গৌরাঙ্গ সরখেল, শুভজিৎ মাইতি এবং নায়ীমুল হক: আত্মনির্ভর করে গড়ে তুলতে হবে আগামী দিনের ছাত্র সমাজকে, সঙ্গে নীতি-নৈতিকতায় বলিষ্ঠ, চরিত্রবান হতে হবে আমাদের সকলকে। এই আহ্বান-ই ঘুরে-ফিরে ছিল এবারের শিক্ষক দিবসে অনুসন্ধান কলকাতার অনলাইন অনুষ্ঠানে।
স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি তথা দ্বিতীয রাষ্ট্রপতি ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণ-এর জন্মদিন ৫ সেপ্টেম্বরে পালিত হয় জাতীয় শিক্ষক দিবস। এ রাজ্যেও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাড়ম্বরে পালিত হয় এই দিনটি।জাতীয় শিক্ষক দিবস উপলক্ষে অনুসন্ধান কলকাতা প্রতি বছরের মতো এ বছরও আয়োজন করেছিল বিশেষ আলোচনাচক্র এবং শিক্ষা সম্মাননা প্রদান। সমগ্র অনুষ্ঠান ছিল অনলাইনের সঙ্গে সঙ্গে ভিন্ন আঙ্গিকে অফলাইনেও। সমর বাগচী স্মৃতি শিক্ষা সম্মান ছিল এ বছরের নয়া সংযোজন। প্রয়াত হওয়ার আগে সমর বাগচী শিক্ষক প্রশিক্ষণ আরও কার্যকর করা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন, কয়েকটি স্কুল চিহ্নিত করাও হয়। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, অনুসন্ধান কলকাতার নামকরণ করেছিলেন তিনিই। সিদ্ধান্ত হয়, তাঁর নামে প্রতিবছর স্মারক শিক্ষা সম্মান প্রদান করা হবে।
যুক্তিবাদ, বিজ্ঞানমনস্কতা ও হাতে-কলমে বিজ্ঞান প্রসারে যাঁরা কাজ করছেন তাঁদের বিশেষভাবে উৎসাহিত করা হবে। প্রথম বছরে সমর বাগচী স্মৃতি শিক্ষা সম্মাননা ২০২৩ প্রদান করা হয় বিশিষ্ট শিক্ষক ও বিজ্ঞান প্রসার আন্দোলনে চার দশকের বিশিষ্ট বিজ্ঞান কর্মী দীপক কুমার দাঁ-কে। গোবরডাঙ্গা খাটুরা উচ্চ বিদ্যালয় সহ বিভিন্ন স্কুলে শিক্ষকতা ও প্রধান শিক্ষক এর ভার অতি দক্ষতার সঙ্গে সামলেছেন তিনি। ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে বিজ্ঞান প্রদর্শনী, বিজ্ঞান নিয়ে কর্মশালা, আলোচনা সভা বিতর্ক ইত্যাদি করা তাঁর নেশার মতো। ছোট-বড় অজস্র লেখনীতে সমৃদ্ধ তাঁর প্রকাশন ভান্ডার। বিজ্ঞানের জানা অজানা, বিজ্ঞান যখন কাজের হাতিয়ার সহ বিজ্ঞান ও বিজ্ঞানীদের নিয়ে নানা স্বাদের বই পত্র লিখেছেন তিনি।এবারের অনুসন্ধান শিক্ষা সম্মাননা ২০২৩ প্রদান করা হয় তিন কৃতী মানুষকে। তাঁদের মধ্যে অন্যতম বিশিষ্ট শিক্ষক ও পরিবেশবিদ অধ্যাপক মলয় কুমার মুখোপাধ্যায়। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে তিরিশ বছরের বেশি ভূগোল বিষয়ে অধ্যাপনা করেছেন তিনি। দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে আছে তাঁর অসংখ্য ছাত্র-ছাত্রী। নদী ও আদিম জনজাতি নিয়ে পড়াশোনা ও মেলামেশাতেই তাঁর আনন্দ। পাঁচটি নদীর (কোপাই, অজয়, তারাফেনি, ময়ূরাক্ষী ও ইংল্যান্ডের থেমস) উৎস থেকে মোহনা পায়ে হেঁটে পরিভ্রমণ এবং সেই অভিজ্ঞতা সম্মলিত বই প্রকাশ করেছেন তিনি।একটি বিদ্যালয়ের সামগ্রিক উন্নয়নে যেমন একজন শিক্ষক বা শিক্ষিকার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকে, ঠিক তেমনই শিক্ষা-কর্মীদের ভূমিকাও অনস্বীকার্য। তাই “শিক্ষক দিবস ২০২৩” উপলক্ষ্যে অনুসন্ধান কলকাতার পক্ষ থেকে পাঠভবন ডানকুনি বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠানের মাধ্যমে “অনুসন্ধান শিক্ষক সম্মাননা ২০২৩” তুলে দেওয়া হয় বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী আসাদ মণ্ডলের হাতে। অনুষ্ঠান মঞ্চে উপস্থিত শিক্ষক-শিক্ষিকা অভিভাবক অভিভাবিকা এবং ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে এই সম্মাননা গ্রহণ করে আপ্লুত হন আসাদ মন্ডল, বিদ্যালয়ের সকলেও অত্যন্ত খুশি তাঁর মতো যোগ্য একজন শিক্ষাযোদ্ধাকে এই সম্মাননা অর্পণ করায়। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও অনুসন্ধান কলকাতার সহ-সভাপতি ড.দেবব্রত মুখোপাধ্যায় এবং অনুসন্ধান কলকাতার সম্পাদক ও বিশিষ্ট শিক্ষক গৌরাঙ্গ সরখেল। অভিভাবক -অভিভাবিকা এবং ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতিতে সমগ্র অনুষ্ঠান এক অন্য মাত্রা পেয়েছিল।উত্তরবঙ্গের এমন একজন ব্যক্তিত্বকে এ বছরের অনুসন্ধান শিক্ষা সম্মাননা প্রদান করা হল, যাঁকে এক বাক্যে চেনেন রাজ্যের শিক্ষা আন্দোলনের কর্মীরা। নিজের হায়ার-এডুকেশন, উচ্চাভিলাস পাশে সরিয়ে রেখে পিছিয়ে থাকা নিজ গ্রাম ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু করেন খাদেমুল ইসলাম তাঁর কলেজ-জীবন থেকে। পাশে পেয়ে যান এলাকাবাসী ও অন্যান্য শিক্ষাপ্রেমী গুণীজনদেরকে। শুরু হয় এডুকেশন-ক্যারাভান। একে একে প্রতিষ্ঠিত হয় প্রাথমিক, উচ্চ প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক-এর বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়।
অনুসন্ধান কলকাতার পক্ষ থেকে শিক্ষক দিবসের এই মহান দিনে চারজন গুণী ব্যক্তিত্বকে শিক্ষা সম্মাননা প্রদান করতে পেরে আত্মতৃপ্তির কথা উঠে আসছিল ড. দেবব্রত মুখোপাধ্যায়ের স্বাগত ভাষণে। এদিনের মুখ্য বক্তা বিজ্ঞানী শুভাশিস মুখোপাধ্যায়সহ সভাপতি ড. অমলেন্দু বসু, বিজ্ঞানী মতিয়ার রহমান খান প্রত্যেকের বক্তৃতায় ছিল শিক্ষকদের বিশেষ দায়িত্বের কথা। আগামী দিনের প্রজন্মকে গড়ে তুলতে বারবার তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন নীতি নৈতিকতার কথা, আত্মনির্ভর ছাত্রসমাজ গড়ে তোলার কথা। শিক্ষক দিবসে দুজন গুণী শিক্ষক ড. নিপম কুমার সাইকিয়া এবং সুজাতা চৌধুরীর সংগীত পরিবেশন শিক্ষা সংস্কৃতির মেলবন্ধনকে বেশ মজবুত করে তুলেছিল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct