আপনজন ডেস্ক: উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্যজুড়ে যে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে তাতে সমাধানসূত্র বলে দিল সুপ্রিম কোর্ট। একদিকে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস নিজের মতো করে বিভিন্ন বিশ্বিবিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করায় রাজ্যের সঙ্গে বিরোধ বাধে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অভিযোগ তোলেন ইউজিসির নিয়ম মেনে ১৫ বছরের শিক্ষকতা যোগ্যতা না থাকলেও রাজ্যপাল উপাচার্য নিয়োগ করে চলেছেন। ফলে এক অরাজকতা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে রাজ্যপালের মর্জি মতো উপাচার্য নিয়োগ রুখতে রাজ্য সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়। যদিও একইভাবে ওই উপাচার্যদের নিয়োগ বাতিল চেয়ে কলকাতা হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছিলেন অধ্যাপক সনৎকুমার ঘোষ। গত ২৮ জুন হাই কোর্ট মামলা খারিজ করে আচার্যের সিদ্ধান্তেই সিলমোহর দেয়। তবে এরপর রাজ্য সরকার মামলা করে সুপ্রিম কোর্ট। সেই মামলার শৃুনানি ছিল শুক্রবার। সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে অভিযোগ জাাননো হয়, যেভাবে রাজ্যপাল বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগ করে চলেছেন তা আইনসম্মত নয়।পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় আইন এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)-এর নিয়ম মেনে ওই নিয়োগ করা হয়নি। এমনকী রাজ্যের সঙ্গে কোনও আলোচনা ছাড়াই তিনি উপাচার্য নিয়োগ করে চলেছেন। সেই মামলার শুনানিতে শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট রাজ্য সরকার ও রাজ্যপাল দু পক্ষকে নিজেদের পারস্পরিক মতপার্থক্য দূরে ঠেলে রাজ্যের শিক্ষার উন্নতির সাথে তাদেরকে উদ্যোগ নিতে হবে। এ ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, শুক্রবার এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, রাজ্য-রাজ্যপালের ভিন্ন মত থাকতে পারে। কিন্তু আদালত তার মধ্যে ঢুকতে চায় না। আদালত স্থায়ী উপাচার্য নিয়োগের লক্ষ্যে শুধু পদক্ষেপ করবে। রাজ্য সরকার দাবি জানিয়েছিল, রাজ্যপাল যেসব অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন তার উপর স্থগিতাদেশ দিতে। কিন্তু সুপ্রিম তা মানতে চায়নি। সুপ্রিম কোর্ট স্থগিতাদেশ দিতে অস্বীকার করায় আপাতত রাজ্যপাল মনোনীত অস্থায়ী উপাচার্যেরা পদে বহাল থাকছেন।
শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্ট জানায়, সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটির সদস্য মনোনয়নের জন্য রাজ্য, রাজ্যপাল এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)—তিন পক্ষকেই পাঁচটি নাম জানাতে হবে। সদস্যদের নাম জানার পর প্রত্যেক পক্ষ থেকে সমান সংখ্যক সদস্য নিয়ে তিন জনের সার্চ কমিটি গঠিত হবে। এই কমিটিই স্থায়ী উপাচার্যের নাম প্রস্তাব করবে। তবে এ বিষয়ে মতপার্থক্য ভুলে রাজ্য ও রাজ্যপালকে এগিয়ে যাওয়া উচিত বলে মনে করে সুপ্রিম কোর্ট। তাই পরস্পরকে সহযোগিতা করে সার্চ কমিটি গঠন করে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্য নিয়োগ সমস্যার সমাধান করার পরামর্শ দেয় সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি সূর্য কান্ত এবং বিচারপতি দীপঙ্কর দত্তের ডিভিশন বেঞ্চ। এদিন সপ্রিম কোর্ট সাফ জানিয়ে দেয়, রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে উপাচার্যদের নিয়োগ কর্তা হলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। কারণ তিনি, আচার্য হিসেব অধিষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর আচার্য হওয়ার কারণে রাজ্য পালই হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য নিয়োগের প্রকৃত কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রাজ্যপাল উপাচার্যদের নির্বাচন কর্তা নন। তার কাছে কোনও নির্বাচন কমিটিও নেই।উপাচার্যদের নির্বাচন করার ক্ষেত্রে দায়িত্ব সার্চ বা অনুসন্ধান কমিটির। তাদের সুপারিশ মতোই উপাচার্যদের নিয়োগ করাই নিয়ম। তাকেই অনুসরণ করে চলতে হবে। উল্লেখ্য, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়, উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়, নেতাজি সুভাষ মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়, রাজ্য প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (ম্যাকাউট), কলকাতা, কল্যাণী, বর্ধমান, কাজী নজরুল, ডায়মন্ড হারবার মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়-সহ রাজ্যের কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেন আচার্য রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। আর তাকে ঘিরেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে সংঘাত বাধে। এই মামলার পরবর্তী শুনানি হবে ২৭ সেপ্টেম্বর বলে জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct