হরিয়ানার নূহ জেলায় গত ৩১ জুলাই বিশ্ব হিন্দু পরিষদের ব্রজমণ্ডল যাত্রাকে কেন্দ্র করে সংহিংসতার পর হরিয়ানা প্রশাসন বুলডোজার দিয়ে ভেঙে দেয় একের পর এক বাড়ি। সেই ঘটনার প্রায় এক মাস পরে হিন্দি দৈনিক ভাস্কর-এর সাংবাদিক শিবাঙ্গ সাক্সেনা-র অন্তর্তদন্তমূলক রিপোর্ট ‘আপনজন’-এ তুলে ধরা হল।
হরিয়ানা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে ৬১টি এফআইআর নথিভুক্ত করা হয়েছে। সহিংসতার ঘটনায় ৩০০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৯৪ জন মুসলমান ও মাত্র ৬ জন হিন্দু। হিন্দুদের মধ্যে ৬ অভিযুক্তের সবাই জামিন পেয়েছেন। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট সিদ্ধার্থ দাহিয়া জানিয়েছিলেন ৩৮টি দোকান ভেঙে দেওয়া হয়েছে। দোকানিরা বলছেন, কোনো নোটিশ না দিয়েই আমাদের দোকানগুলো ভেঙে ফেলা হয়েছে। নূহের সহিংসতার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক ছিল না। ৪ আগস্ট সন্ধ্যায় কর্মকর্তারা এসে চার হাজার ৪০০ বর্গফুট জমিতে বুলডোজার চালান।
আব্দুর রশিদ ওরফে নবাব বলেন, আমাদের এখানে ১২ একর জমি আছে। কিছু চাষ করা হয়। বাকিদের দোকান ছিল। কিছু দোকানের জন্য নোটিশ পাওয়া গিয়েছিল, কিন্তু আমরা ২০২২ সালে আদালত থেকে স্থগিতাদেশ নিয়েছিলাম।
একই সঙ্গে হাজী শরীফের প্রায় চারশ বর্গমিটার জমি রয়েছে। তিনি এটি ২০১১ সালে কিনেছিলেন। হাজী শরীফ বলেন, ‘সরকার বলেছে আমার ছয়টি দোকান ভাঙা হয়েছে, কিন্তু ১১টি দোকান ভাঙা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে কলকাতা কাঠি রোল, ভরদ্বাজ ধাবা, ডাঃ লাল পাথ ল্যাব, একটি সেলুন এবং পিজ্জার দোকান। এখানে আমার এক ছেলে কোচিং সেন্টার চালাত আর অন্য ছেলে সার্ভিস সেন্টার চালাত। ভাড়া থেকে প্রতি মাসে আয় হতো ৫৬ হাজার টাকা। অবশেষে কথা হয় মোহাম্মদ আরিফের সঙ্গে। ওই জমির সরকারি মানচিত্রও আরিফের কাছে রয়েছে। রাস্তার দুই পাশে তার প্রায় এক হাজার গজ জমি রয়েছে, যার ওপর ২২টিটি দোকান তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে শুক্লা বুক স্টোর, পাথ ল্যাব, এজাজ গ্রোসারি এবং এক্স-রে সেন্টার। বেসমেন্টে ইরফান ফাস্ট ফুড, ইরশাদ মানি ট্রান্সফার, আকবর স্টোর এবং একটি আল্ট্রাসাউন্ড ক্লিনিক ছিল।
২০২৩ সালের জুলাই মাসে, আরিফের একটি দোকানে চলমান ডায়মন্ড ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কালেকশন সেন্টার শ্রম বিভাগ থেকে সার্টিফিকেট পায়। শ্রম দফতর ফেব্রুয়ারিতে অনিশ কালেকশন সেন্টারকে নিবন্ধন সনদ দিয়েছে। এ দুটি দোকানও ভেঙে ফেলা হয়েছে। এই জমিতে ২৫ বছর বয়সী মোহিতের এক্স-রে সেন্টার তৈরি হয়েছে। এই কেন্দ্রটি ভেঙে ফেলা হয়েছে।
মোহিত পালওয়ালের বাসিন্দা এবং প্রতিদিন ৩৫ কিলোমিটার দূরে এক্স-রে সেন্টারে আসতেন। দুই বছর আগে মোহাম্মদ আরিফের কাছ থেকে দোকানটি ভাড়া নিয়েছিলেন তিনি। কাজ ভালভাবে চলতে শুরু করেছে, তাই ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে পালওয়ালের বন্ধু করণ ভরদ্বাজকেও নুহকে ডাকা হয়েছিল।
মোহিত বলেন, ‘১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছিল, তাই আমরা বাড়িতে ছিলাম। আমি টিভিতে দেখলাম আমার এক্স-রে সেন্টার ভেঙে ফেলা হচ্ছে। আমার ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমার ৩ জনের স্টাফ ছিল। দোকানের সাথে তার কাজও শেষ।
রাস্তার বাম পাশে মোহাম্মদ হাজী শরীফের জমি খালি ছিল। মোহিতের বন্ধু করণ সেখানে একটি রেস্তোরাঁ খোলেন। ২৪ বছর বয়সী করণ বলেন, “আমি বন্ধুদের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা লোন নিয়ে গত বছরের সেপ্টেম্বরে ভরদ্বাজ রেস্তোরাঁ এবং ফাস্ট ফুড শুরু করি। এ জন্য আমি হাজী শরীফকে প্রতি মাসে ২৩ হাজার টাকা ভাড়া দিতাম।
(চলবে)
All Rights Reserved © Copyright 2025 | Design & Developed by Webguys Direct