আপনজন ডেস্ক: জি-২০ শীর্ষ সম্মেলনের অবসরে ভারত, পশ্চিম এশিয়া ও ইউরোপের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডর তৈরির চুক্তি পাকাপাকি করে ফেলার পরদিন ভারত-সৌদি আরব কৌশলগত অংশীদারি পরিষদের প্রথম বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতা, শক্তি উন্নয়ন এবং ডিজিটাল সংযোগের নতুন এবং উন্নত মাত্রা যোগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সোমবার হায়দরাবাদ হাউসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদ যৌথভাবে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকের পরে, প্রধানমন্ত্রী মোদি তার প্রেস বিবৃতিতে বলেন, ভারত ও সৌদি আরবের মধ্যে বন্ধুত্ব আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক স্থিতিশীলতা, সমৃদ্ধি এবং মানব কল্যাণের জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
দুই নেতার মধ্যে এই দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অর্থনীতি ও বাণিজ্যের পাশাপাশি পর্যালোচিত হয় প্রতিরক্ষা ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতার বিষয়গুলো। ২০১৯ সালে রিয়াদে দুই দেশের মধ্যে যে চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল, আজ তার প্রতিটি বিষয়ের অগ্রগতি খতিয়ে দেখা হয়। বৈঠক শেষে মোদি বলেন, ‘সময় বদলাচ্ছে। আমরাও তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সম্পর্কের ক্ষেত্র বিস্তার করছি নতুন আঙ্গিকে। দুই দেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ককে পরবর্তী পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা নতুন নতুন উদ্যোগ চিহ্নিত করেছি।’
ভারত ও সৌদি আরব ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ওয়েস্ট কোস্ট রিফাইনারি প্রকল্প টি দ্রুত বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের মধ্যে আলোচনার সময় শক্তি, প্রতিরক্ষা, সেমিকন্ডাক্টর প্রভৃতি বিষয়ে সহযোগিতা জোরদার করার ক্ষেত্র হিসাবে চিহ্নিত করেছেন। ভারত-সৌদি আরব স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ কাউন্সিলের প্রথম বৈঠকে উভয় পক্ষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য আটটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব আউসাফ সাঈদ বলেন, ‘আরামকো, এডিএনওসি এবং ভারতীয় কোম্পানিগুলোর মধ্যে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতায় ওয়েস্ট কোস্ট রিফাইনারি প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নে উভয় পক্ষই তাদের পূর্ণ সমর্থন দিয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে সাঈদ বলেন, দুই নেতার মধ্যে আলোচনায় জ্বালানি, প্রতিরক্ষা, নিরাপত্তা, শিক্ষা, প্রযুক্তি, পরিবহন, স্বাস্থ্যসেবা, পর্যটন ও সংস্কৃতির মতো সহযোগিতার বিভিন্ন ক্ষেত্র চিহ্নিত করা হয়েছে। উভয় পক্ষ সম্ভাব্য সহযোগিতার জন্য পাওয়ার গ্রিড, গ্যাস গ্রিড, অপটিক্যাল গ্রিড এবং ফাইবার নেটওয়ার্ক নিয়েও আলোচনা করেছে। সাঈদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদী এবং ক্রাউন প্রিন্স বিন সালমান উভয়ই ওয়েস্ট কোস্ট রিফাইনারি প্রকল্পের দ্রুত বাস্তবায়নে তাদের “পূর্ণ সমর্থন” দিয়েছেন, যার জন্য ইতিমধ্যে ৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দ করা হয়েছে। জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষে একদিনের রাষ্ট্রীয় সফরে ভারতে এসেছেন বিন সালমান।
রবিবার সম্মেলন শেষ হওয়ার পর শুরু হয় সৌদি যুবরাজের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ের ভারত সফর। সোমবার সকালে তাঁকে রাষ্ট্রপতি ভবনে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাগত জানান রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু। প্রধানমন্ত্রী মোদিও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। জি-২০-এর সাফল্যের জন্য সৌদি যুবরাজ প্রধানমন্ত্রী মোদিকে অভিনন্দন জানান। বেলা ১১টা থেকে হায়দরাবাদ হাউসে শুরু হয় দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক। আজ রাতেই যুবরাজ ভারত ছাড়ছেন। সৌদি যুবরাজের এটা দ্বিতীয় দফার ভারত সফর। চার বছর আগে রিয়াদে দুই দেশের মধ্যে যে ‘স্ট্র্যাটেজিক পার্টনারশিপ কাউন্সিল’ গঠিত হয়েছিল, আজ তার অগ্রগতি পর্যালোচিত হয়। ওই কাউন্সিলের অধীনে দুটি মন্ত্রী পর্যায়ের কমিটি আছে। একটি রাজনৈতিক, নিরাপত্তা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতাকেন্দ্রিক; অন্যটি অর্থনৈতিক ও বিনিয়োগ-সংক্রান্ত। সেই দুই কমিটির অগ্রগতি নিয়ে আলোচনার পাশাপাশি দুই নেতা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের সার্বিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখেন। আলোচনা করেন পারস্পরিক স্বার্থসম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিষয় নিয়েও।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct