এম ওয়াহেদুর রহমান: শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড, শিক্ষাই হলো দেশ ও জাতি গঠনের এক শক্তিশালী হাতিয়ার। আর এই শিক্ষার বিকাশে কিংবা মানুষের বৌদ্ধিক বিকাশে অগ্ৰণী ভূমিকা পালন করে থাকেন শিক্ষক সমাজ। একজন শিক্ষক অগনিত শিক্ষার্থীকে তাদের বৌদ্ধিক বিকাশে সহায়তা করেন। শিক্ষক হলেন একজন দার্শনিক, মানুষ গড়ার হাতিয়ার। শিক্ষক ছাত্রদের সর্বোত্তম স্বার্থের দেখাশুনা করেন সর্বোপরি সত্যিকার অর্থে সমাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। এই শিক্ষক সমাজই ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে তিলে তিলে গড়ে তুলতে পারেন। শিক্ষকরাই হলেন যে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মূল ভিত্তি। একজন শিক্ষক হলেন আদর্শ মানুষ , অভিভাবক, গাইড, পরামর্শদাতা, মনোবিজ্ঞানী তথা সমাজবিজ্ঞানী। কিন্ত এই শিক্ষকদের সেবার স্বীকৃতি ও প্রশংসা করার দায়িত্ব ছাত্রসমাজের বিশেষ করে আমাদের। বিশ্ব শিক্ষক দিবস কিংবা শিক্ষক দিবস কেবলমাত্র একটি দিবস নয়। এই দিনটিতে শিক্ষক সমাজ তাদের অবদান সম্পর্কে অন্যের মূল্যায়ন ও অভিব্যক্তি জানার পাশাপাশি নিজের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হবেন এবং তার পালন নতুন করে সংকল্পবদ্ধ হবেন।
সমগ্ৰ বিশ্বে সবার জন্য জন্য মানসিক বিকাশের কারিগর হিসেবে নিয়োজিত শিক্ষক সমাজের মর্যাদা ও অধিকার রক্ষার প্রত্যয় নিয়ে ১৯৯৪ সাল থেকে প্রতি বছর ৫ অক্টোবর সারা বিশ্বে শিক্ষক দিবস উদযাপিত হয়ে আসছে। বিশ্ব মাঝে বিভিন্ন দেশ বিভিন্ন দিনে শিক্ষক দিবস উদযাপন করে থাকলেও বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তর গণতান্ত্রিক দেশ হিসেবে পরিচিত ভারতে ৫ সেপ্টেম্বর ড. সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণানের জন্ম দিবস টিকে শিক্ষক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। তবে অনেক দেশই জ্ঞান - বিজ্ঞান এগিয়েছে অনেক, অর্থনৈতিক ভাবে সমৃদ্ধশালী ও হয়েছে কিন্তু শিক্ষকদের শিক্ষার বিষয়টিকে সে ভাবে মূল্যায়ন করা হয় নি !
আজকের শিক্ষার্থী আগামী দিনের শিক্ষক , মানুষ গড়ার কারিগর। পৃথিবীর সবচেয়ে সম্মান ও মর্যাদাপূর্ণ পেশা হলো শিক্ষকতা। জাতি গড়ার কারিগরের উপাধিই শিক্ষক। তাই তো সবাই পথপ্রদর্শক, দর্শন তত্ত্বের একজন মস্ত বড় পন্ডিত বলে শিক্ষকদের শুধু শ্রদ্ধার পাত্র করে রাখেন। যাঁরা শিশুদের শিক্ষা দানে ব্রতী তাঁরা অভিভাবকদের থেকে ও অধিক সম্মানীয়। পিতা মাতা আমাদের জীবন দান করেন ঠিকই। শিক্ষকরাই সেই জীবন কে সুন্দর ভাবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেন। অথচ আজ সম্মানীয় রা স্বপ্নহীন বঞ্চনার লাগাম পরিহিত অ সম্মানে।
শিক্ষকতা একটা মহান অতিব গুরুত্বপূর্ণ পেশা। জাতি ও দেশোন্নয়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকদের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্ত সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষকদের উপর হামলা ও অপমানের ঘটনা আমাদের ব্যথিত করে। পাশাপাশি বর্তমানে শিক্ষকদের ও নৈতিক এবং আদর্শিক বিচ্যুতির বিষয় টি ও আমাদের সমানভাবে ব্যথিত করে। আমাদের ভূলে গেলে চলবে না যে, শিক্ষকতা পেশার যথাযথ মূল্যায়ন ও শিক্ষকদের মানোন্নয়ন ব্যতীত শিক্ষার সামগ্ৰিক উন্নয়ন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। শিক্ষকরাই জাতির প্রকৃত কর্ণধার। বর্তমান সময়ে ছাত্র শিক্ষকদের সম্পর্ক দিন দিন কেবলমাত্র ক্লাসরুম পর্যন্ত বিরাজমান। এর কারণ নানারকম সামাজিক অবক্ষয়, শিক্ষকের প্রতি ছাত্রদের বৈশ্বিক ভাব গড়ে উঠা। নানা রকম নেতিবাচক ধারণা ও শিক্ষকের অনীহা। শিক্ষকদের সর্বক্ষেত্রে মর্যাদা ও মূল্যায়ন করা জরুরি। শিক্ষকদের মূল্যায়ন ছাড়া সুশিক্ষিত সমাজ বিনির্মাণ করা সম্ভব নয়। অতি দুঃখের বিষয় সাম্প্রতিক সময়ে শিক্ষকদের প্রতি সহিংসতার খবর প্রায় পত্রপত্রিকায় লক্ষ্য করা যায় , যা জাতির জন্য আদৌ সুখবর নয়। শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষকের লাঞ্ছনার ঘটনাবলী সমাজ ও রাষ্ট্রে গভীর ক্ষতের বহিঃ প্রকাশ।
বর্তমান আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা আনুষ্ঠানিকতায় ভরপুর। এ প্রতাষ্ঠিনিক শিক্ষা ব্যবস্থা শিক্ষকদের কর্তব্য ও শিক্ষার্থীদের কৌতুহলের গতিকে করেছে সীমিত। শিক্ষকরা প্রায় অবহেলিত। তাই শিক্ষকদের কে এখন অনেক ক্ষেত্রেই অনৈতিক সমঝোতায় চলতে হয়। পরীক্ষায় অসদুপায় অবলম্বনে বাঁধা দিলে শিক্ষকদের লাঞ্ছিত হতে হয় উছশৃঙ্খল ছাত্রদের হাতে।এমাতাবস্থায় শিক্ষকরা ছাত্র ছাত্রীদের নিকট থেকে শ্রদ্ধা পাওয়ার আশা বিসর্জন দিতে বসেছেন।
দেশের যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠার প্রত্যয়ে শিক্ষকদের মর্যাদপূর্ণ অবস্থান সংহত করার কোন বিকল্প নেই।
সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ছাত্র- শিক্ষকের সম্পর্কে এসেছে আমূল পরিবর্তন।
বর্তমান সময়ে এই সম্পর্কে ধরেছে বড় চিড়। বাস্তবে ছাত্র- শিক্ষক সম্পর্কের অবনতির ফলে শিক্ষার ভিত্তি ও ক্রমশঃ নড়বড়ে হয়ে যাচ্ছে। শিক্ষা ও শাসন একই সূত্রে গ্ৰোথিত। শাসন ছাড়া শিক্ষা দানের ফলে শিক্ষার্থীদের মন থেকে লজ্জা- ভয় সবকিছুই দিন দিন মুছে যাচ্ছে। ফলে ছাত্র - শিক্ষকদের আন্তরিকতা, সম্মান ও শ্রদ্ধার সম্পর্ক বিনষ্ট হতে যাচ্ছে। তবে শাসনের নামে শিক্ষক কর্তৃক শিক্ষার্থীর উপর বর্বরোচিত আঘাত ও কাম্য নয়।
শিক্ষকরা বিভিন্ন ভাবে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। এমনকি শিক্ষার্থী কর্তৃক শিক্ষকরা শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত ও হত্যার শিকার হচ্ছেন। আগের মত ছাত্র- শিক্ষকের সম্পর্ক পারস্পরিক শ্রদ্ধা- স্নেহ কিংবা আন্তরিকতার মধ্যে আবদ্ধ নেই।
অথচ শিক্ষক মর্যাদায় বাবা- মায়ের তুল্য। সৎ ও আদর্শবান মানুষ হিসেবে আমদের গড়ে তোলার কারিগর শিক্ষক। তাঁরা হচ্ছেন শিক্ষা ব্যবস্থার মূল চালিকা শক্তি , জাতির আলোকবর্তিকা বাহী ও মানবজাতির ভবিষ্যতের রুপকার। আবহমান কাল ধরে ছাত্র শিক্ষকের মধুর সম্পর্ক ছিল।
কিন্ত সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্র শিক্ষকের সম্পর্কের ছেদ যেন বাড়িয়ে দিয়েছে উদ্বিগ্নতা। ছাত্র - শিক্ষকের সম্পর্ক আর আগের মতো নেই।ফলে বিঘ্নিত হচ্ছে আগামী প্রজন্মের হাতে গড়ে ওঠা উন্নত জাতি গঠনের স্বপ্ন। যাঁদের হাতে গড়ে ওঠবে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বপ্নিল ইমারত ,আজ তাঁরাই অধিকাংশ ক্ষেত্রেই মূল্যবোধের অবক্ষয়ের বেড়াজালে আবদ্ধ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct