নায়ীমুল হক: আজ ৫ই সেপ্টেম্বর, শিক্ষক দিবস। আদর্শ শিক্ষক ড.সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ এর জন্মদিন স্মরণ করে পালিত হয় জাতীয় শিক্ষক দিবস। বিভিন্ন রকম সুবিধা বর্জিত তামিলনাড়ুর এক প্রত্যন্ত গ্রামে তাঁর জন্ম এবং সেখানেই বেড়ে ওঠা। পরিবারের আর্থিক অবস্থা ছিল বেশ অসচ্ছল। কিন্তু এসব কিছুই তাঁকে দমিয়ে রাখতে পারেনি। সেজন্যই তিনি আদর্শ, বিশেষ করে যাদের জীবন-পথ সেই অর্থে খুব মসৃণ নয়, তাদের কাছে। জীবনের চড়াই উৎরাই পেরিয়ে কাঙ্খিত লক্ষে কী করে পৌঁছতে হয়, তা তিনি প্রমাণ করতে পেরেছিলেন এবং দেখিয়েছিলেন একেবারে ছোটবেলা থেকেই। পারিবারিক আর্থিক অবস্থা প্রতিকূল ছিল, তাই প্রথম থেকেই তিনি ভেবে নিয়েছিলেন সরকারি বৃত্তি তাঁকে পেতেই হবে, যার থেকে পড়াশোনা করে এগিয়ে যেতে পারবেন তিনি। ঠিক হয়েছিলো-ও তাই। জীবনে কখনো দ্বিতীয় হন নি। দর্শন শাস্ত্রের প্রতি তাঁর ছিল এক অমোঘ আকর্ষণ। সেটাও আবার তৈরি হয়েছিল তাঁর এক নিকট আত্মীয়ের থেকে। বয়স তখন তাঁর মাত্র উনিশ-কুড়ি। তখনই তিনি লিখে ফেলেন এক গবেষণামূলক প্রবন্ধ। সেটা পাঠিয়েও দেন তখনকার সুবিখ্যাত অধ্যাপক আলফ্রেড জর্জ হগ এর নিকট। আলফ্রেড যে এই রচনা সরাসরি খারিজ করে দেবেন, সে বিষয়ে তাঁর কোন দ্বিধা ছিল না। কিন্তু ঘটনা ঘটলো একেবারেই বিপরীত। অধ্যাপক আলফ্রেড খুবই খুশি হলেন প্রবন্ধটি পড়ে এবং তিনি এটিকে প্রকাশ করার জন্য নির্বাচিত করলেন।
রাধাকৃষ্ণান বরাবরই ছিলেন কিছুটা ভাবুক-প্রকৃতির। তিনি ভাবতেন এই প্রকৃতির কথা, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের কথা। কিভাবে সৃষ্টি হল এই বিশাল নির্মাণ! জ্ঞান, বিজ্ঞান ও যুক্তির আলোকে তিনি সর্বদাই বুঝতে চাইতেন এ সমস্ত।
১৯০৯ সালে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণাণ মাদ্রাজ প্রেসিডেন্সি কলেজের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক হিসেবে নিযুক্ত হন। এরপর তিনি University of Mysore, University of Calcutta, University of Oxford, University of Chicago ও অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার কাজ করেন।
তিনি ছিলেন প্রথম ভারতীয় যিনি University of Oxford এ অধ্যাপনা করেন। University of Mysore এ অধ্যাপনাকালীন তিনি বেশকিছু পত্রিকা লেখেন – The Quest, Journal of Philosophy এবং International Journal of Ethics.
১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীন হওয়ার পর (১৯৫২ – ১৯৬২) তিনি ছিলেন স্বাধীন ভারতের প্রথম উপরাষ্ট্রপতি এবং ১৯৬২ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত ছিলেন দ্বিতীয় রাষ্ট্রপতি। ভারতরত্ন, নাইট সহ দেশ-বিদেশের বিভিন্ন উপাধিতে তিনি বহুবার ভূষিত হয়েছেন। ১৯৬২ সাল থেকে মহান এই মানুষটির জন্মদিন সারা দেশে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা শুরু হয়।
আসুন, আজ আমরা আর একবার শপথ গ্রহণ করি শিক্ষক হিসাবে পরবর্তী প্রজন্মের জন্য যেন আলোকিত সেই সব জীবন অনুসরণে কিছু আমরাও দিয়ে যেতে পারি।
-------------------------
নায়ীমুল হক, শিক্ষক, হরিনাভি ডিভিএএস হাই স্কুল
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct