নাজিম আক্তার, হরিশ্চন্দ্রপুর: গ্রামের এক দল যুবক ও কিশোরের উপস্থিত বুদ্ধিতে প্রাণ বাঁচলো কয়েকশো ট্রেন যাত্রীর। নিজের গায়ের লাল টি-শার্ট খুলে শিলচরগামী কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস থামিয়ে কয়েকশো যাত্রীর প্রাণ বাঁচিয়ে এলাকার সেলিব্রেটি হয়ে উঠেছেন এলাকার ওই কিশোর ও কিশোরের দল। ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার তিনটে নাগাদ মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুর থানার ভালুকা রোড স্টেশনের কাছে।
জানা গিয়েছে, হরিশ্চন্দ্রপুর-২ নং ব্লকের মশালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের ঝাঙ্গর পাড়া গ্রামের নয় যুবক ও কিশোরের দল মহম্মদ মোরসালিম (১১),মহম্মদ সোলেমান (১২), মহম্মদ সাকিব (১৫), আব্দুল মালেক (২৮), মহবুল হক (৪৫), মহম্মদ আফরজ (১৬), মহম্মদ নিয়াজ (১৭), আকমল হোসেন (১৩),কবিরুল ইসলাম (১০)ও মহম্মদ সহিমুদ্দিন (৫৫) সহ মোট দশজন এদিন বাড়ি থেকে ৪০০ মিটার দূরে রেল লাইনের ধারে মাছ ধরতে গিয়েছিল। মাছ ধরে বাড়ি ফেরার পথে রেল লাইনের তলায় বড় গর্ত নজরে পড়ে মহম্মদ সহিমুদ্দিনের। ঠিক সেই সময় দুরন্ত গতিতে আপ কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস ভালুকা রোড স্টেশন পেরিয়ে গেছে। এতে ট্রেনটি বড়সড়ো দুর্ঘটনায় পড়তে পারে বলে দলে থাকা লাল গেঞ্জি পরিহিত মহম্মদ মোরসালিমকে টি-শার্টটি খুলে মাথার উপরে ঘোরাতে বলেন এবং সহিমুদ্দিন ট্রেন চালকের দিকে এগিয়ে যান। ওই ভাবে খুদেকে দেখে ট্রেনটি থামিয়ে দেন চালক। ছুটে আসেন রেলের লোকজন। ছেলেটির কাছে সমস্ত কথা শুনে তাঁরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান। দেখেন,সত্যিই রেললাইনের তলায় একটা গভীর গর্ত হয়েছে। এর পর শুরু হয় লাইন মেরামতির কাজ। তারপর ট্রেনটি সুষ্ঠু ভাবে গন্তব্যে পৌঁছোয়। খুদের এই সাহসকে বাহবা দিয়েছেন রেল কর্তৃপক্ষ থেকে শুরু করে রেল যাত্রী ও এলাকার মানুষজন। ছেলের এই সাহসিকতায় দারুণ খুশি খুদের পরিবার-সহ গোটা গ্রাম। এই খবর সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই শনিবার ওই গ্রামে ছুটে যান রাজ্যের প্রতিমন্ত্রী তজমুল হোসেন, মশালদহ গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান আয়েশা খাতুন এর স্বামী খলিলুর রহমান ও রাজ্যের যুব কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জিয়াউর রহমান চৌধুরী সহ এলাকার নেতৃত্বরা। গ্রামের ওই যুবক ও কিশোরের দলকে ফুলের মালা ও মিষ্টিমুখ করিয়ে সংবর্ধনা জানান সকল নেতৃত্ব। ভবিষ্যতে মুরসালিমের পাশে থাকার আশ্বাস দেন জিয়াউর রহমান চৌধুরী।
কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস থামিয়ে শতাধিক যাত্রী প্রাণ রক্ষায় ভূমিকা নেওয়া মহম্মদ মোরসালিম পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে। নিতান্তই গরিব পরিবারের সন্তান। বাবা মহম্মদ ইসমাইল একজন পরিযায়ী শ্রমিক। বাড়িতে রয়েছে মা,দুই ভাই ও এক বোন। ভাঙাচোরা মাটির ঘরে তাদের বসবাস। বাবা বর্তমানে রাজ স্থানের জয়পুরে কাজে রয়েছেন। মুরসালিনের মা মারজিনা বিবি বলেন, তার ছেলে বাড়ি ফিরে এসে সে কী করেছে তা জানায়। আমি তাকে নিয়ে গর্ববোধ করছি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct