আলম সেখ, কলকাতা, আপনজন: রবিবার কলকাতার উর্দু অ্যাকাডেমীতে মুর্শিদাবাদ জেলার চাতক ফাউন্ডেশনের পত্রিকা প্রকাশিত হল এক মনোজ্ঞ সেমিনারের মাধ্যমে। বাঙালি মুসলমান : আর্থিক বিড়ম্বনার ঐতিহাসিক প্রেক্ষিত, উত্তরণের পথ সন্ধান নিয়ে বিস্তারিত বক্তব্য রাখেন বিশিষ্ট ইতিহাসবেত্তা ও প্রাবন্ধিক খাজিম আহমেদ। তিনি বলেন, সংখ্যালঘু অধ্যুষিত জেলা গুলিতে শিল্পের ব্যাপক সম্ভাবনা আছে। তবু যে কোনও কারণেই হোক তা উপেক্ষিত। বিষয়টি নিয়ে বাবার আছে। তিনি বলেন, মুসলিমদের মধ্যে মেধা ও দক্ষতার অভাব নেই। সংখ্যালঘু এলাকাগুলিতে নজর দিলে দেখা যায় তারা পোশাক শিল্প থেকে শুরু করে, পোল্ট্রি শিল্প, কিংবা হাতের কাজের নানা শিল্পে দক্ষতা দেখিযে চলেছেন। কিন্তু তাকে কাজে লাগানোর অভাব আছে। বিদেশে এমন মেধা ও দক্ষতা থাকলে সেখানে প্রভূত কাজে লাগানো হত বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি অভিযোগ করেন, তাঁত শিল্পে মালদা ও মুর্শিদাবাদের শুধু নয় বহু সংখ্যালঘু এলাকা রাজ্যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে চলেছ। কিন্তু সরকারি কোনও প্রকল্প সেখানে স্থান পায় না, বরং তাদের মনোনীত অসংখ্যালঘু স্থানে ঠাঁই পায়। ফলে, মুসলিমদের সেই মেধা ও দক্ষতার বিকাশ ঘটনো সম্ভব হচ্ছে না। এদিনে সরকারের নজর দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। অনুষ্ঠানের শুরুতেই বাঙালি মুসলমান: আর্থ সামাজিক অবস্থান নিয়ে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা দেন সমাজকর্মী তায়েদুল ইসলাম। তিনি বলেন, শুধু এবার বাংলা বা ওপার বাংলার মুসলমান নয়, আর্থ সামাজিক প্রেক্ষাপটে সারা বিশ্বের মুসলমানদের অবস্থা একই রকম, এর জন্য দায়ী আমরা মুসলমানরাই। ইসলাম ছিল সমগ্র মানব জাতির জন্য সম্পূর্ন একটা জীবন বিধান, সব সময়ের জন্য আধুনিক, বৈপ্লবিক, গতিশীল একটা জীবন ব্যবস্থা। আমরা যখনই এই পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থাকে শুধুমাত্র ধর্মীয় সম্প্রদায়ে পরিণত করেছি তখন থেকেই মুসলমানদের অধঃপতন শুরু হয়েছে। অর্থাৎ শুধুমাত্র মুসলমানদের অবস্থার পরিবর্তন করলেই সমাজের অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে না, এটা ইসলামের আদর্শেই বাইরে।
এবং ইসলামের আদর্শ মতে যখন কোনো সমাজের অবস্থার পরিবর্তন করতে যাওয়া হবে তখন সেই সমাজের শিক্ষা ব্যবস্থা, সংস্কৃতি, অর্থনীতি এবং রাজনীতি - এই চারটি স্তম্ভ সঠিক জায়গায় আছে কি তা লক্ষ করতে হবে। এর মধ্যে কোনো একটি স্তম্ভ অচল হয়ে থাকলে সেই সমাজের অবস্থার পরিবর্তন হতে পারে না।আর্থ-সামাজিক উত্তরনে সাংগঠনিক দক্ষতা ও সচেতনতা নিয়ে বক্তৃতা রাখেন প্রাক্তন প্রিন্সিপাল শিক্ষাবিদ ড: সামসুল আলম। তিনি বিকৃত ইতিহাস নিয়ে বলেন, আওরঙ্গজেব, আর্থিক সঙ্কটে পড়া ভারতবর্ষৈ অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটিয়েছিলেন । যার দ্বারাই ১৭০৩ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বের সর্ব শক্তিশালী দেশ হয়েছিল ভারত। এছাড়াও ইসলামাদর্শের নিরিখে আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন নিয়ে বক্তৃতা দেন জাতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত শিক্ষাবিদ মোহাম্মদ সেলিম। বক্তব্য রাখেন লালবাজার ডিসিপি - মাকসুদ রহমান সরদার। অনুষ্ঠানে সংবর্ধনা দেওয়া হয় বিশিষ্ট চিকিৎসক শাহ আলম নাজমুল আবিদ ও কবি শেখ রবিয়েল হককে। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদে মধ্যে উপস্থিত ছিলেন লেখক আলিয়া বিশ্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাইফুল্লা, রেশমা খাতুন, যাকাত ফাউন্ডেশনের সম্পাদক এইচ এম আব্দুল্লাহ, দৈনিক আপনজন সম্পাদক জাইদুল হক, প্রাবন্ধিক বন্দ্যোপাধ্যায়, গল্পকার সেখ আব্দুল মান্নান, ইকবাল দরগাই প্রমুখ। সভা সঞ্চালনা করেন চাতক সম্পাদক সেখ মফেজুল হক।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct