কানাডায় অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম অংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত। এই সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। তাঁদের মধ্যে ৭ লাখ ৭০ হাজার শিখ ধর্মানুসারী। কানাডার মোট জনসংখ্যা চার কোটি। পাঞ্জাবের বাইরে সবচেয়ে বেশি শিখ বসবাস করেন কানাডা। ভারত এর আগেও কানাডায় বসবাসরত কট্টরপন্থী শিখদের ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। তারা দাবি করছিল যে কানাডার অভিবাসী শিখ সম্প্রদায় বিচ্ছিন্নতাবাদকে উসকে দিচ্ছে। গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ।
জাস্টিন ট্রুডো বলেছেন, শিখ নেতাকে হত্যায় ভারত সরকারের হাত থাকার বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ আছে। কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো সোমবার ঘোষণা দিয়েছেন, গত জুনে ব্রিটিশ কলাম্বিয়ায় নিহত একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাকে হত্যায় ভারত সরকারের সম্পৃক্ততা ছিল। এ-সম্পর্কিত বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ তাঁর হাতে রয়েছে। এই ঘোষণায় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের তাৎপর্যপূর্ণ অবনতি হলো। কানাডায় বসবাসরত শিখ জনগোষ্ঠী ভারতে শিখদের জন্য স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে আসছে—এ নিয়ে ভারতের অভিযোগ আছে। কানাডায় শিখ জনগোষ্ঠীর ওপর অভিযান না চালানো নিয়েও নাখোশ তারা। মঙ্গলবার ভারত সরকারের একজন মুখপাত্র ট্রুডোর আনা এই অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ বলে মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, একই অভিযোগ কানাডার প্রধানমন্ত্রী ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলেছিলেন। সে সময়ও তিনি এই অভিযোগ সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করেছেন।কানাডার সরকার আরও বলেছে, তারা ভারতীয় একজন গুরুত্বপূর্ণ কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে। ওই কূটনীতিক কানাডায় ভারতের শীর্ষ গোয়েন্দা কর্মকর্তা ছিলেন।হারদীপ সিং নিজ্জার কে?ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সারেতে শিখদের একটি মন্দিরের সামনে গত ১৮ জুন খুন হন হারদীপ সিং নিজ্জার।নিজ্জার শিখদের জন্য খালিস্তান নামে স্বাধীন আবাসভূমি প্রতিষ্ঠায় প্রচারণা চালাচ্ছিলেন বলে ভারতের অভিযোগ আছে। ওই আবাসভূমি ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে, যাকে তাঁরা খালিস্তান বলছেন। ভারত সরকার তাঁকে আগেই ‘ওয়ান্টেড’-এর তালিকায় রেখেছিল এবং জুলাই, ২০২০-এ তাঁকে ‘সন্ত্রাসী’ বলে আখ্যা দেয়। কানাডার ওয়ার্ল্ড শিখ অর্গানাইজেশন জানাচ্ছে, কানাডার গোয়েন্দা সংস্থা আগেই নিজ্জারকে সতর্ক করেছিল। তারা বলছে, নিজ্জারের হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত।ভারতের পাঞ্জাব রাজ্যে মোট জনগোষ্ঠীর ৫৮ শতাংশ শিখ এবং ৩৯ শতাংশ হিন্দু। আশির দশক ও নব্বই দশকের শুরুর দিকে খালিস্তানের বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন জোরদার হয়। ওই সময় হাজার হাজার মানুষ নিহত হন। এই মুহূর্তে এই আন্দোলন নিয়ে সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ভারতের বাইরে বসবাসরত অভিবাসীরা।
ভারতের চোখ কেন কানাডার শিখ সম্প্রদায়ের দিকে?কানাডায় অভিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে অন্যতম বৃহত্তম অংশ ভারতীয় বংশোদ্ভূত। এই সংখ্যা প্রায় ১৪ লাখ। তাঁদের মধ্যে ৭ লাখ ৭০ হাজার শিখ ধর্মানুসারী। কানাডার মোট জনসংখ্যা চার কোটি। পাঞ্জাবের বাইরে সবচেয়ে বেশি শিখ বসবাস করেন কানাডা।ভারত এর আগেও কানাডায় বসবাসরত কট্টরপন্থী শিখদের ব্যাপারে অভিযোগ করেছে। তারা দাবি করছিল যে কানাডার অভিবাসী শিখ সম্প্রদায় বিচ্ছিন্নতাবাদকে উসকে দিচ্ছে। ১৯৮৪ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে খুন করেন তাঁর ‘শিখ’ দেহরক্ষী। কানাডায় ওই হত্যাকাণ্ডকে মহিমান্বিত করে শিখ সম্প্রদায়ের লোকজন মিছিল বের করেছেন বলে মনে করে ভারত। ওই ঘটনায় গত জুনে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী কানাডার নিন্দাও করেন। ২০১৮ সালে ট্রুডো ভারতকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের পুনর্জাগরণে কোনো সমর্থন কানাডা দেবে না। তবে তিনি বারবার স্বাধীনভাবে কথা বলা, আন্দোলন ও সমাবেশের যে অধিকার, তাকে শ্রদ্ধা করতে চান বলেও উল্লেখ করেন।কানাডা-ভারত সম্পর্কে কী প্রভাব পড়তে পারে ২০২৩ সালের শেষার্ধে দেশ দুটির বাণিজ্য চুক্তির রূপরেখা চূড়ান্ত করার কথা ছিল। সেই আলোচনা ভেস্তে গেছে। কানাডা এ নিয়ে কিছু বক্তব্য দিয়েছে। অন্যদিকে ভারত বলেছে, কিছু রাজনৈতিক কারণে এই আলোচনা থেমে আছে।কানাডার দশম বৃহত্তম বাণিজ্যিক অংশীদার ভারত। প্রায় এক দশক ধরে একটি বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার কথা রয়েছে দেশ দুটির মধ্যে। তবে ২০২২ সালে দুই দেশের বাণিজ্য ১৩ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে। যদিও কানাডার মোট বাণিজ্যের পরিমাণ ১ দশমিক ৫২ ট্রিলিয়ন।মঙ্গলবার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ভারত সরকার ট্রুডোর প্রতি কানাডায় ‘ভারত-বিরোধী’ কার্যকলাপ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে। পাশাপাশি কানাডার একজন জ্যেষ্ঠ কূটনীতিককেও বরখাস্ত করেছে তারা।
* গার্ডিয়ানের বিশ্লেষণ।
সৌ: প্র: আ:
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct