বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উপর অসাধারণ দক্ষতা আর ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন আবু সয়ীদ আইয়ুব। এমন উদার অসাম্প্রদায়িক আর উত্তুঙ্গ সেক্যুলার ব্যক্তিত্ব হর সময়ে মেলে না। অখণ্ড বাঙালিজাতি তাঁর জন্য সঙ্গত কারণেই গর্বানুভব করতে পারে। বর্তমানে রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারা পোষিত, লালিত ধর্মাশ্রয়ী সাম্প্রদায়িকতা আর তার প্রকাশ বাঙালি জীবনকে প্রায় ধ্বস্ত করে দেবার। সেই সন্ধিক্ষণে আবু সয়ীদ আইয়ুবের জীবন-কীর্তি তুলে ধরেছেন বিশিষ্ট ইতিহাসবেত্তা খাজিম আহমেদ।
ভূমিকা : আবু সয়ীদ আইয়ুব (১৯০৬-’৮২) পুরোগামী দার্শনিক-ভাবুক। সাহিত্য সমালোচক হিসেবে অশেষ খ্যাতির অধিকারী তিনি। এই যুগের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রবীন্দ্র বিশেষজ্ঞ। ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’, ‘পান্থজনের সখা’ আইয়ুবের অবিস্মরণীয় সৃষ্টি। জনাব আবু সয়ীদ ছিলেন স্বভাবসিদ্ধ অতি মৃদুভাষি। গৌরকিশোর ঘোষ জনাব আইযুবকে ‘এই শহরের সরস সেই গাছটি’– হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন একটি কবিতায়। কবিতাটি প্রকাশিত হয়েছিল: ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকায়। এখানে একটি বিশেষ ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ করা হল: ‘সাহিত্য সমিতি’-র তত্ত্বাবধানে ‘বঙ্গীয় মুসলমান সাহিত্য সম্মেলন’-এর সপ্তম অধিবেশন অনুষ্ঠিত হয়। ১৯৪৩ খ্রিস্টাব্দের ৮ এবং ৯ মে তারিখে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজে। উদ্বোধন করেন মাওলানা আকরম খাঁ। এই সম্মেলনে আবু সয়ীদ আইয়ুব উপস্থিত ছিলেন। হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়, বিষ্ণু দে (১৯০৯-১৯৮২) এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। (সূত্র: ‘মুসলিম সাহিত্য সমাজ : চিন্তা ও সাহিত্যকর্ম’)। আবু সয়ীদ আইয়ুব প্রকাশ করেছিলেন, ‘কোয়েস্ট’ নামক উচ্চ মননশীল ইংরেজি পত্রিকা। উদার মানবতাবাদের চর্চা করতেন।অবাঙালি হওয়া সত্ত্বেও তিনি বাংলা সাহিত্য জগতে যেভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিলেন তা বিস্ময়কর।
পরিচয় : পিতামহের গৃহেই (রফি আহমেদ কিদোয়াই রোড) ওয়েলেসলি স্ট্রিটে তিনি জন্মেছিলেন। তাঁর পিতার নাম জনাব আবুল মুকারিম আব্বাস। ভাইসরয় সেক্রেটারিয়েট-এর অধীনে করণিকের চাকরি করতেন। তাঁর মা ছিলেন আমিনা খাতুন। তাঁর দাদা ডা. এ এম ও গণি ছিলেন রাজনীতিবিদ এবং জনপ্রিয় চিকিৎসক। এন্টালী কেন্দ্র থেকে তিনি বিধানসভার সদস্য ছিলেন। আবু সয়ীদ আইয়ুব ধীরেন্দ্রমোহন দত্তের কন্যা গৌরী দত্তকে বিবাহ করেছিলেন। এই সুবাদেই জনাব আইয়ুব সম্পূর্ণরূপে বাঙালি হয়ে উঠেছিলেন। আবু সয়ীদ আইয়ুব বিবাহের পর কিছু রচনা নির্মাণ করেছিলেন আবু সয়ীদ আইয়ুব দত্ত নামে। বিষয়টি কৌতূহলোদ্দীপক বটে।
শিক্ষা ও গবেষণা : সয়ীদ তার শৈশবকালের কিছু সময় শ্রীহট্টতে কাটিয়েছিলেন। যদিও তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু হয়েছিল কলকাতাতেই। সেন্ট আন্থনি স্কুল (St. Anthony’s School) থেকে এন্ট্রান্স পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে আইএসসি পাশ করেছিলেন। অতঃপর প্রেসিডেন্সি কলেজে ফিজিক্স অনার্স পড়েছিলেন। তিনি প্রখর মেধাবী ছাত্র ছিলেন। বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের ‘Theory of Relativity” সম্পর্কে তাঁর গভীর কৌতূহল আর আগ্রহ ছিল। এই সুবাদে আইয়ুব অধ্যাপক প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশের তত্ত্বাবধানে এডিংটনের “Mathematical Theory of relativity” গভীর অভিনিবেশ সহকারে পড়েছিলেন। তিনি শৈশবকাল থেকেই নানান শারীরিক অসুস্থতায় ভুগতেন। তীক্ষ্ণ মেধাসম্পন্ন আইয়ুবের চিন্তা-চর্চার জগতটা ছিল অতীব শক্তিশালী কিন্তু শরীরটি ছিল শীর্ণকায় এবং দুর্বল। এত তেজি, জেদি হওয়া সত্ত্বেও এমএসসি (M.Sc.) পরীক্ষায় বসতে পারলেন না। অতঃপর কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। প্রথম শ্রেণির অনার্সসহ স্নাতক হওয়ার পর তিনি ‘রিসার্চ ফেলোশিপ’ এর সুযোগ পান। অধ্যাপক ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এবং অধ্যাপক কৃষ্ণচন্দ্র ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে ‘এরর ইন পারসেপশন এন্ড থট’ (Error in a percaption and thought) এর উপরে গবেষণা করেন।
শিক্ষকতা : আবু সয়ীদ আইয়ুব ছাত্রজীবন শেষে অধ্যাপনায় নিজেকে নিয়োজিত করেন। প্রেসিডেন্সি কলেজ, কৃষ্ণনগর গভঃ কলেজ, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আর বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র-ছাত্রী পড়িয়েছিলেন। এই সুবাদে অন্তর্মুখীন এই সজ্জন মানুষটি তরতাজা তরুণ-তরুণীদের মধ্যে প্রিয়জন হয়ে ওঠেন।
বৌদ্ধিক চর্চা, গবেষণা : গত শতকের তিনের দশকের প্রায় শুরু থেকেই অভিজাত পত্রিকা ‘পরিচয়’ এবং অধ্যাপক হুমায়ুন কবির সম্পাদিত ‘চতুরঙ্গ’ পত্রিকার অতি উচ্চমানের প্রবন্ধচর্চা শুরু করেন। একজন অবাঙালি উর্দুভাষি যুবকের বাংলা ভাষা চর্চা সকলকে চমকিত ও বিস্মিত করে। ফ্যাসিবাদ বিরোধী সাহিত্য আন্দোলনে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করতে সামান্যতম দ্বিধা করেননি। ১৯৪২ সালে এই আন্দোলনের যে প্রেসিডিয়াম তৈরি করা হয়েছিল তার তিনি সদস্য ছিলেন। এই ১৯৪২ সালেই আন্দোলনের প্রথম সম্মেলন হয়েছিল কলকাতায়। ১৯৫৪-১৯৫৬ সালে রকফেলার ফাউন্ডেশনের ফেলো মনোনীত হয়েছিলেন। ১৯৬১ সালে মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভারত বিষয়ক আলোচনা আর ভারততত্ত্বের ওপর বিশেষ বিভাগ খোলা হয়েছিল (Indian Studies)। তার তিনি প্রথম বিভাগীয় প্রধান মনোনীত হয়েছিলেন। আদ্যান্ত পণ্ডিত আবু সয়ীদ আইয়ুবের ওপর এই মর্যাদা আর বিশ্বাস স্থাপন, তার অনুপম আর অতুলনীয় প্রতিভার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। ১৯৬৯-১৯৭১তক সিমলায় ‘Institute of Advanced Studies’-এ ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতা আন্দোলন সংগ্রাম আর মুক্তিযুদ্ধের তিনি ছিলেন একজন দায়িত্বশীল সমর্থক। স্পষ্ট করে বলা দরকার পূর্ব বাংলার তৎকালীন বাঙালি বুদ্ধিজীবী শ্রেণির প্রতিনিধিদের তিনি সমর্থন করেন ও কলকাতায় তাঁর পার্ল রোডের বাড়িতে অনেকেই যাতায়াত করতেন। তিনি উর্দুভাষি হলেও বাংলা ভাষা কেন্দ্রিক ও ভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদকে তিনি আন্তরিক অর্থে সমর্থন করেন। মহীয়সী মহিলা গৌরী আইয়ুব ছিলেন তাঁর একনিষ্ঠ সহযোগী (এই শব্দটির স্ত্রীলিঙ্গ সচেতনভাবেই করলাম না)।
মৌলিক উচ্চস্তরের সাহিত্য চর্চা : বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের উপর অসাধারণ দক্ষতা আর ব্যুৎপত্তি অর্জন করেছিলেন আবু সয়ীদ আইয়ুব। তার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধটি ছিল- ‘বৃদ্ধি বিভ্রাট ও অপ্রকাশনুভূতি’। সেটি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯৩৪ সালে ‘পরিচয়’ পত্রিকায়। এই কষ্টসাধ্য আর প্রখর অধ্যবসায় সহকারে নির্মিত প্রবন্ধটি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ, প্রমথ চৌধুরী আর অতুলচন্দ্র গুপ্তের সাগ্রহ দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ‘পরিচয়’ সম্পাদক, অভিজাত বাঙালি সমাজের রুচিবান প্রতিনিধি সুধীন্দ্রনাথ দত্ত তাঁকে ‘সুন্দর ও বাস্তব’ নামক একটি ‘ডিসকোর্স’-এর জন্য উদ্বুদ্ধ করেন। ১৯৩৪ সালের ‘পরিচয়’ পত্রিকার একটি বিশেষ সংখ্যায় সেটি প্রকাশিত হয়। তাঁর চেতনায় রবীন্দ্রনাথের অবস্থান কোথায় তা স্থিরীকৃত হয়ে যায়।
তাঁর নির্মিত গ্রন্থগুলো : আবু সয়ীদ আইয়ুব ডজন ডজন লেখেননি। কিন্তু আধুনিক বাংলা সাহিত্যে যে তিনি একজন প্রথাবিরোধী চিন্তক-দার্শনিক তা সুপ্রমাণিত। এমন উদার অসাম্প্রদায়িক আর উত্তুঙ্গ সেক্যুলার ব্যক্তিত্ব হর সময়ে মেলে না। অখণ্ড বাঙালিজাতি তাঁর জন্য সঙ্গত কারণেই গর্বানুভব করতে পারে। আজকের দিনের রাষ্ট্রযন্ত্রের দ্বারা পোষিত, লালিত ধর্মাশ্রয়ী সাম্প্রদায়িকতা আর তার প্রকাশ বাঙালি জীবনকে প্রায় ধ্বস্ত করে দেবার। ষড়যন্ত্রে লিপ্ত তেমন সময়ে আবু সয়ীদ আইয়ুবের চিন্তা-দর্শন সঠিক পথের দিশা দেখাতে পারে। সোজাসুজি বলতে কি, আবু সয়ীদ আইয়ুবের মৌলিক আর অত্যাধুনিক রচনারীতি, প্রকাশভঙ্গি আর স্টাইল অনির্বচনীয় ও অদৃষ্টপূর্ব। তাঁর গদ্য নির্মাণ অনুকরণ আর অনুসরণযোগ্য। কিন্তু সেটিও খুব সহজ সাধ্য নয়। ‘আধুনিকতা ও রবীন্দ্রনাথ’-(১৯৬৮) কলকাতার সাহিত্যবোদ্ধা মহলে অদ্ভুত এক উচ্ছ্বাস তৈরি করেছিল। অনুভব করা গেছিল তাঁর বিশ্লেষণ শক্তি কোন উচ্চস্থান স্পর্শ করেছে। ১৯৭০ সালে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত বক্তৃতামালায় তিনি কবিতা এবং সত্য সম্পর্কে তাঁর অনুভব, উপলব্ধি প্রকাশ করেছিলেন পরম আন্তরিকতায় আর একজন প্রখর পণ্ডিতের নৈর্ব্যক্তিক দৃষ্টিতে। সেখানে লক্ষ্যযোগ্য হয়ে উঠেছিল তার জীবন দর্শন, কবিতা আর কাব্য বিচার সম্পর্কে তাঁর অনিন্দ্যসুন্দর ধারণা। ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত ‘পান্থজনের সখা’ নামক গ্রন্থে রবীন্দ্র-কবিতার রসোজ্জ্বল বিচার, পুঙ্খানুপুঙ্খ রবীন্দ্র মানস ব্যাখ্যা আর বিশ্বকবির মনোজগতের অন্তর্লীন অবস্থান সম্পর্কে বিশ্লেষণ, রবীন্দ্রানুরাগীদের বিমুগ্ধ বিস্ময়ে আবিষ্ট করে তোলে। এই গ্রন্থে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে তাঁর পূর্ব আলোচনার বিষয়ে নানান মননজাত প্রতিক্রিয়াও প্রকাশ করেছেন। অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথকে তিনি বাঙালি বিদ্বৎসমাজের ‘কাছের মানুষ’ করে তুলতে তাঁর মেধা আর মননকে অতি সূক্ষ্মতার সঙ্গে ব্যবহার করেছেন।‘‘ওয়ান হান্ড্রেড ওয়ান পোয়েমস বাই রবীন্দ্রনাথ টেগর-(১৯৬৬), ‘টেগোরস-কোয়েস্ট’-(১৯৮০), ‘পথের শেষ কোথায়’ এবং ‘পূর্ব প্রকাশিত কয়েকটি প্রবন্ধ’-১৯৩৪-৬৫। প্রকাশকাল: ১৯৭৭। এই গ্রন্থগুলিতে আবু সয়ীদ আইয়ুবের সাহিত্য চেতনাবোধ উপলব্ধি তার সীমা-পরিসীমা কোথায় গিয়ে অতুচ্চ স্থানকে স্পর্শ করেছে তা বারবার ভেবে দেখতে হয়। উর্দু ছিল তাঁর মাতৃভাষা। স্বভাবতই তাঁর আগ্রহ ছিল নিখাদ। তিনি উর্দু সাহিত্যের অন্যতম শ্রেষ্ঠ ‘শায়র’-(শায়ের-ই-আজম) মির্জা আসাদুল্লাহ খান গালিবের গজল বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন। সেটির নাম- ‘গালিবের গজল থেকে’-(১৯৭৬)। মীর তকি মীরের কবিতাও তিনি অনুবাদ করেছেন। ১৯৮০ সালে প্রকাশিত হয়েছিল ‘ব্যক্তিগত ও নৈর্ব্যক্তিক’ এবং ‘Varieties of Experience’-(১৯৮০)। গ্রন্থ দুটো অসাধারণ ব্যক্তি নিরপেক্ষতার পরিচয় বহন করে। কিছু সংখ্যক বই তিনি সম্পাদনাও করেছিলেন: ‘আধুনিক বাংলা কবিতা’। এই গ্রন্থটি সম্পাদনা করেছিলেন হীরেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে (১৯৪৭)। ‘পঁচিশ বছরের প্রেমের কবিতা’ (১৯৬৩), অম্লান দত্তের সঙ্গে সম্পাদনা করেন ‘10 Years of Quest’ (১৯৬৬)।
পুরস্কার অর্জন : বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে তুলনারহিত অবদানের জন্য তিনি পেয়েছিলেন ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ (১৯৬৯), ‘সাহিত্য অকাদেমি’ (১৯৭৩), ‘দেশিকোত্তম’ (১৯৭১) (বিশ্বভারতী কর্তৃক প্রদত্ত) এবং ১৯৮০ সালে Tagore Research Institute ‘রবীন্দ্র তত্ত্বনিধি’ পুরস্কার প্রদানের মারফত। আবু সয়ীদ আইযুব সম্পর্কে অনুসন্ধিৎসু গবেষক মাহমুদ শাহ কুরেশি মন্তব্য করেছেন এইভাবে, তাঁর সারা জীবনের চর্চিত সাহিত্য নির্মাণগুলো ‘... Reveal the range of Ayyub’s literary thoughts’. ১৯৮২ সালের ২১ ডিসেম্বর, কলকাতায় আবু সয়ীদ আইয়ুব ইন্তেকাল করেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct