ড. মুহাম্মদ ইসমাইল,নানা ভাষা নানা মত নানা পরিধান বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান৩৩ কোটি মোরা নাহি কভূ ক্ষীন, হতে পারি দীন, তবু নহি মোরা হীন।
ভারতবর্ষ সর্বত্র মিলেমিশে একাকার, তাই কোন আইন জোর করে চাপিয়ে দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। জনীকোঠারি লিখেছেন, ভারত একটি দেশ যা মৌলিকভাবে সহনশীল ও নানা সভ্যতার নির্মাণ ভূমি। ধর্মীয় বিশ্বাসে চাপ সৃষ্টি করা উচিত নয় এবং কোন ভাবেই ধর্মের কারণে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয় এবং প্রত্যেককে তার ধর্ম পরিবর্তন করার অনুমতি দেওয়া উচিত- যদি সে চায়। শুধু তাই নয়, মানুষ যদি গির্জা, মন্দির, মসজিদ, প্রার্থনাগৃহ, অগ্নি মন্দির, উপাসানালয় তৈরি করতে চাই তাতে বাধা দেওয়া উচিত নয়। শিখদের গুরু হরগোবিন্দ তার মুসলিম শিষ্যদের জন্য একটি মসজিদ তৈরি করেছিলেন শিখ সাম্রাজ্যের অধীনে। যেখানে ধর্মীয় স্বাধীনতার ঐতিহ্য অব্যাহত ছিল, শিখ শাসকেরা তাদের বিভিন্ন ধর্মের প্রজাদের জন্য গুরুদার, মন্দির এবং মসজিদ পরিচালনা করেছিলেন। আকবার পুরোপুরি ধর্মের উর্ধ্বে তার নিজস্ব মতামত দীন-ই ইলাহী প্রচার করেন এবং ইতিহাস তাকে মহান হিসেবে বিবেচনা করেছেন। কিন্তু নরেন্দ্র মোদি সরকার আসার পর থেকে ভারতীয় রাজনীতিতে জাত পাত ও ধর্মীয় স্বাধীনতার উপর ধারাবাহিক আঘাত হচ্ছে। তা নিয়ে দেশের নানা সংগঠন ও রাজনৈতিক দল আন্তর্জাতিক মহলে অত্যাচারের বিরুদ্ধে মিলিতভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে। শুধু তাই নয়, দেশজুড়ে গীর্জা, মসজিদ ও সংখ্যালঘুদের সম্পত্তি থেকে শুরু নানা রীতিনীতি আক্রান্ত। ২০১৯ সালে মানবাধিকার কমিশন বলেছেন, ভারতে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে কয়েক ডজন হত্যাকাণ্ড ও ষড়যন্ত্র কারণে আভ্যন্তরীণ শান্তি বিঘ্নিত হচ্ছে এবং বেশির ভাগই বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলিতে ধারা বাহিক ভাবে সংগঠিত হচ্ছে। ২০২০ সালে ইউনাইটেড স্টেটস কমিশন অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদির অধীনে বিজেপি সরকার সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং তাদের উপাসনালয় গুলোকে কুলুষিত করার চেষ্টা করছে এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের অপরাধীদের উৎসাহ প্রদান এবং সুরক্ষা দিচ্ছে। কমিশন ভারতকে একটি বিশেষ উদ্বেগের দেশ হিসাবে চিহ্নিত করার সুপারিশ করেছে যা ধর্মীয় স্বাধীনতার ভিত্তিতে সর্বনিম্ন।
২০২০ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত পর পর চার বার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরকে একটি বিশেষ উদ্বেগের দেশ হিসেবে মনোনীত করার সুপারিশ করেছিলেন কমিশন ও তাদের মতে ভারত সরকার জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ে ধর্মীয়ভাবে বৈষম্যমূলক নীতির প্রচার ও প্রয়োগ করছে। যার মধ্যে জোর করে ধর্মান্তর, আন্তঃ বিশ্বাসের সম্পর্ক, হিজাব পরা, গোহত্যা নিয়ে আইন প্রণয়ন যা মুসলিম খ্রিস্টানদের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। একুশে জুন ২০২২ সালে প্রতিনিধি ইলহান ওমার মুসলিম, খৃষ্টান, শিক, দলিত, আদিবাসীদের উপর পর্যালোচনা করে এবং ভারতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা প্রস্তাব পেশ করেন ও ধর্মীয় স্বাধীনতা আইন লঙ্গিত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। শুধু তাই নয়, নানা ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত বলে অভিযোগ করেন। আন্তর্জাতিক ধর্মীয় স্বাধীনতা আইনের অধীনে ভারতকে বিশেষ উদ্বেগের দেশ হিসাবে মনোনীত করার আহ্বান জানানো হয়। ভারতীয় সংবিধানের প্রস্তাবনায় ধর্ম নিরপেক্ষ শব্দটি রয়েছে এবং ২৫ থেকে ২৮ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে রাষ্ট্র কোন ধর্ম, পেশায় বৈষম্যমুলক আচরণ, পৃস্টপোষকতা বা হস্তক্ষেপ করবে না। কিন্তু বর্তমানে নানা জায়গায় বহু সংগঠন ও বিভিন্ন রাজনৈতিক কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে মুসলিম ধর্মালম্বীদের বয়কটের ডাক দিচ্ছে এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রচার করা হচ্ছে যা ভারতবর্ষের আইন ও ঐতিহ্যের পরিপন্থী। আর এই সমস্ত কার্যকলাপের সাথে নিযুক্ত দোষীদের নানা জায়গায় উৎসাহিত করা হচ্ছে নানা সংগঠনের তরফে। তবে আন্তর্জাতিক মহলের চাপে কখনোও কখনোও সামান্য শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। সংবিধানের ২৫ অনুচ্ছেদে সকল ব্যক্তি স্বাধীনভাবে ধর্ম পালন, অনুশীলন এবং প্রচার করার সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। কোন ধর্মীয় সংগঠন যদি সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ব্যাহত করে, সন্ত্রাসবাদ ও রাষ্ট্র দ্রোহিতার সঙ্গে জড়িত থাকে, তাহলে সরকার তাকে নিষিদ্ধ করতে পারে। আইনের অনেক ধারা ঘৃণাত্মক বক্তৃতা নিষিদ্ধ করে এবং একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায় বা ধর্মকে অপমান করে এমন লেখা চিত্র বা বক্তৃতার জন্য শাস্তি প্রদান করার নিদান দিয়েছে। ধর্মীয় উৎসবের জন্য ছুটির দিন ধার্য করার নির্দেশ দিয়েছে এবং ধর্মীয় শিক্ষা প্রদানকারী বেসরকারি স্কুলগুলোকে অনুমোদন দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু আড়ালে মানুষের স্বাধীনতাকে বিভিন্ন ভাবে হস্তক্ষেপ করার চেষ্টা হচ্ছে এবং বিভিন্ন আইন প্রণয়ন করা হয়েছে বারবার। ২০০৩ সালে গুজরাটে বলপ্রয়োগ ও প্রলোভন দ্বারা ধর্মান্তর নিষিদ্ধ করেছে। ২০০৬ সালে হিমাচল প্রদেশে জোর করে ধর্মান্তকরণ করা যাতে না হয় তার জন্য আইন পাশ করা হয়, সেখানে বলা হয়, ধর্মন্তকরণের ফলে বিভিন্ন অংশের মানুষের মধ্যে অসন্তোষ তৈরি হয়, সমাজের আবেগকে উদ্বৃত্ত করে যা সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের দিকে পরিচালিত করে। বিলটি হতাশাগ্রস্ত শ্রেণীর শোষণ বোধ করবে বলা হয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct