আপনজন ডেস্ক: হরিয়ানার নূহ জেলায় গত ৩১ জুলাই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ব্রজমণ্ডল যাত্রাকে কেন্দ্র করে সংহিংসতার পর হরিয়ানা প্রশাসন বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয় একের পর এক বাড়ি। সেই ঘটনার প্রায় এক মাস পরে হিন্দি দৈনিক ভাস্কর-এর সাংবাদিক শিবাঙ্গ সাক্সেনা-র অন্তর্তদন্তমূলক রিপোর্ট ‘আপনজন’-এ তুলে ধরা হল। একই আদেশে বলা হয়েছে, এসব ব্যক্তিকে সরকারি জমি দখলের প্রমাণ পাওয়া গেলেও তাদের অধিকার আদায়ের পথ রয়েছে। এই লোকদের অন্য কোথাও স্থানান্তর করার জন্য যথেষ্ট সময় দেওয়া হবে। নাগিনা গ্রামে ১৭টি বাড়ি ভেঙে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে প্রিয়দর্শিনী হাউজিং স্কিমে দুটি বাড়ি পাওয়া গেছে। এই প্রকল্পের অধীনে সরকার একটি বাড়ি তৈরির জন্য ৯০ হাজার টাকা প্রদান করে। ২০১১ সালে বাড়িটি নির্মাণের টাকা পান আকবরী বেগম। তাঁর প্রতিবেশী আবদুলও এই প্রকল্পের সুবিধা পেয়েছেন। প্রশাসন তাদের দুটি বাড়িই ভেঙে দিয়েছে। বাড়ি ভাঙার কারণ বলা হয়েছে পঞ্চায়েতের জমি দখল করা।
আকবরী বেগম বলেছেন যে তিনি ২০১৭ সালে একটি নোটিশ পেয়েছিলেন। নোটিশে লেখা ছিল, সরকারি জমিতে বাড়িটি নির্মিত। এরপর সাব ডিভিশনাল ম্যাজিস্ট্রেটকে চিঠিও দিয়েছিলেন সরপঞ্চ। এরপর আর কোনো নোটিশ পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে দৈনিক ভাস্কর নুহ জেলা প্রশাসক ধীরেন্দ্র খাড়গাতার সঙ্গে কথা বলেছে। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়টি এখনো আদালতে চলছে। তাই কিছু বলতে পারছি না। পুলিশ নূহ সহিংসতায় এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে। তবে স্থানীয় লোকজন বলছেন, এর চেয়েও বেশি গ্রেপ্তার হয়েছে। সহিংসতার সাথে সম্পর্কিত বেশিরভাগ এফআইআর আইপিসি ধারা 148, 149, 323, 341, 427, 379, অস্ত্র আইন এবং 506 এর অধীনে নথিভুক্ত করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত সুবেদার সুরেন্দ্র সিংয়ের পক্ষে সহিংসতার একটি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে। তিনি হোদলের সাঙ্গেল গ্রামে থাকেন। ৩১ জুলাই সংঘটিত সহিংসতা সম্পর্কে সুরেন্দ্র সিং বলেন, ‘আমি পালওয়ালে সেনা ক্যান্টিনে কাজ করতাম। সেদিন গাড়িতে করে বাড়ি ফিরছিলাম। নূহ-হোদল সড়কে ভিড় ছিল। আমি ভেবেছিলাম একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। ‘তখন কয়েকজন গাড়ির সামনে এসে আমার ওপর হামলা চালায়। সবার হাতে লাঠি ছিল। আমার গাড়ির জানালা ভেঙে দিয়েছে। আমি আতঙ্কিত ছিলাম. সেখান থেকে প্রায় ২০০ মিটার দূরে জয়সিংপুর পুলিশ পোস্ট। সেখানে কোনো কর্মকর্তা বা পুলিশ সদস্য ছিল না। সেখানে নূহের মধ্যে দাঙ্গা হওয়ার কথা জানা গেল। সহিংসতার সময় উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের নামে অনেক এফআইআর লেখা হয়েছে। আমরা এই পুলিশ সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করেছি, কিন্তু সবাই কথা বলতে রাজি হয়নি। আমরা এই এফআইআরগুলিতে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের চিহ্নিত করেছি এবং তাদের পরিবারের সাথে দেখা করেছি। এখানে থাকা হুরজার বাড়ির তিনজন কারাগারে। দুই ছেলে ২০ বছর বয়সী জুনায়েদ, ১৮ বছরের আদিল ও ২৪ বছরের জামাই মোহাম্মদ ইনামকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। ছোট ছেলে আদিল মেডিকেল পরীক্ষার NEET এর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল। হুরজা বলেন, ‘রাস্তার বাইরে আমাদের একটা ছোট দোকান ছিল। এই দোকান ভাড়া নেওয়া হয়েছে। কোল্ড ড্রিংকস এবং চিপস বিক্রি করতে ব্যবহৃত হয়। তা থেকেই ছেলে-মেয়ের পড়াশোনা ও সংসারের খরচ মেটাত। ছেলেদের তুলে নিয়ে যাওয়ার পর পুলিশ আমার দোকানও ভেঙে দেয়। হুরজা বলেন, ‘আমার দুটি মেয়ে আছে, যাদের প্রত্যেকের একটি পা ভাঙা। স্বামী গত বছর মারা যান। এরপর থেকে ছেলে দুটি বাড়ি চালাচ্ছিল। পড়াশুনা করে সন্ধ্যা হলেই বাসায় আসতেন। সারাদিন বাড়িতে কোনো লোক ছিল না, তাই জামাই ইনাম বাড়িতে আসতেন। ৩১শে জুলাই দুই ছেলেই দোকানে বসে ছিলেন। জামাই ঘরে ঘুমাচ্ছিল। দাঙ্গার খবর পেয়ে ছেলে জুনায়েদ ও আদিল বাড়িতে এসেছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct