ড. মুহাম্মদ ইসমাইল: স্বাধীনতার পর অভিন্ন বিল করা হয় হিন্দু জৈন, বৌদ্ধ এবং শিখদের জন্য। এই চারটি ভারতীয় ধর্মকে হিন্দু ধর্মের অন্তর্গত করা হয় অপরপক্ষে ইসলাম, খৃষ্টান, ইহুদি এবং পার্সীদের আলাদা অর্থাৎ পার্সোনাল আইন প্রণয়ন করা হয়।
দেওয়ানী অভিন্ন আইনের প্রস্তাবগুলো প্রধানত এক বিবাহ, পৈত্রিক সম্পত্তির উত্তরাধিকার, পুত্র ও কন্যার সমান অধিকার, দাতব্য, দেবত্ব, অভিভাবকত্ব এবং হেফাজতের ভাগাভাগি সংক্রান্ত লিঙ্গ ও ধর্মনিরপেক্ষ আইন। উপরোক্ত বিষয়গুলো হিন্দু আইনের সাথে অনেকটা সামঞ্জস্যপূর্ণ বর্তমানে কারণ হিন্দু ধর্মের নানা সংশোধনীর ফলে হিন্দু মহিলাদের নানা অধিকার প্রদান করা হয়েছে। তেমনি ভাবে সতীদাহ প্রথার মত একাধিক প্রথা আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রদ করা হয়েছে। কিন্তু ইসলাম ধর্মের সাথে নানা পার্থক্য রয়েছে, ইসলামে শরিয়া আইন মানে ধর্মীয় শাসন যা ব্যক্তিগত পর্যায়ে ধর্মাবলম্বীদের ন্যস্থ , কোরআন ও হাদিসের উপর ভিত্তি করে ইসলামিক জীবনযাত্রা পরিচালিত হয়। যেখানে হিন্দুদের পৈত্রিক সম্পত্তির অধিকার নিয়ে বর্তমানে আইন সংশোধন হলো, সেখানে ইসলামিক আইনে সম্পত্তির বণ্টনের সম্পূর্ণ পরিমাণগত ভাগাভাগির কথা বলা হয়েছে।
সন্তান, স্ত্রী, আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে কে কতটা ভাগ পাবে তা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে উল্লেখিত রয়েছে ইসলামিক শরীয়াতে। শরিয়া আইন বহুবিবাহ কে অনুমতি দেয় কতগুলো শর্তাবলি উপর এবং বর্তমান সমাজে পরকীয়া নামক অসুকে বিকারগ্রস্ত মানুষজনকে সমর্থন করতে ভারতের আইন কক্ষে পাস হয় পরকীয়া আইন। বিবাহিত নারী ও পুরুষ যে কোনো পুরুষ ও নারীর সাথে যৌন চাহিদা থেকে মানসিক তৃপ্তি পেতে পারে। ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য ভারতীয় রক্ষণশীল সমাজে পরকিয়া আইন বলবৎ হলে বহুবিবাহ আইনে বাঁধা কেন।
বহুবিবাহর মধ্যে দিয়ে একাধিক স্ত্রী রাখা অপরাধ হলে ও বিবাহ বহির্ভূত একাধিক সম্পর্ক রাখা আইন সম্মত হয় কি করে। বিবাহ বহির্ভূত একাধিক সম্পর্ক পরিবারে যেমন অশান্তি নিয়ে আসে তেমনি একাধিক বিবাহ অশান্তি নিয়ে আসার সম্ভবনা আছে।
অভিন্ন দেওয়ানী আইনের পক্ষে যুক্তি হলো অনুচ্ছেদ ৪৪ মধ্যে দিয়ে দেশের ঐক্য ও অখন্ডতা মজবুত করা। তাই বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য বিভিন্ন আইন বাতিল করে এক দেশ, এক আইন প্রণয়ন , লিঙ্গ সমতার গুরুত্ব, নানা বৈষম্য আইনের বিলোপ ও পুরুষতান্ত্রিক সমাজের সংস্কার করতে চাই। যদি তাই হয়, তবে সর্বধর্মের উর্ধ্বে উঠে আইন প্রণয়ন হোক, যেখানে ধর্মীয় বিধান এবং ধর্মীয় রেওয়াজ রীতিনীতির বিন্দুমাত্র স্থান থাকবে না।
অভিন্ন দেওয়ানী আইন প্রণয়ন হোক বিজ্ঞান সম্মত পদ্ধতি মেনে ও সমাজ এবং সংস্কৃতির স্বার্থে। দুর হোক অবৈজ্ঞানিক ক্রিয়াকলাপ, কুসংস্কার, অযৌক্তিক রেওয়াজ এবং রীতিনীতি। যেখানে সাত পাক ঘুরে বা কবুল বলে থাকবে না বিবাহ।
দূর হোক সমস্ত ধর্মীয় অনুশাসন রাষ্ট্রীয় জীবনে এবং মানুষ ব্যক্তি জীবনে পালন করুক তার ধর্ম ও ধর্মীয় বিধান। তবে মনে রাখা উচিত দেশের বিভিন্ন আদালতে বর্তমানে পাঁচ কোটির বেশি মামলা বছরের পর বছর ধরে ঝুলে আছে এবং অনুমানিক ৩০কোটি মানুষ প্রভাবিত। এছাড়া ঝুলে রয়েছে অসংখ্য মামলা যার সরকারি হদিস নেই। উন্নত দেশগুলোর তুলনায় বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ও বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা সামান্য ভারতে। নারী তার অধিকার রক্ষা করতে পারে উন্নত শিক্ষা, স্বনির্ভরতার মধ্যে দিয়ে। পুরুষ থেকে খরপোষ নিয়ে অথবা জোর করে স্বামী গৃহে বসবাস করে কোন দিন মর্যাদা বৃদ্ধি পাবেনা। উন্নত দেশ ও উইরোপের নারীরা মাথা উঁচু করে বিশ্বদরবারে প্রসিদ্ধ লাভ করেছে তাদের দক্ষতা ও স্বনির্ভরতার কারণে। তাই আইন পরিবর্তন ও নতুন আইন করার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল আইনের আশ্রয় নেওয়া পরিবার ও মানুষদের দ্রুত নিষ্পত্তি করা। অতুলপ্রসাদের কথায়, আমরা ভিন্ন মতের, ভিন্ন পোশাকের,ভিন্ন ধর্মের হলেও আমাদের মধ্যে ভিন্নতা নেই।
(সমাপ্ত)
লেখক অধ্যাপক, দেওয়ান আব্দুল গণি কলেজ, দক্ষিণ দিনাজপুর
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct