্যাদের ও বালিকাবিদ্যালয়ে যাবার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল বয়েজ স্কুল ও বর্ধমান মিউনিসিপ্যাল গার্লস স্কুল দুটি সম্ভবত সেই নর্ম্যাল স্কুলের পরিবর্তিত রূপ। এবিষয়ে স্কুলের নথি বা জমির নথি থেকে তারিখ থেকে প্রমান বা আন্দাজ পাওয়া যাবে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যেটি আজ পর্যন্ত আলোচনা হয় নি সেটি হল তাঁর বাংলা ভাষায় শিক্ষাদানের পরিপূর্ণ রূপদানের চেষ্টা। তিনি স্কুল প্রশাসন অর্থ সংস্থান এর সঙ্গে সঙ্গে পাঠ্যপুস্তক রচনা করেন নিজ হাতে। তিনি লিখেছেন ডিরেক্টর অব পাবলিক এডুকেশন কে যে স্কুলে পাঠ্য বই এর দাম যাতে অত্যন্ত কম হয় তার জন্য ও তিনি ভেবেছেন।তিনি নিজে বর্ণপরিচয় প্রথম ও দ্বিতীয় ভাগ লিখেছেন। এছাড়া তিনি আরও গ্রন্থ কম্পাইল করেছেন।
সেই বইগুলি হল : ভূগোলের রূপরেখা,ভারতের ভূগোল,জীবনী,পাটিগণিত,সাধারণ দর্শন,শারীরবিদ্যা,জ্যোতির্বিদ্যা,গ্রীসের ইতিহাস,রোমের ইতিহাস,ইংলণ্ডের ইতিহাস,ভারতের ইতিহাস,এছাড়া রাশেলস,টেলিমেকাস ঈশপের গল্প। এরপরে তিনি সংযুক্ত করেন,ঋজুপাঠ,কথামালা,নীতিসার,বোধদয়,পশুদের কথা,বাংলার ইতিহাস,চারুপাঠ (নান্দনিক শিক্ষা)। বিদ্যাসাগরমশায় এইসব বিষয়গুলি তাঁর লেখা চিঠিতে জানিয়েছিলেন উইলিয়াম গর্ডন ইয়ং সাহেব কে 8 ই অক্টোবর 1855 সালে। যেটি তিনি ফোর্ট উইলিয়াম থেকে লিখেছিলেন। সংস্কৃত ভাষার পন্ডিত এই মহামানব ইংরেজি ভাষায় লিখেছেন এই চিঠিখানি। তাঁর উদ্যোগে মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের সেই শুরু দিনগুলো 1855 1856 1857 এই তিনটি সাল। তারপর তিনি মেডিক্যাল কলেজের কাজে হাত দিয়েছিলেন। এখন মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধসম। এই প্রবচন নিয়ে আমরা আলোচনা করি। পক্ষে ও বিপক্ষে মত থাকবে। তবে বাংলা ভাষার এই পথচলা যে মানুষটির হাত ধরে তাঁর কথা প্রায় অনুচ্চারিত থেকে যায়। আর ধর্মীয় সংকীর্ণতার উর্ধে সেসময় তিনি যেভাবে শাস্ত্রশিক্ষাকে অপ্রাসঙ্গিক করে বিজ্ঞান চর্চা নীতি শিক্ষা ইতিহাস শিক্ষা ভূগোল ও দর্শনের শিক্ষার ওপরে জোর দিয়েছেন তা বিরল দৃষ্টান্ত। ঈশ্বরচন্দ্র প্রকৃত অর্থে একজন আধুনিক শিক্ষাবিদ। শিক্ষাবিজ্ঞানী। তাঁর কাছে বাঙালি চিরঋণী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct