আপনজন ডেস্ক: কয়েক দিন আগে রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের (আরএসএস) প্রধান মোহন ভাগবত বলেছিলেন, দেশে সব সরকারি কাজে ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটির ব্যবহার বন্ধ হওয়া দরকার। তার বদলে ব্যবহার করা উচিত ‘ভারত’। সেই মন্তব্যের রেশ কাটতে না কাটতেই এবার ‘ইন্ডিয়া’-র পরিবর্তে দেশের নাম ‘ভারত’ ব্যবহার করা নিয়ে দেশজুড়ে ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়েছে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর পাঠানো চিঠির বদৌলতে। আগামী ৯-১০ সেপ্টেম্বর দিল্লির প্রগতি ময়দানে জি–২০ শীর্ষ সম্মেলন হবে। সেই সম্মেলন উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মুর্মু বিদেশি অতিথিদের সম্মানে ৯ সেপ্টেম্বর নৈশভোজের আয়োজন করেছেন। ‘ভারত মন্ডপম’–এ সেই আয়োজনে যোগ দিতে রাষ্ট্রপতি যে চিঠি দিয়েছেন, তাতে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’র বদলে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’। চিরায়ত এই প্রথা থেকে আচমকা সরে আসার ফলে প্রশ্ন উঠেছে—তবে কি সংসদের বিশেষ অধিবেশনে বিরোধী জোটের মোকাবিলায় মোদি সরকার দেশের ‘ইন্ডিয়া’ নামটাই জলাঞ্জলি দিতে চলেছে?সরকারিভাবে এখনো কেউ এর কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি। সে জন্য জল্পনার অবসানও ঘটেনি; বরং রাজনৈতিক মহল ও সামাজিক মাধ্যমে মতামতের বন্যা বইছে। প্রবল জল্পনা, ১৮ থেকে ২২ সেপ্টেম্বর ভারতীয় সংসদের যে বিশেষ অধিবেশন ডাকা হয়েছে, সেখানেই সম্ভবত সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এ–সংক্রান্ত বিল পেশ করা হবে। ওই বিশেষ অধিবেশন কী কারণে, কী আলোচিত হবে—তা সরকারিভাবে এখনো সংসদ সদস্যদের জানানো হয়নি। ধারণা করা হচ্ছে, জি–২০ শীর্ষ সম্মেলন শেষ হলে তা জানানো হবে। রাষ্ট্রপতি ভবনের ইংরেজি আমন্ত্রণপত্রে এতকাল ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’ লেখা হতো। এবারই প্রথম ইন্ডিয়ার বদলে ইংরেজিতে লেখা হলো ‘ভারত’। সেই আমন্ত্রণপত্রের প্রতিলিপিজুড়ে কংগ্রেস মুখপাত্র জয়রাম রমেশ মঙ্গলবার ‘এক্স’ হ্যান্ডেল (সাবেক টুইটার) মারফত বললেন, ‘তা হলে যা শুনছিলাম, তা সত্যি। রাষ্ট্রপতি ভবন ৯ সেপ্টেম্বর নৈশভোজের যে আমন্ত্রণ জি–২০ নেতাদের পাঠিয়েছে, তাতে ‘প্রেসিডেন্ট অব ইন্ডিয়া’–এর বদলে লেখা হয়েছে ‘প্রেসিডেন্ট অব ভারত’। এরপর থেকে সংবিধানের ১ নম্বর অনুচ্ছেদ হয়তো এভাবে লেখা হবে, ‘ভারত, যা ছিল ইন্ডিয়া, রাজ্যসমূহের সমষ্টি।’ কিন্তু তা হলেও রাজ্যের সমষ্টির ওপর হামলা কমবে না।’ভারতের সংবিধানের ১ নম্বর অনুচ্ছেদে লেখা আছে, ‘ইন্ডিয়া, দ্যাট ইজ ভারত...।’ অর্থাৎ, যা ইন্ডিয়া তা–ই ভারত। মোদি সরকার ‘ইন্ডিয়া’ তুলে দিতে চাইলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে।পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমরা সবাই জানি ইন্ডিয়া হচ্ছে ভারত, কিন্তু বিশ্ব আমাদের ইন্ডিয়া নামেই চেনে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, হঠাৎ কী পরিবর্তন ঘটল যে দেশকে আমাদের ভারত বলা উচিত।
আম আদমি পার্টির নেতা রাঘব চাড্ডা সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখেন, জি-২০সম্মেলনের আমন্ত্রণপত্রে ভারতের রাষ্ট্রপতির পরিবর্তে রাষ্ট্রপতি লিখে নতুন বিতর্ক শুরু করেছে বিজেপি। বিজেপি কীভাবে ‘ইন্ডিয়া’কে ধ্বংস করতে পারে? দেশ কোনো রাজনৈতিক দলের নয়; এটি ১৩৫কোটি ভারতীয়দের অন্তর্গত। আমাদের জাতীয় পরিচয় বিজেপির ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় যা তারা তার ইচ্ছামতো পরিবর্তন করতে পারে।কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী সিদ্দারামাইয়া বলেছেন, আমাদের সংবিধানে স্পষ্ট লেখা আছে এটাই ‘কনস্টিটিউশন অফ ইন্ডিয়া’। ইন্ডিয়া শব্দটিকে গোটা বিশ্ব চিনেছে। আমি মনে করি না এটা পরিবর্তন করার দরকার আছে।জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টির (এনসিপি) সভাপতি শরদ পাওয়ার বলেছেন, দেশের নাম পরিবর্তন করার অধিকার কারও নেই।দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল জানতে চেয়েছেন, ইন্ডিয়া জোট যদি নাম বদলে ‘ভারত’ রাখে, তাহলে বিজেপি কি ভারতের নামও বদলে দেবে?তবে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান জাতীয় সংগীতের প্রথম দুই লাইন তুলে দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় বলেছেন, ভারত ভাগ্য বিধাতা, জয় হো।এই জল্পনা দানা বেঁধেছে যেদিন থেকে বিরোধীরা বিজেপির বিরুদ্ধাচরণে জোটের নাম রেখেছে ‘ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স’, ইংরেজি আদ্যক্ষর নিয়ে সংক্ষেপে যা ‘ইন্ডিয়া’। এই নামকরণ শুরু থেকেই বিজেপির অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। ‘ইন্ডিয়া’ শব্দটি সারা দেশে পরিচিত। বিরোধীরাও নিজেদের ‘ইন্ডিয়া’র প্রতিনিধি বলে জাহির করতে শুরু করে। বিব্রত বিজেপি কটাক্ষ করলেও বুঝতে পারছিল, বিরোধীরা ক্রমে লড়াইটা ‘ইন্ডিয়া’ বনাম বিজেপি জোট ‘এনডিএ’–তে পরিণত করতে চাইছে। সেটি তাদের অস্বস্তি বাড়াতে থাকে।প্রথমে বিজেপি নেতারা ‘ইন্ডিয়া’ উচ্চারণ না করে ‘আইএনডিআইএ’ বলতে থাকেন। কিন্তু তাতে লাভ হয় না। এরপর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি নিজেই ‘ইন্ডিয়া’ জোটকে কটাক্ষ করে বলেন, ব্রিটিশরা ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি তৈরি করে দেশে ঢুকে শাসক হয়েছিল। সন্ত্রাসবাদীদের সংগঠনেও ইন্ডিয়া আছে।’ পাশাপাশি তিনি মহাত্মা গান্ধীর ‘কুইট ইন্ডিয়া’ বা ভারত ছোড়ো আন্দোলনের উল্লেখ করে বলেন, ‘আমাদেরও মন্ত্র হলো, বিরোধীদের দুর্নীতি কুইট ইন্ডিয়া, পরিবারতন্ত্র কুইট ইন্ডিয়া’, তোষণনীতি কুইট ইন্ডিয়া।’ তিনি বলেছিলেন, এই ইন্ডিয়াকে ভারতছাড়া করলেই দেশ মুক্তি পাবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct