বিজয় বিনীত, বেনারস, আপনজন: উত্তরপ্রদেশ পুলিশ বেনারসে তবলিগি জামাতের প্রবেশ বন্ধ করে দিল। গত ২৭ আগস্ট শহরের কয়েকটি মসজিদে থাকা তবলিগ জামাতের দলকে পুলিশ শুধু বের করে দেয়নি, তাদেরকে সোজা রেলস্টেশনে পাঠিয়ে দেয়। ভবিষ্যতে বেনারসে না আসার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এদিকে আগামীতে জামায়াতের কোনো সভা-সমাবেশ বা অন্য কোনো অনুষ্ঠান না করার জন্য মসজিদের আলেম ও মুতাওয়ালিদের নোটিশ দিয়েছে বেনারসের কমিশনারেট পুলিশ। জানা গেছে, তবলিগ জামাতের ইজতেমা বেনারসের কয়েকটি নির্বাচিত মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। ২০২৩ সালের ২৭ আগস্ট আদমপুর থানা পুলিশ ওই এলাকার ভোজবাবার মসজিদে জামাতের উপস্থিতির খবর পায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের সবাইকে সেদিন রাতে মসজিদ থেকে বের করে ক্যান্টনমেন্ট রেলস্টেশনে নিয়ে যায়। নয়া সড়ক, নাদেসারসহ শহরের অনেক মসজিদে তবলিগ জামাতের বিরুদ্ধে অভিযান চালায় পুলিশ। যেসব মসজিদে জামাতিদের পাওয়া যায় তাদেরকে রেলস্টেশনে পাঠানো হয়। বেনারস কমিশনারেট পুলিশ ১৪৯ ধারায় সমস্ত মসজিদের আলেম এবং মুতওয়ালিদের নোটিশ জারি করেছে যেখানে তবলিগ জামাতের লোকেরা প্রায়শই জড়ো হয়। বেনারসের চিত্তনপুরার বাসিন্দা হাজী বশির আহমেদের ছেলে নাসিম আহমেদকে এমনই একটি নোটিশ জারি করেছেন আদমপুর থানার ইনচার্জ। ২০২৩ সালের ২৯ আগস্টের নোটিশে বলা হয়, ‘আপনার মসজিদে জামায়াতের কোনো সভা বা কর্মসূচি অনুষ্ঠিত করা যাবে না। আপনাকে কঠোরভাবে শান্তি ও শৃঙ্খলা বজায় রাখতে সহযোগিতা করার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে। কোনো অবস্থাতেই প্রশাসনের অনুমতি ছাড়া কোনো কর্মসূচি পালন করা যাবে না। যদি আপনার পক্ষ থেকে এ ধরনের কোনো সভা বা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয় অথবা আপনি এ ধরনের কোনো কর্মসূচিতে অংশ নেন, তাহলে নিয়ম অনুযায়ী আপনার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড বারাণসীতে তবলিগি জামাতের বিরুদ্ধে পুলিশের পদক্ষেপকে উদ্বেগজনক, বেআইনি এবং অসাংবিধানিক বলে অভিহিত করেছে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের মুখপাত্র ড. সৈয়দ কাসিম রসুল ইলিয়াস এক বিবৃতিতে বলেছেন, বারাণসী পুলিশ তবলিগি জামাতের সদস্যদের মসজিদ থেকে বের করে দিয়ে মসজিদের মুতাওয়াল্লিদের নোটিশ পাঠিয়েছে। তবলিগি জামাতের কাজকে নিষিদ্ধ করা অত্যন্ত অন্যায়, উদ্বেগজনক, অনৈতিক এবং অসাংবিধানিক। তবলিগি জামাত একটি ধর্মীয় দল যা মুসলমানদের ধর্ম শেখায়, তাদের নৈতিকতা ও চরিত্রের উন্নতি করে এবং তাদের সমস্ত অনুষ্ঠান মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। বোর্ডের মুখপাত্র আরও বলেন, তবলিগি জামাতের উপর কোনও নিষেধাজ্ঞা নেই, তাই মসজিদে অনুষ্ঠান পরিচালনা থেকে বাধা দেওয়া ভুল, অসাংবিধানিক এবং ধর্মীয় স্বাধীনতার মৌলিক অধিকারের পরিপন্থী। তিনি বলেন, একদিকে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সেইসব লোকদের টার্গেট করছে যারা ক্রমাগত মুসলমানদের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক ও বিষাক্ত বক্তৃতা দেয়, প্রকাশ্যে মুসলিমদের গণহত্যা ও মুসলিম নারীদের ধর্ষণের ঘোষণা দেয় এবং তাদের পোস্ট সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল করে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। অন্যদিকে যারা সাধারণ মুসলমানদের শান্তিপূর্ণ উপায়ে দ্বীনের শিক্ষা দেয় এবং তাদের চরিত্র গঠন করে তাদের হয়রানি করা হচ্ছে এবং তাদের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা হচ্ছে। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড রাজ্য সরকার এবং পুলিশকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার এবং তাবলিগী জামাতের লোকদের তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য দৃঢ়ভাবে অনুরোধ জানিয়েছে।
অন্যদিকে, আজাদ অধিকার সেনা বেনারসের মসজিদের আলেম এবং মুতাওয়াল্লিদের পুলিশ কর্তৃক জারি করা নোটিশটি গুরুত্বসহকারে নিয়েছে। সেনাবাহিনীর জাতীয় সভাপতি অমিতাভ ঠাকুর পুলিশের নোটিশকে অবৈধ আখ্যায়িত করে জাতীয় মানবাধিকার কমিশনে অভিযোগ পাঠিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ধর্মীয় জমায়েতের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রাথমিকভাবে সংবিধানের ২৫ ও ২৬ অনুচ্ছেদের সরাসরি লঙ্ঘন বলে মনে হচ্ছে। তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনকে অবিলম্বে এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে এবং আইন বিরোধী আদেশ দেওয়া পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। আজাদ অধিকার সেনার মুখপাত্র ড. নূতন ঠাকুর বলেন, বেনারস পুলিশের নোটিশ ভারতীয় সংবিধানের লঙ্ঘন। ভারতে ধর্মীয় কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ নয়। এই ধরনের ক্ষেত্রে পুলিশ সিআরপিসির ১৪৫ ধারায় নোটিশ জারি করতে পারে না। বেনারসের প্রায় সব মসজিদের ইমাম ও মুতাওয়াল্লিদের নোটিশ জারি করা হয়েছে, যা একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের লোকদের ভয় দেখানোর কাজ হিসাবে বিবেচিত হতে পারে। বেনারস পুলিশ যে ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে তা ন্যায়সঙ্গত নয়, কারণ জামায়াতের লোকেরা দেশবিরোধী কাজ করছিল না, বরং ধর্ম প্রচার করছিল। মসজিদের আলেম এবং মুতাওয়ালিদের সিআরপিসির ১৪৯ ধারায় নোটিশ জারির বিষয়টি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বেনারসের জ্ঞানবাপি মসজিদের তত্ত্বাবধানকারী আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এম এম ইয়াসিন বলেন, বেনারস কমিশনারেট পুলিশ তবলিগ জামাতের সদস্যদের বেশ কয়েকটি মসজিদ থেকে উচ্ছেদ করেছে এবং তাদের রাজ্য ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। পরে পুলিশ মসজিদের আলেমদের নোটিশ জারি করে। পুলিশ যা করেছে, তারা ভুল করেছে। তাদের কাজ আইন ও সংবিধানের পরিপন্থী।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct