আপনজন ডেস্ক: স্বপ্ন ছিল মিশরের বিখ্যাত আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার। আর এ স্বপ্ন পূরণে চার হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়েছেন পশ্চিম আফ্রিকার দেশ গিনির এক যুবক।বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম বিবিসি।প্রতিবেদনে বলা হয়, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের অন্যতম একটি প্রাচীন ও মর্যাদাপূর্ণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিশ্ববিদ্যালয়টির আল–শরিফ ইনস্টিটিউটে পূর্ণকালীন বৃত্তি নিয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন ২৫ বছর বয়সী মামাদু সাফায়ৌ ব্যারি।স্বপ্ন পূরণে বিভিন্ন দেশের প্রতিকূল আবহাওয়া ও রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই চার মাস সাইকেল চালিয়েছেন মামাদু। তার দুঃসাহসী এই সফরের সময় তিনবার আটকও হয়েছিলেন তিনি। তবে তার সেই কষ্ট মোটেই বৃথা যায়নি। সংবাদমাধ্যম বলছে, ব্যক্তি জীবনে এক সন্তানের বাবা মামাদু মিশরের রাজধানী কায়রোর আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে ইসলামিক স্টাডিজ কোর্সে ভর্তির লক্ষ্যে চলতি বছরের মে মাসে গিনিতে নিজের বাড়ি থেকে বের হন। টাইমস হায়ার এডুকেশন অনুসারে, আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় ৯৭০ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ইসলামী শিক্ষার জন্য মর্যাদাকর কেন্দ্র বলে পরিচিত এটি। মামাদু বলেন, তিনি জানতেন যে তার পক্ষে আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় এই কোর্সটিতে অধ্যয়নের ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব না কিন্তু তারপরও কেবল একটি সাইকেল নিয়ে চার মাসের যাত্রা শুরু করেন। গিনি থেকে মিশরের পথে তিনি রাজনৈতিক অস্থিরতা, অভ্যুত্থান এবং সহিংসতায় বিপর্যস্ত পশ্চিম আফ্রিকার বেশ কিছু দেশ পাড়ি দেন। তার সাইকেলে পাড়ি দেওয়া দেশগুলোর মধ্যে মালি, বুরকিনা ফাসো, নাইজার, টোগো, বেনিন এবং চাদও রয়েছে।মামাদু বলন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে এই দেশগুলোর মধ্য দিয়ে ভ্রমণ করা খুব কঠিন, কারণ বর্তমানে এসব দেশে নিরাপত্তা খুব অনিশ্চিত। মালি এবং বুরকিনা ফাসোতে লোকেরা আমার দিকে এমনভাবে তাকিয়ে থাকত যেন আমি খারাপ মানুষ। সর্বত্রই আমি সামরিক বাহিনীকে ভারী অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত অবস্থায় দেখেছি।’গিনির এই যুবক বলছেন, মিশরে আসার পথে তিনি তিনবার আটক হয়েছেন। এর মধ্যে দুইবার বুরকিনা ফাসোতে এবং টোগোতে আটক হয়েছিলেন একবার। চাদে পৌঁছানোর পর মামাদু সেখানকার এক সাংবাদিককে সাক্ষাৎকার দেন।ওই সাংবাদিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মামাদুর দুর্দশার কথা তুলে ধরেন এবং এরপরই গিনির এই শিক্ষার্থীটির জন্য কার্যত সাহায্যের ঢেউ শুরু হয়।চাদের লোকেরা অর্থ সংগ্রহ শুরু করে এবং শেষপর্যন্ত মামাদুর মিশরের ফ্লাইট টিকিট কেনার মতো যথেষ্ট তহবিল জোগাড় সম্ভব হয়। আর এতেই সুদানের মধ্য দিয়ে সাইকেল চালানো থেকে রক্ষা পান মামাদু।প্রসঙ্গত, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মুখে পড়েছে সুদান। তাই দেশটিতে ভ্রমণ করা খুবই বিপজ্জনক।দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে গত ৫ সেপ্টেম্বর মামাদু মিশরে তার স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছান এবং ইসলামিক স্টাডিজ কোর্সে অধ্যয়নের জন্য নির্বাচিত হন। আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামিক স্টাডিজের ডিন ড. নাহলা এলসেইদি তাকে বৃত্তিও প্রদান করেন।আল-আজহার ইউনিভার্সিটি ফেসবুকে মামাদুর সাথে তাদের একটি ছবি শেয়ার করেছে এবং বলেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি সারা বিশ্বের শিক্ষার্থীদের মাঝে জ্ঞান ছড়িয়ে দিতে আগ্রহী।ড. নাহলা বলছেন, ‘আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্বের সকল দেশ থেকে শিক্ষার্থীদের এখানে অধ্যয়নের সুযোগ দেয়, তাদের যত্ন নেয় এবং অনুদান দিয়ে থাকে।’
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct