যে ছায়ায় আলোর মায়া
আহমদ রাজু
অন্ধকারের বুক চিরে যেমন করে আলোর রেখা ফুটে ওঠে ঠিক তেমন না হলেও ঘটনাটা প্রায় একই রকম। পূর্ব ইঙ্গিত ছাড়াই কাকলি গ্রামে ফিরে আসে। তাও আবার তেইশ বছর পর! একটা অবিশ্বাস্য ঘটনার সাক্ষী হয়ে রইল গোটা চালতাডাঙ্গা গ্রাম। এই আগমনে কেউ বিন্দুমাত্র প্রস্তুত ছিল না। কেউ বলতে কাকলির পরিবার থেকে শুরু করে গ্রামবাসীরা। একটা মৃত মেয়ে যাকে কিনা সকল ধর্মীয় রীতি মেনে বহু বছর আগে কবর দেওয়া হয়েছিল! সে এক নাটকীয় কাহিনী; যারাই মনে করার চেষ্টা করে তাদেরই গা শিউরে ওঠে। সেদিন সবেমাত্র ভোরের আলো পাতার ফাঁক দিয়ে পৃথিবীর মাটিতে পড়তে শুরু করেছিল। শীতের সকালে বাড়ির অন্যরা গরম লেপ-কম্বল ছেড়ে উঠতে না চাইলেও দুরন্ত কিশোর-কিশোরীরা শীতের ঠাণ্ডা অনুভূতিকে তুচ্ছ করে ঘর থেকে বের হয়। গ্রামের শেষ বাড়ির পশ্চিমে বিস্তৃর্ণ ফসলের ক্ষেত। বাড়ি লাগোয়া একটি জমির ফসল কেটে নেওয়ায় ক’দিনের জন্যে খেলাধূলার একটা জায়গা তৈরি হয়। তারা সেখানে যেয়ে জড়ো হয় নিয়মিত। সেদিনও নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটেনি। রুমা, কাকন, আলিফ, হাদু, মিনতি সবাই ছিল। শুধু ছিলনা কাকনের বড় বোন কাকলি। যে কিনা চপল পায়ে কারণে-অকারণে ছুটে বেড়াতো এপাড়া থেকে ওপাড়া। তার চলার ছন্দে শক্তি খুঁজে পেতো ক্লান্ত প্রকৃতি যেন। তার কণ্ঠে কণ্ঠ মেলাতো পরিযায়ী পাখির দল। প্রজাপতি- ঘাস ফড়িংয়ের সাথে ছিল হৃদয়কাড়া ভাব। এভাবেই শরীর ও মনে বড় হচ্ছিল ঠিকই; তবে তা যেন সে মানতেই চাইতো না। এমন হাসিখুশিভরা কিশোরী কোথায় গিয়েছিল? অথচ কিছুক্ষণ আগেই সে সবার উদ্দেশ্যে হাক ছেড়ে বলেছিল, ‘তোরা খেলতে থাক, আমি যাবো আর আসবো।’ বাড়ির লোকজন জানতে না পারলেও কেউ কেউ নাকি সেদিন দেখেছিল গ্রামের পাশের ছোট্ট বাজারে কয়েকজন বখাটে তাকে ঘিরে ধরেছে। কোনকিছু বুঝে ওঠার আগেই জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যায়। কেউ তখন কথা বলেনি চরম বাস্তবতায়- জীবনের ভয়ে। সবাই একজোট হয়ে হয়তো এদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারতো। বাজার ভর্তি লোকজন থাকলেও সবাই যেন বোবা পাথরের ভূমিকা পালন করেছিল। না হলে ছয়-সাতজন অল্প বয়সী বখে যাওয়া ছেলেদের সাহস কীভাবে হয় এমন অপকর্ম করার! হয়তো কাকলি নিজেকে বাঁচাতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিল- কেঁদেছিল! নিজেকে মুক্ত করার আকুতি সীমা থেকে নিঃসীমায় পৌঁছেও দিতে পেরেছিল। মুক্ত সে হতে পারেনি। একসময় হারিয়ে যায় গাছের ছায়ায়- সবুজের চাদরে। গ্রামবাসী একজোট হয়ে তন্ন তন্ন করে খুঁজে ফেরে তালের বনে- দক্ষিণ ভিটায়; কোথাও পায়না। তারা যখন হতাশ হয়ে ক্লান্ত-শ্রান্ত শরীরে বাড়ির পথ ধরে তখন জানতে পারে- শেখের বেটা দলবল নিয়ে তাকে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল জঙ্গলের দিকে। ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে। মলয় শেখ তার ছেলের পক্ষে সাফাই গায়- সেদিন নাকি তার ছেলে বাড়ি থেকে বেরই হয়নি! হামিদ গাজীর সাথে মলয় শেখের পুরোনো শত্রুতার রূপ মহারূপে বিস্তার লাভ করে। মেয়েকে অপহরণ ও গুমের অভিযোগে মামলা দায়ের করে মলয় শেখের পরিবারের সবার নামে। যার থেকে বৃদ্ধ-মহিলারাও বাদ যায় না। মামলা আগেই হবার কথা ছিল; যদি কাকলি নাও হারিয়ে যেতো তবুও মামলা হতো। তবে সেটা মলয় শেখ করতো হামিদ গাজীর নামে। ঘটনাক্রমে অবস্থানটা পাল্টে গেল সময়ের বিচারে। কাকলির বড় ভাই হাবলু তিন মাস আগে মলয় শেখের মেয়ে তানিয়াকে গোপনে বিয়ে করার পর থেকে দু’পরিবারের মধ্যে অশান্তি লেগেই আছে। হাবলুর সাথে বিয়ে না দিয়ে মলয় শেখ তার মেয়েকে কেটে নদীতে ভাসিয়ে দিতেও প্রস্তুত। গোপনে বিয়ে করায় স্বীকৃতি দেওয়াতো দূরের কথা, ছাড়িয়ে নিতে সব রকম চেষ্টা করছে অনবরত। হামিদ গাজী অবশ্য তার বৌমাকে মেনে নিয়েছে প্রথম দিনই। তবে সে এত সহজে মেনে নেবার পাত্র নয়। কেন, কী কারণে মেনে নিলো তা অবশ্য অজানা। মনের ভেতরে কোন দূরবিসন্ধি আছে কিনা বাইরে থেকে বোঝা যায় না।ইউনিয়ন পরিষদে শালিসী বৈঠক বসেছিল বেশ কয়েকবার। কাজ হয়নি। মলয় শেখ তার মেয়েকে ফিরিয়ে নেবার বাইরে আর কিছু ভাবতেই পারেনি। হামিদ গাজী তার বৌমাকে ফেরৎ দেবে কেন? এসব নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে। কোন সিদ্ধাতে পৌঁছাতে পারেনি স্থানীয় চেয়ারম্যান; যে সমস্যা সে সমস্যা রয়েই গেছে। বরং বৃদ্ধি পেয়েছে বলতে হয়।
হঠাৎ কাকলি নিখোঁজ হওয়ায় কলহ ফুঁলে ফেঁপে ভিমরুলের চাকে রূপ নেয়। এলাকাবাসী নিশ্চিত, নিজের মেয়েকে ফিরিয়ে নিতে না পেরে কাকলিকে অপহরণ করিয়েছে মলয় শেখ। পুলিশ আটককৃতদের মাত্রারিক্ত অত্যাচার করেও তাদের মুখ থেকে সন্তোষজনক কোন কথা বের তো করতে পারেই না, আর পারবে কিনা সেটা নিয়ে স্বয়ং পুলিশই দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে যায়। ঘোড়ার পিঠের সাওয়ার হয়ে দিন পার হলেও কাকলির খোঁজ মেলে না। একদিন দু’জন কাঠকুড়ানি জঙ্গলের মধ্যে পোড়ো বাড়িটার সদর দরজার পাশে কাকলির লাশ খুঁজে পায়। লাশের অবস্থা দেখে বোঝা যায় মৃত্যুর সময় খুব বেশি নয়। সর্বোচ্চ পাঁচ- সাত ঘন্টা। পুলিশ তখন আশেপাশে তন্ন তন্ন করে খুঁজেও কারো অস্তিত্ব পায় না। মলয় শেখ আর তার ছেলে ফরিদ পুলিশের ঘেরাটোপে থাকলেও তাদের দিকেই সন্দেহের তীর। ভরা বাজার থেকে কাকলিকে ইমরানই লোকজন নিয়ে উঠিয়ে নিয়ে গিয়েছিল যা সেদিন দেখেছিল অনেকেই।পনের দিন পরে জঙ্গলের মধ্যে কাকলির সতেজ লাশ পেয়ে পুলিশ নড়ে চড়ে বসে। এই খুনের সাথে আরো কেউ নিশ্চয় জড়িত আছে। যাদের দিয়ে আসামীরা কাজটি করিয়েছে। পুলিশ নতুন করে ধড়পাকড় শুরু করে। ভয়ে কেউ কেউ বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপন করতে পারলেও অধিকাংশকেই পুলিশ আটক করে। তানিয়া কাঠগড়ায় উঠে বলেছিল, কাকলি যেদিন নিখোঁজ হয় সেদিন সে কাকলির সাথে ছিল! তার সামনে বড় ভাই ইমরান কাকলিকে উঠিয়ে নিয়ে যায়। গাড়িতে বসা ছিল বাবা। পরে তাদের পুলিশ আটক করলে বাড়ির অন্য সদস্যরা বাবার নির্দেশে কাকলিকে হত্যা করে জঙ্গলের মধ্যে ফেলে দিয়ে আসে। মেয়ের মুখে এসব কথা শুনে মলয় শেখ মুহূর্তে অন্য জগতে হারিয়ে গিয়েছিল। এই মেয়েকে কীনা এত আদর-স্নেহ দিয়ে মানুষ করেছিল! যাকে নিয়ে দেখেছিল স্বপ্নের পাহাড়! মনে মনে খুব ভেঙে পড়েছিল সেদিন যা বাইরে প্রকাশ করেনি। পাছে ইমরান ভেঙে পড়ে। ইমরানের প্রতি তার আত্মবিশ্বাস প্রবল- যা তখনও পর্যন্ত অটুট ছিল। সে ছেলের কাছে জিজ্ঞাসা করেছিল, এমন ঘটনা ঘটিয়েছে কি না? ইমরান বাবার প্রশ্নে শুধু একটি কথাই বলেছিল, ‘আমিতো সেদিন বাড়িই ছিলাম আব্বা; আর আপনার কাছেই ছিলাম। আমি খারাপ এটা সত্য, তবে এতটাও খারাপ নই যে একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে যাবো।’ ছেলের কথায় মলয় শেখ আর কোন প্রশ্ন করে না। আসলেইতো, যেদিন কাকলি নিখোঁজ হয় সেদিন ইমরান বাড়িতেই ছিল। সাক্ষী সে নিজেই। হাজার মানুষের সাক্ষ্যতে এই সত্য মিথ্যাতে রূপান্তর হবে না। জোরালো কোন প্রমাণ না পেলেও তানিয়ার জবানবন্দীতে তার বাবা মলয় শেখ আর বড় ভাই ফরিদের যাবৎজীবন কারাদণ্ডসহ পরিবারের অধিকাংশ সদস্যের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেয় আদালত। মলয় শেখের বাবা আর চাচা দুজনেই কারাগারে মৃত্যুবরণ করেছে। মলয় শেখ বেঁচে থেকেও যেন মৃত। তার জেল জীবনে খুব বেশি আক্ষেপ না থাকলেও নিজের মেয়ে তার বিরুদ্ধে যে সাক্ষ্য দিয়েছিল তাতেই সে বেঁচে থেকেও মৃত্যু পরবর্তী জীবন উপভোগ করছে নিরবধি। সাজা ভোগ করলেও বরাবরই নিজেদের নির্দোশ বলে দাবী করে আসছে। কাকলি হত্যার পেছনে তাদের কোন হাত ছিল না। যদি তাই হয় তাহলে কাকলিকে কে হত্যা করেছিল? বাজারে যারা সেদিন দেখেছিল ইমরানকে দলবল নিয়ে কাকলিকে উঠিয়ে নিয়ে জঙ্গলের দিকে নিয়ে যেতে তারা কী তবে মিথ্যা বলেছিল? একজন- দুইজন না হয় মিথ্যা বলতে পারে তাইবলে বাজার সুদ্ধ মানুষ কী মিথ্যা বলবে? এসব প্রশ্নের উত্তর আর কাকলির মৃত্যু গ্রামবাসীর মনে দাগ কাটলেও প্রতি বছর একটু একটু করে মিলিয়ে নিঃশেষ হয়ে গিয়েছিল সে দাগের ব্যাপ্তি। আজ হঠাৎ কাকলির আগমন অতি ভৌতিক ব্যাপার মনে হয়। না হলে এত বছর পর তার ফিরে আসা একদম অসম্ভব। তাকে যখন হত্যা করা হয়েছিল সেসময় তার বয়স ছিল তের কি সাড়ে তের বছর। তেইশ বছর পর সেই একই জায়গায় তার বয়স আটকে আছে! অল্প বয়সীরা বুঝতে না পারলেও ত্রিশ পেরোনো মানুষগুলো ঠিকই ভয়ে তটস্থ হয়ে উঠেছে মুহূর্তে। শুকনো পাতার শব্দে তারা কেবলই চমকে উঠছে। যারা পুনর্জন্ম বিশ্বাস করে তারা বলতে শুরু করেছে- কাকলির পুনর্জন্ম হয়েছে। বয়স্ক মানুষগুলো এক বাক্যে বলেছে, যে কোন কারণে তার আত্মা তৃপ্ত না হওয়ায় ভূত হয়ে সে ফিরে এসেছে। এখন আর কাউকে ছাড়বে না।
কাকলি নির্বাক চিত্তে এদিক-ওদিক তাকায়। সবকিছু নতুন- একদম অপরিচিত। গ্রামে ঢুকে সে বুঝেছিল কিছু একটা নিশ্চয় হয়েছে। তা না হলে সেই মেঠোপথ- শালের বন কেন অন্যরকম হবে? ছোট ছোট গাছের সারি কেমন করে ইয়া বড় বড় হয়ে যাবে? সে দ্বিধাহীন হাঁটতে থাকে। একসময় থমকে দাঁড়ায় গ্রামের দক্ষিণ দিকে পাহাড় গলা মৃতপ্রায় নদীর ওপরে খোলা প্রান্তরের সামনে। এখানে সে প্রায়ই বিকেলে বৌচি খেলতে আসতো। সেখানে মস্ত এক দালান বাড়ি; যার অবস্থা দেখে বোঝা যায় বহু পুরোনো। হয়তো ভুল হতে পারে, তবে রাস্তার ধারে এক সারিতে তিনটি তালের গাছ সে ভুলটাকে সুধরে দেয়। এই গাছগুলোর তাল সে অনেকবার খেয়েছে। ভুল হবার কোন সুযোগ নেই। পাশেই ছিল মল্লিকদের ইয়া বড় আমবাগান। কোন পাশে ছিল মনে করতে না পারলেও পূর্বদিকে ছিল বলে তার এই মুহূর্তে মনে হয়। তাইতো সেদিকে দেখার চেষ্টা করে হতাশ হয়ে যায়। সে বাগানটাও বসত বাড়ির দখলে! একটু এগিয়ে গিয়ে দেখে বাগানের কোনায় ঢাসা পেয়ারার গাছটা বহু আগেই হয়তো কাটা পড়েছে। এই গাছের পেয়ারা কে না খেয়েছে? মল্লিক বাড়ির কেউ কোনদিন নিষেধ করেনি কাউকে। তাহলে কোন প্রয়োজনে তাকে কেটে ফেলতে হয়েছে? নিজের মনে প্রশ্ন করতে করতে গ্রামের কাঁচা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে থাকে। অল্প বয়সী কয়েকটি ছেলে তার দিকে কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বিড়বিড় করতে করতে পাশ কেটে চলে গেলো! তাদের চোখে-মুখে একটা কিসের যেন প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে থাকে যা কাকলির চোখ এড়ায় না। যতই সময় পার হয় ততই নিজেকে অচেনা মনে হতে থাকে। কেন তার সাথে এমন হচ্ছে? চেনা গ্রাম তার কাছে কেন অচেনা হয়ে ধরা দিচ্ছে? এইতো একটু আগেই...। তার ভাবনায় ছেদ পড়ে, সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মাঝ বয়সী একজনের কথায়। ‘কাকলি তু...ই!’ কাকলি তাকে ঠিক চিনতে পারে না। বলল, ‘আপনাকে ঠিক চিনতে....’ লোকটি কথাটা শোনার জন্যে কোনরূপ প্রস্তুত ছিল না। ভূত- ভূত বলে চিৎকার দিয়ে পড়ি মড়ি করে যেদিক দিয়ে এসেছিল সেদিকে দেয় দৌঁড়। লোকটির এমন আচরণে বিস্মিত কাকলি। তাকে দেখে লোকটি কেন এমন করে দৌঁড় দিলো? কেনই বা ভূত ভূত বলে চিৎকার করলো? সুনসান দুপুর। রাস্তায় আহামরি তেমন কেউ নেই। যতদূর চোখ যায় ফসলের ক্ষেত। দূরে দাঁড়িয়ে পাহাড়ের সারি। ক’দিন থেকে ভ্যাপসা গরমের কারণে মাঝ দুপুরে ক্ষেতে কৃষকের দেখা নেই। কিছুক্ষণ আগেই তারা বাড়ি ফিরে গেছে। অন্য সময় হলে রাস্তায় পথচলা মানুষের দেখা পাওয়া যেতো। আজ ঠিক তার উল্টো। যা একজন এসেছিল সেও ভূত বলে দৌঁড়ে পালিয়েছে। কিন্তু কেন? ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র প্রশ্ন নিজের মনের কাছে রেখে সামনের দিকে পা বাড়ায়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct