আপনজন ডেস্ক: আগামী ১৮ সেপ্টেম্বর সংসদের বিশেষ অধিবেশন শুরু হওয়ার ১২দিন আগে বুধবার কংগ্রেস সাংসদ সোনিয়া গান্ধি প্রধানমন্ত্রীকে একটি চিঠি লিখেছেন। ওই চিঠিতে সোনিয়া ৯টি বিষয় তুলে ধরেন। সেসব বিষয়ের মধ্যে যেমন রয়েছে মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, কৃষকদের সমস্যা ও মণিপুর পরিস্থিতি, তেমনই রয়েছে আদানি প্রসঙ্গ। লাদাখে চিনের সঙ্গে সীমান্ত প্রসঙ্গ নিয়েও আলোচনার দাবি জানিয়েছেন তিনি। কংগ্রেস সংসদীয় দলের প্যাডে লেখা ওই চিঠিতে কংগ্রেস পার্লামেন্টারি পার্টির (সিপিপি) সভাপতি সোনিয়া গান্ধি ২৪টি দলের তরফে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে এই চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতে অভিযোগ করেছেন, কেন্দ্রীয় সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী গত সপ্তাহে ১৮থেকে ২২ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সংসদের পাঁচ দিনের বিশেষ অধিবেশন ডেকেছেন। অধিবেশনে কী কী বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে, তার বিন্দুবিসর্গও কারও জানা নেই। সবাই অন্ধকারে। সোনিয়া লিখেছেন, তারা অবশ্যই ওই বিশেষ অধিবেশনে যোগ দেবেন। কারণ, দেশের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো উত্থাপনের সুযোগ নিতে পারবেন। এর পরেই তিনি মোট ৯টি বিষয়ের উল্লেখ করে বলেছেন, ‘আশা করি, নির্দিষ্ট নিয়মের আওতায় এসব বিষয় আলোচনার অনুমতি দেওয়া হবে।’ ৯টি বিষয়ের প্রথমটিই হচ্ছে দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতি। মূল্যবৃদ্ধি, বেকারত্ব, বৈষম্য বৃদ্ধিসহ ছোট ও মাঝারি শিল্পকে যে কঠিন পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে, সেসব নিয়ে আলোচনার আগ্রহ তিনি দেখিয়েছেন। ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য দেওয়ার বিষয়ে সরকারের দেওয়া প্রতিশ্রুতি ও কৃষকদের দাবি নিয়ে আলোচনার প্রয়োজনীয়তার কথা লিখে তিনি বলেছেন, আদানি গোষ্ঠীর দুর্নীতির তদন্তে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠনের বিষয়টিও আলোচিত হওয়া দরকার। সংসদের বর্ষাকালীন অধিবেশনে মণিপুর পরিস্থিতি নিয়ে বিরোধীদের দাবি অনুযায়ী আলোচনায় সরকার রাজি হয়নি। গোটা অধিবেশনই তা নিয়ে ভন্ডুল হয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রীর নীরবতা ভাঙতে বাধ্য হয়ে বিরোধীদের অনাস্থা প্রস্তাব আনতে হয়েছিল। মণিপুর পরিস্থিতিও তাই আলোচনার জন্য চিহ্নিত করেছেন সোনিয়া। পাশাপাশি আলোচনা করতে চেয়েছেন হরিয়ানাসহ বিভিন্ন রাজ্যে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা সৃষ্টি নিয়ে। ভারতের জমি দখল করে সীমান্তে উত্তেজনা জিইয়ে রেখেছে চিন। অরুণাচল প্রদেশ নিয়ে চিনের দাবি ভারতের সার্বভৌমত্বকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এ বিষয় নিয়েও তিনি আলোচনার দাবি জানিয়েছেন। চীনের আগ্রাসী ভূমিকা নিয়ে সংসদে কোনো আলোচনার অনুমতি সরকার আজ পর্যন্ত দেয়নি।
এ ছাড়া জাত গণনা, কেন্দ্র–রাজ্য সম্পর্কহানি এবং কোনো কোনো রাজ্যের বন্যা ও খরা পরিস্থিতি নিয়েও সোনিয়া আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীকে তিনি বলেছেন, গঠনমূলক সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে সরকার এই দাবি স্বীকার করে সংসদের বিশেষ অধিবেশনে আলোচনায় আগ্রহী হোক।কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক জয়রাম রমেশ এআইসিসি সদর দফতরে সাংবাদিকদের বলেন, এই প্রথম কোনও এজেন্ডা নিয়ে আলোচনা বা তালিকাভুক্ত করা হয়নি। রমেশ বলেন, আমরা চাই আসন্ন অধিবেশন গঠনমূলক হোক এবং স্ট্র্যাটেজি গ্রুপের বৈঠকে এবং ইন্ডিয়া জোটের দলগুলির বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আগে যখনই বিশেষ অধিবেশন ডাকা হত, দলগুলিকে বিষয়টি জানানো হত। কিন্তু এবার তা হয়নি। আমরা চাই সামাজিক সমস্যা, অর্থনৈতিক সমস্যা, পররাষ্ট্রনীতির মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা হোক। আমরা শুধু মোদী চালিসার জন্য বসে থাকব না। আমরা প্রতিটি বাড়িতে সমস্যা উত্থাপন করি, কিন্তু আমাদের সুযোগ দেওয়া হয় না। আমরা এই বিশেষ অধিবেশনে আমাদের সমস্যা উপস্থাপন করতে চাই।অন্যদিকে, মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মল্লিকার্জুন খার্গের বাড়িতে বৈঠক করেন ইন্ডিয়া জোটের লোকসভা ও রাজ্যসভার সাংসদরা। এই বৈঠকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে যে ইন্ডিয়া জোটে অন্তর্ভুক্ত ২৮টি দলের মধ্যে ২৪টি দল ১৮ সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হওয়া সংসদের বিশেষ অধিবেশনে অংশ নেবে।নতুন সংসদ ভবনে গণেশ চতুর্থীর দিন (১৯ সেপ্টেম্বর) থেকে বিশেষ অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। নতুন সংসদ ভবনে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। সংবাদ সংস্থা এএনআই জানিয়েছে, প্রথম দিনের কাজ পুরোনো ভবনে হলেও দ্বিতীয় দিন থেকে সব সংসদ সদস্যরা বসবেন নতুন ভবনে।
কংগ্রেস সভাপতি খাড়গে বলেন, ‘প্রথমবারের মতো মোদি সরকার এজেন্ডা প্রকাশ না করে সংসদের বিশেষ অধিবেশন ডাকছে। কোনো বিরোধী দলকে পরামর্শ বা তথ্য দেওয়া হয়নি। এভাবে গণতন্ত্র চালানো যায় না। প্রতিদিন, মোদী সরকার মিডিয়াতে সম্ভাব্য এজেন্ডার একটি গল্প রোপণ করে, জনগণকে বোঝায় এমন সমস্যাগুলি থেকে মনোযোগ সরানোর জন্য একটি অজুহাত তৈরি করে। বিজেপি মুদ্রাস্ফীতি, বেকারত্ব, মণিপুর, চিনা দখল, সিএজি রিপোর্ট, কেলেঙ্কারি ইত্যাদি বিষয় থেকে মনোযোগ সরিয়ে মানুষকে প্রতারিত করতে চায়। ৫ দিনব্যাপী সংসদের বিশেষ অধিবেশনে এসব প্রস্তাবের ওপর আলোচনা সম্ভব। সংসদের বিশেষ অধিবেশনে যৌথ অধিবেশনও ডাকা হবে না। পাঁচ দিনে ৪-৫টি প্রস্তাব আনা হবে, যা আলোচনা করে কণ্ঠভোটে পাস করা হবে। সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, উভয় কক্ষের আলোচনার জন্য বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে, তাই যৌথ অধিবেশন হবে না। যৌথ অধিবেশন হলে নারী সংরক্ষণ বিল বা ‘ওয়ান নেশন ওয়ান ইলেকশন’-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ কোনো অমীমাংসিত বিল পেশ করার সম্ভাবনা থাকত। সূত্র জানাচ্ছে, জি-২০, চন্দ্রযান-৩-এর সফল অবতরণ, দেশের তৃতীয় অর্থনৈতিক শক্তি হয়ে ওঠা এবং ভারতের পরিবর্তে ভারতকে ব্যবহার করে সরকার একটি প্রস্তাব পেশ করে আলোচনার পর তা পাস করতে পারে। ইউনিফর্ম সিভিল কোড সংক্রান্ত একটি প্রস্তাবও সরকার আনতে পারে। তবে বিশেষ অধিবেশনের আলোচ্যসূচি এখনো প্রকাশ করা হয়নি। কেন্দ্রীয় সরকার সম্প্রতি দেশে একযোগে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা খতিয়ে দেখতে এবং সুপারিশ করার জন্য একটি আট সদস্যের কমিটি গঠন করেছে। যার সভাপতিত্ব করছেন প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ। লোকসভার বিরোধী দলের নেতা অধীর রঞ্জন চৌধুরী কমিটিতে যোগ দিতে অস্বীকার করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, রাজ্যসভার প্রাক্তন বিরোধী নেতা গুলাম নবি আজাদ, প্রাক্তন অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান এন কে সিং, লোকসভার প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সুভাষ সি কাশ্যপ, সিনিয়র অ্যাডভোকেট হরিশ সালভে এবং প্রাক্তন মুখ্য ভিজিল্যান্স কমিশনার সঞ্জয় কোঠারি অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct