ভারতের প্রধান নির্বাচন ও নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সম্পদ অন্য আটটি জাতীয় দলের মিলিত সম্পদের দ্বিগুণের বেশি। লিখেছেন শুভজিৎ বাগচী।
ভারতের প্রধান নির্বাচন ও নির্বাচন সংস্কারবিষয়ক গবেষণাপ্রতিষ্ঠান অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস (এডিআর) এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারতের ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) সম্পদ অন্য আটটি জাতীয় দলের মিলিত সম্পদের দ্বিগুণের বেশি। এডিআর তাদের প্রতিবেদনটি সোমবার প্রকাশ করেছে। ২০০২ সাল থেকে ভারতের স্থানীয় এবং জাতীয় নির্বাচনের পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন বছরব্যাপী প্রকাশ করে এডিআর।এডিআরের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে বিজেপির সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৬ কোটি ৮১ লাখ ভারতীয় রুপি। এরপরই রয়েছে কংগ্রেস, তাদের মোট সম্পদ ৮০৫ কোটি ৬৮ লাখ রুপি। তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে সিপিআইএম (কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া মার্ক্সিস্ট), যাদের সম্পদের পরিমাণ ৭৩৫ কোটি ৭৭ লাখ রুপি। কংগ্রেস, সিপিআইএমসহ অন্যান্য প্রধান দল, যেমন উত্তর প্রদেশের বহুজন সমাজ পার্টি, তৃণমূল কংগ্রেস, ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি, সিপিআই এবং অন্যান্য দল (যারা গত আর্থিক বছরে জাতীয় দল হিসাবে স্বীকৃত ছিল) মিলিয়ে মোট সম্পদের পরিমাণ ২ হাজার ৭৮২ কোটি ৩৩ লাখ রুপি; অর্থাৎ সবার মিলিয়ে সম্পদ বিজেপির অর্ধেকের চেয়ে কম। এডিআরের প্রতিবেদনে যেসব দলের নাম বলা হয়েছে, তার মধ্যে সবচেয়ে দ্রুত সম্পদের পরিমাণ বেড়েছে তৃণমূলের। ২০২০-২১ আর্থিক বছরে ১৮২ কোটি ভারতীয় রুপি থেকে ২০২১-২২ সালে এই সম্পদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪৫৮ কোটি ১০ লাখ রুপিতে; অর্থাৎ বৃদ্ধির হার ১৫১। গত অর্থবছরে তৃণমূল কংগ্রেস জাতীয় দল হিসেবে স্বীকৃত ছিল। বিভিন্ন রাজ্যে নির্বাচনে হারের কারণে বর্তমানে তারা জাতীয় দলের স্বীকৃতি হারিয়েছে। চলতি বছরের গোড়ায় তৃণমূলের পাশাপাশি ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি এবং সিপিআইও জাতীয় দলের স্বীকৃতি হারিয়েছে। তবে এডিআরের সমীক্ষায় এদের জাতীয় দল হিসেবেই দেখানো হয়েছে। কারণ, সমীক্ষা করা হয়েছে গত দুই অর্থবছরে রাজনৈতিক দলের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে। কংগ্রেস ও সিপিআইএমের সম্পদও বেড়েছে। বড় দলগুলোর মধ্যে কেবল উত্তর প্রদেশে মায়াবতীর বহুজন সমাজ পার্টির সম্পদ প্রায় ৬ শতাংশ কমে গেছে। গত বিধানসভা ও লোকসভা নির্বাচনে মায়াবতীর দলের খারাপ ফল এর কারণ হতে পারে। মূলত তফসিলি উপজাতি-সমর্থিত দলটি বিভিন্ন সামাজিক গোষ্ঠীর মধ্যে তাদের সমর্থন হারাচ্ছে। বহুজন সমাজ পার্টির ভোট টেনে নিচ্ছে প্রধানত বিজেপি এবং কিছু আঞ্চলিক দল। বিজেপির সম্পদের পরিমাণ উত্তরোত্তর বাড়ছে। ২০২০-২১ সালে ৪ হাজার ৯৯০ কোটি ১৯ লাখ রুপি থেকে বিজেপির সম্পদ ২১ শতাংশ বেড়ে ২০২১-২২ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ৪৬ কোটি ৮১ লাখ রুপি। এই বাড়তি সম্পদ হাতে থাকার লাভ বিজেপি যে আগামী বছরের লোকসভা নির্বাচনে পাবে, তা নিয়ে নির্বাচনী সম্পদ বিশ্লেষকদের মধ্যে মতভেদ নেই। ২০২০-২১ সালে ভারতে যে আটটি জাতীয় দল নথিভুক্ত ছিল, তাদের সম্পদ ৭ হাজার ২৯৭ কোটি রুপি থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ৮২৯ কোটি রুপিতে।
অস্বচ্ছতার সূত্র ও আশঙ্কা
এডিআর রাজনৈতিক দলগুলোর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তাদের বিশ্লেষণ চালিয়েছে। কিন্তু দলগুলোর দেওয়া তথ্যে অসামঞ্জস্য ও গরমিল আছে কি না, তা এডিআর খতিয়ে দেখেনি। এখানেই একটা অস্বচ্ছতার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এডিআর তাদের প্রতিবেদনে সে কথা উল্লেখও করেছে।প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, দান হিসেবে প্রাপ্ত স্থায়ী সম্পদের বিবরণ দেওয়া উচিত। যেমন সম্পদের মূল মূল্য, কোনো সংযোজন বা ছাড়, সম্পদের (বার্ষিক) অবমূল্যায়ন, নির্মাণের খরচ ইত্যাদি। রাজনৈতিক দল যে স্থায়ী সম্পদ ক্রয় করছে, তার বিবরণও ঘোষণা করা উচিত, যা সব জাতীয় দল ঘোষণা করেনি। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের উচিত, তারা যেসব সূত্র থেকে ঋণ দিচ্ছে, সেগুলো সম্পর্কে পূর্ণাঙ্গ তথ্য দেওয়া। কোথাও তারা যদি টাকা রাখে বা কাউকে ঋণ দেয়, সে সম্পর্কেও তথ্য প্রকাশ্যে আনা, যা সব দল করছে না বলে জানিয়েছে এডিআর। ফলে জাতীয় নির্বাচনের মোটামুটি ছয় মাস আগে ভারতের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে কত অর্থ আছে বা কী পরিমাণ আছে, এ বিষয়ে ধোঁয়াশা রয়েই যাচ্ছে।
সৌ: প্র: আ:
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct