অভয়
শংকর সাহা
এ পাড়াতে যেন তাকে সকলে এক নামে চেনে। বয়সে ছোটো হলেও যেন বুদ্ধিতে বড় বড় লোকেদের অনেক সময়ে পেছনে ফেলে দেয় ফুলহারি গ্রামের বছর পনেরোর অভয়। যে বয়সে ছেলেরা খেলার মাঠে ব্যাটে-বলে সময় কাটায় সে সময়ে স্কুল থেকে এসে যেন তার চেনা ঠিকানা মানিকবাবুর চায়ের দোকানে মায়ের সাথে সাথে কাজে হাত লাগানো। অভয়ের বয়স যখন পাঁচ তখন তার বাবা ক্যান্সারে মারা যান। সেই সময়ে মানিকবাবুর দোকানে কাজ না পেলে ভাতের অভাবে মা-ছেলেকে থাকতে হতো। সেদিন ছিল শুক্রবার।শ্রাবণের শেষ বিকেলে সকাল থেকে যেন বৃষ্টি লেগেই আছে। দুপুরের পরে একটু বৃষ্টি কমলেও আকাশে সূর্যের দেখা নেই। এইসময়ে অভয়ের স্কুল থেকে ফেরার সময়। হঠাতই আমতলা মাঠ থেকে এক চিৎকার ভেসে আসে। শোনা যায় মানিকবাবুর ছোটো মেয়েটি পড়ে গেছে দিঘিতে। সেখানে তেমন কেউ সাঁতার জানা নেই যে তাকে জল থেকে তুলবে। আর্তনাদ ভেসে আসতে থাকে। এদিকে স্কুলে তখন খবর পৌঁছে যায়। অভয় ছুটে আসে দৌড়োতে দৌড়োতে। কোনো দিক না তাকিয়ে সোজা ঝাঁপ দেয় দিঘিতে। সাঁতরে জল থেকে তোলে মানিকবাবুর ছোটো মেয়েকে। তখন চারিদিকে লোকের জমায়েত বেড়েছে। অভয় জলে নেমেছে শুনে তার মা বিনোদিনী ছুটে আসে পাগলের মতো। অভয়কে জড়িয়ে ধরে। মানিকবাবুর মেয়ের শরীর থেকে তখন জল বের হয়ে গেছে। সে একটু সুস্থ এখন। পাশে অভয়ের গায়ে হাত দিয়ে মানিকবাবু বলে ওঠে, ‘ অভয়, আজ তুই নিজের জীবনকে বাজি রেখে যে কাজ করেছিস তার মূল্য হয়তো কোনো অর্থ দিয়ে মাপা যাবেনা। আজ মনে হচ্ছে তোর বাবার দেওয়া নামটি সার্থক হয়েছে রে! ‘বিনোদিনীর চোখ অশ্রুসজল হয়ে ওঠে।অভয়ের দিকে তাকিয়ে উপস্থিত সকলে হাততালি দিতে থাকে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct