পেনশন
শংকর সাহা
অতীন্দ্রের প্রায় মনে পড়ে সেই স্কুল জীবনের কথা। সেই স্কুলের মাঠ, ক্লাসরুম, স্যরেদের বকুনি আবার আদর করে কাছে টেনে নেওয়া সব যেন তার কাছে জীবন্ত বলে মনে হয়।স্কুলের কথা উঠলেই অতীন্দ্রের সোমনাথ স্যরের কথা মনে পড়ে। বডড ভালো মানুষ ছিলেন তিনি। সকলকে এমন ভাবে হাতে ধরে অঙক শেখাতেন যেন পাহাড় সমান কঠিন অঙ্কও সহজ মনে হতো সকলের কাছে।দেখতে দেখতে কেটে গেছে ত্রিশটি বছর। আজ সেই ছোট্ট অতীন্দ্র রাষ্ট্রয়তব ব্যাঙ্কের ম্যানেজার। স্কুলের স্যরেদের আদর্শ গুলো আজও মাথায় নিয়ে রেখেছে সে। সেদিন মাস পয়লা ব্যাঙ্কে বেশ ভিড়। অনেকেই টাকা তুলতে এসেছেন। ঘড়ির কাঁটায় তখন প্রায় বারোটা।অতীন্দ্র তার কেবিনে কাজ করছে। হঠাতই অতীন্দ্রের নজরে আসে টাকা তোলার লাইনে কোনো এক বৃদ্ধ প্রায় অনেকক্ষণ ধরে দাঁড়িয়ে আছেন। শীর্ণ চেহারা। মুখটিও পরিষ্কার দেখতে পাচ্ছে না সে। বার বার তিনি কাউন্টারে এসে কিছু একটি বিষয়ে অনুরোধ করছেন।ব্যাঙ্কের অন্য এক কর্মীর কাছ থেকে অতীন্দ্র জানতে পারে, বৃদ্ধটির আজ টাকার খুব দরকার। কিন্তু কিছু একটি সমস্যার জন্যে টাকাটি তুলতে পারছেন না। অতীন্দ্র তার কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। হঠাতৎ শীর্ণ দেহে সেই বৃদ্ধটি এসে বলে, ‘ স্যর, আমি আগের মাসেই টাকা তুলেছিলাম।কিন্তু এই মাসে টাকা তুলতে পারছিনা। ওনারা বলছেন আধার অপডেট নেই। সময় লাগবে কয়েকদিন। কিন্তু টাকা যে আজ ভীষণ প্রয়োজন। আমি ও আমার অসুস্থ স্ত্রীর ওষুধ নিতে হবে। একটু দেখুন না স্যর।’অতীন্দ্র মাথা তুলতেই অবাক হয়ে যায়। এ কাকে দেখছে সে! এ যে সোমনাথ স্যর। তার স্কুলের অঙকের শিক্ষক। অতীন্দ্র চেয়ার থেকে উঠে এসে সোমনাথবাবুকে প্রণাম করে বলে,’ স্যর, আমায় চিনতে পারছেন আমি অতীন্দ্র?’এতদিন পরে প্রিয় ছাত্রকে কাছে পেয়ে সোমনাথবাবুর চোখে জল বয়ে আসে। বেশ কিছুটা সময় তাদের কথাও হয়। সোমনাথবাবু বুঝতে পারেন তাহার আদর্শ অনেক ছাত্রের জীবনকে বদলে দিয়েছে। অতীন্দ্রকে দেখে, তার রুচিশীল ব্যবহার দেখে যেন আজ তাহার চোখ অশ্রুসিক্ত হয়ে ওঠে।সোমনাথ এক কর্মীকে ডেকে বিষয়টি দেখতে বলেন। আজই যেন তিনি পেনশনের টাকাটি তুলতে পারেন সেই বিষয়টি দেখতে বলেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct