আপনজন ডেস্ক: বিখ্যাত রোবট কার্টুন চরিত্র ওয়ালির কথা অনেকেই জানেন। ওয়ালি এমন এক রোবট, যে পরিবেশ বুঝে আচরণ করার পাশাপাশি গান শোনাতে ও মজা করতে পারে। ওয়ালির মতো পরিবেশ বুঝে কাজ করতে সক্ষম বস্তু তৈরির জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ম্যাটেরিয়াল সায়েন্স ও সিনথেটিক বায়োলজি নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। কৃত্রিম উদ্দীপনা ও প্রতিক্রিয়াশীল পলিমার–নির্ভর উপকরণ পরিবেশগত অবস্থা যেন বুঝতে পারে, তা নিয়েই কাজ করছেন তাঁরা। এ ধরনের পলিমারগুলো ওষুধ, বায়োমেডিকেল ডিভাইস, বায়োসেন্সর, ইলেকট্রনিকস বা রোবোটিকসের মতো শিল্পে ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।বর্তমানে ব্যাকটেরিয়ার মাধ্যমে দূষিত পানি বিশুদ্ধ করার নতুন এক প্রক্রিয়া নিয়ে গবেষণা করছেন বিজ্ঞানীরা। এ জন্য প্রথমে সামুদ্রিক আগাছা থেকে পাওয়া পলিমার থেকে ফটোসিনথেটিক বায়োকম্পোজিট উপকরণ তৈরি করেছেন তাঁরা। গবেষণায় দেখা গেছে, পলিমারের সঙ্গে জেনেটিক উপায়ে সায়ানোব্যাকটেরিয়া সংশ্লেষ করার পর ব্যাকটেরিয়া বিশেষ ধরনের এনজাইম উৎপাদন করে। সেই এনজাইম দূষিত উপাদানকে ভেঙে ফেলে। শুধু তা–ই নয়, ব্যাকটেরিয়া থিওফাইলিন অণুর উপস্থিতিতে নিজে থেকেই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। থিওফাইলিন চা ও চকলেটের মধ্যে পাওয়া যায়। এই জীবন্ত বস্তু টেকসই ও পরিবেশবান্ধব পানি বিশুদ্ধকরণের উপায় হিসেবে ব্যবহার করা যাবে বলে ধারণা করছেন গবেষক দলের সদস্যরা। নতুন এই জীবন্ত বস্তুর নাম দেওয়া হয়েছে ‘ইঞ্জিনিয়ারড লিভিং ম্যাটেরিয়াল’।ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া সান ডিয়েগোর অধ্যাপক জন পোকোরস্কি জানান, এটা দারুণ একটা উদ্ভাবন। পলিমার বস্তুর সঙ্গে জীবন্ত কোনো বস্তু তৈরির পদ্ধতি আসলেই আলাদা। অন্য সব সিনথেটিক বস্তুর চেয়ে এই ধরনের বস্তু জীবন্ত ও সংবেদনশীল। এই জীবন্ত বস্তু তৈরিতে অ্যালগিনেট নামের প্রাকৃতিক পলিমার ব্যবহার করা হচ্ছে। সামুদ্রিক আগাছা থেকে সংগ্রহ করে শুকিয়ে এই পলিমার জেল তৈরি করা হয়। এরপর জেলটি ফটোসিনথেটিক ব্যাকটেরিয়ার সঙ্গে মেশানো হয়। এই মিশ্রণ কাজে লাগিয়ে থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে বিভিন্ন কাঠামো তৈরির চেষ্টা করেছেন গবেষকেরা।গবেষণায় ল্যাকেজ নামের একটি এনজাইম বিশুদ্ধকরণ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। ল্যাকেজ দূষিত কণাকে নিষ্ক্রিয় করতে পারে। বিসফেনল, অ্যান্টিবায়োটিক, ফার্মাসিউটিক্যালস উপাদান ও রঙের বিভিন্ন উপাদানকে নিষ্ক্রিয় করতেও বেশ কার্যকর ল্যাকেজ। গবেষকদের তথ্যমতে, সায়ানোব্যাকটেরিয়া থিওফাইলিনের উপস্থিতিতে বিশেষ ধরনের প্রোটিন উৎপাদন করে। সেই প্রোটিনের কারণে ব্যাকটেরিয়ার কোষ ধ্বংস হয়ে যায়। এ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে ডেনিমের নীল রঙের জন্য ব্যবহৃত ইনডিগো কারমাইন বা ইন্ডিগোডিসসালফোনিক অ্যাসিড বেশ সাফল্যের সঙ্গে নিষ্ক্রিয় করা সম্ভব হয়েছে। শুধু তা–ই নয়, বিশুদ্ধ করার পর পানি থেকে সায়ানোব্যাকটেরিয়া মুক্ত করার উপায়ও আবিষ্কার করেছেন বিজ্ঞানীরা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct