আপনজন ডেস্ক: হরিয়ানার নূহ জেলায় গত ৩১ জুলাই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ব্রজমণ্ডল যাত্রাকে কেন্দ্র করে সংহিংসতার পর হরিয়ানা প্রশাসন বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয় একের পর এক বাড়ি। সেই ঘটনার প্রায় এক মাস পরে হিন্দি দৈনিক ভাস্কর-এর সাংবাদিক শিবাঙ্গ সাক্সেনা-র অন্তর্তদন্তমূলক রিপোর্ট ‘আপনজন’-এ তুলে ধরা হল। মেডিকেল কলেজ থেকে নলহাদ মন্দিরের দিকে যাওয়ার সময় আমরা একটি ভাঙা ঘর দেখতে পেলাম। এই বাড়িটি আস মোহাম্মদের। ১৯৯৬ সাল থেকে তিনি তার সন্তান, ভাই ও মাকে নিয়ে এখানে বসবাস করছিলেন। ৪ আগস্ট আস মোহাম্মদের বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘২০০৯ সালে যখন মেডিকেল কলেজ তৈরি হয়, তখন ডেপুটি কালেক্টর বলেছিলেন, আপনার বাড়ি রাস্তা-পাহাড় থেকে দূরে, তাই সমস্যা নেই। তারপরও ঘর ভেঙেছে। এখন তাঁবুতে সংসার করছেন। মেডিকেল কলেজের সামনে চায়ের দোকান চালাতেন আস মোহাম্মদের ছেলে কাসিম। সেও ভেঙে পড়ে। আস মোহাম্মদ বলেন, আরিফের জমিতে আমার ছেলের দোকান ছিল। প্রতি মাসে চার হাজার টাকা ভাড়া দিতেন ছেলে। মেডিকেলের শিক্ষার্থীরা তার বাড়িতে চা খেতে আসতেন। তার দোকান ভাঙচুর করা হয়। সে কারো কাছ থেকে একটি কার্ট ধার করেছিল যাতে কিছু টাকা আসতে পারে। পুলিশ তাকেও সরিয়ে দেয়। নলহাদ গ্রামের পাহাড়ের মাঝে নির্মিত ২৬টি বাড়ি ভেঙে দিয়েছে প্রশাসন। এই জায়গাটা গ্রামের অনেক দূরে। এক অংশে ভাই জুবের, ওয়াহিদ ও বোন মনীষাকে নিয়ে থাকেন সাহুন। এই পরিবারের ১০টি ঘর ছিল। সাহুন বলেন, ‘আমার বাবাও এই জমিতে থাকতেন। আমরাই একমাত্র মানুষ যারা ৩০ বছর ধরে এখানে বাস করছি। সাহুন একটি নোটিশ দেখান, যা তাকে বাড়িটি ভাঙার কিছুক্ষণ আগে প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেওয়া হয়েছিল। ৪ আগস্ট দেওয়া এই নোটিশে ৩০ জুলাই তারিখ লেখা আছে। সাহুন বলেন, ‘কিছু লোক এসে নোটিশ সাঁটিয়ে চলে গেছে। তারা জমি খালি করার জন্য ৭ দিন সময় আছে বলে চলে যান। বাড়ি ভাঙার কারণে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরা। এখানে বসবাসকারী শাহিনা বলেন, সহিংসতার পর গ্রামের সব পুরুষ বাড়ি থেকে পালিয়ে গেছে। একা বাজারে যান এবং সন্ধ্যায় ফেরার সময় ভয় পান। ২০ দিন থেকে রেশন নেই। প্রতিবেশীরা খাবার দিলে আমরা খাই। শাহিনার সঙ্গে দাঁড়িয়ে থাকা বাসকার বলেন, গোসল আর টয়লেটের জায়গা নেই। অন্ধকার হয়ে যায়, আমরা পাহাড়ে গিয়ে গোসল করি। তারপরও কেউ দেখে ফেলতে পারে এমন আশঙ্কা রয়েছে। পাহাড়ের অন্য অংশে ছয়টি বাড়ি ভেঙে পড়েছে। এর মধ্যে একটি বাড়ি মেহরামের। স্বামী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকেন। মেহরাম বলেন, ‘আমাদের সব জিনিসপত্র, খাবারের জিনিসপত্র ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়ে গেছে। শিশুরা সারাদিন ক্ষুধার জ্বালায় কান্নাকাটি করে। ৬ আগস্ট ফিরোজপুর ঝিরকায় শতাধিক ঘরবাড়ি ভেঙে ফেলা হয়। একটি বাড়ি মহেন্দ্র কুমারের। মহেন্দ্র ৩ কিমি দূরে নলহাদ শিব মন্দিরে ঝাড়ুদারের কাজ করেন। তারা সকাল ৬টায় মন্দিরে যায়। এই কাজের জন্য তিনি প্রতি মাসে ৮,৫০০ টাকা পান। মহেন্দ্র বলেন, ‘আমার একটা দুই রুমের বাড়ি ছিল। বাড়ি ভাঙার আগে আমাদের কোনো নোটিশ দেওয়া হয়নি। কয়েকদিন পর একজন মাওলানা এসে সবাইকে তাঁবুর কাপড় দিলেন। তারপর থেকে আমরা তাঁবুতে বসবাস করছি। হিতরাম সাইনি মহেন্দ্রর বাড়ি থেকে কিছু দূরে থাকেন। তার ঘরও ভাঙা। এ নিয়ে আদালতে মামলা চলছিল। হিতরাম মামলার কাগজপত্রও দেখান। তিনি বলেন, ‘২০২০ সালের ১৫ ডিসেম্বর পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্ট তার রায়ে বলেছিল যে এই লোকেরা এখানে ৪০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছে। জমির জন্য টাকাও দিয়েছেন। নূহ-মেওয়াতের ডেপুটি কমিশনার এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। কলোনির ১৮ জনের বাড়ি এই আদেশে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আমি ছাড়াও মামচাঁদ, জাকির হুসেন, রাজেন্দ্র, বাবলি কুমার, হামিদা, কৌশল্যা, বাবু রাম ও রশিদের নাম ছিল।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct