আপনজন ডেস্ক: তীব্র নাক ডাকা, ঘুমের মধ্যে দমবন্ধ, ‘স্লিপ অ্যাপনিয়া’ বাড়ায় হৃদরোগের ঝুঁকি। ঘুমানোর সময় অনেকেই নাক ডাকেন। নাক ডাকলে সবচেয়ে অসুবিধায় পরে পাশে ঘুমানো মানুষটি। ঘুমের ব্যাঘাত কতজনই বা মেনে নিতে পারে। তবে বেশ কিছু কারণে মানুষ নাক ডাকে। নাকে কোনও ধরনের ব্লক থাকলে, নাকের হাড়ের কোনও সমস্যা থাকলে, অতিরিক্ত ওজন বেড়ে গেলে, ঠান্ডা লাগলে ইত্যাদি।
মধ্যবয়সীদের মধ্যে ৪০ শতাংশ পুরুষ ও ২০ শতাংশ নারী ঘুমের মধ্যে নাক ডাকেন। সমীক্ষার রিপোর্ট বলছে, গড়ে প্রতি দু’জন ব্যক্তির মধ্যে একজন নাক ডাকেন। দীর্ঘ দিনের নাক ডাকার সমস্যায় হৃদপিণ্ডের ডান ও বাম দিকের ভেন্ট্রিকুলারের মারাত্মক ক্ষতি হয়। যদি ফ্লুতে কাবু হতে না চানযদি ফ্লুতে কাবু হতে না চান
কেন হয় এই সমস্যা?
ঘুমের মধ্যে শ্বাস নিতে না পারার সমস্যাই হল স্লিপ অ্যাপনিয়া। ওজন বেশি হলে ঘুমের সময়ে শ্বাসনালীর ওপর বেশি চাপ পড়ে ও শ্বাস-প্রক্রিয়া বাধা পায়। এতে মস্তিষ্ক ও শরীরের কোষগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহ হঠাৎই অনেকটা কমে যায়। ফলে স্লিপ অ্যাপনিয়ার প্রভাবে হঠাৎ শ্বাস-প্রক্রিয়া ব্যাঘাত ঘটে মৃত্যু হতে পারে।
মদ্যপান ও ধূমপানের মতো অভ্যাসের কারণেও এই অসুখের আশঙ্কা বাড়ে। আবার অনেকেই ঘুম ভালো হচ্ছে না ভেবে ঘুমের ওষুধ খান। তাতে ফলাফল বিপরীত হয়। এছাড়া উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিসের মতো রোগ থাকলেও এই রোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা আছে বুঝলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। চিকিৎসার সঙ্গে ওজন নিয়ন্ত্রণে মন দিন। খাওয়ার ঠিক পরেই শুয়ে না পড়ে একটু হাঁটাহাঁটি করুন। চিকিৎসকের পরামর্শ মতো প্রয়োজনীয় যোগাসন করুন। হজমের সমস্যা কমলে নাক ডাকার সমস্যা থেকে কিছুটা মুক্ত হওয়া যায়। শোয়ার ধরণ পরিবর্তন করুন। চিত হয়ে না শুয়ে এক পাশ ফিরে শুলে শ্বাসযন্ত্রের উপর চাপ কম পড়ে। স্লিপ অ্যাপনিয়ার সমস্যা থেকে রেহাই পেতে চিকিৎসকেরা কন্টিনিউয়াস পজিটিভ এয়ারওয়ে প্রেশার (সিপ্যাপ) মেশিন ব্যবহার করার পরামর্শ দেন।
নাক ডাকার সমস্যা দূর করতে
ঠাণ্ডা লাগার কারণে নাক বন্ধ থাকলে নাক ডাকার সমস্যা দেখা দেয়। সেক্ষেত্রে নাক পরিষ্কার করতে সাধারণ স্যালাইন নেজাল স্প্রে ব্যবহার করতে পারেন। তবে, যে কোনো নেজাল স্প্রে ব্যবহার করার আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া ভালো।
চিৎ হয়ে শোওয়ার কারণে পেছনের অংশে চাপ পড়ে শ্বাসনালীর পেশি সংকুচিত হয়ে যায়। এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পাশ ফিরে ঘুমান। কোলবালিশ ব্যবহার করতে পারেন ঘুমানোর সময়। মোটা হয়ে গেলেও নাক ডাকার সমস্যা বাড়ে। সেক্ষেত্রে সঠিক ডায়েট ও শরীরচর্চার মাধ্যমে অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলুন।
ঘুমানোর আগে কয়েক ফোটা মেন্থল অয়েল ম্যাসাজ করে নিন নাকের আশেপাশে। এতে নাক বন্ধজনিত সমস্যা থেকে মুক্তি মিলবে কিছুটা। নাক ডাকার প্রবণতা বেশি দেখা যায় ধূমপানকারীদের মধ্যে। যেকোনো ধরনের নেশাজাতীয় দ্রব্য গ্রহণের অভ্যাস থাকলে তা দ্রুত ত্যাগ করুন। উঁচু বালিশে মাথা রেখে ঘুমালেও অনেক সময় নাক ডাকা বন্ধ হয়। মেডিটেশন বা ধ্যান শারীরিক ও মানসিক বিভিন্ন সমস্যার অন্যতম সমাধান। ধ্যানের মাধ্যমে আপনার অজানা অনেক সমস্যার সমাধানও হতে পারে। হয়তো এর মাধ্যমে আপনি নাক ডাকা থেকেও মুক্তি পেতে পারেন। নাক বন্ধ থাকার জন্যও নাক ডাকার সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্যই অনেকে যারা কখনোই নাক ডাকেন না, তারাও নাক ডাকছেন বলে ঘরের লোকজন জানান। ঠান্ডাজনিত কারণে আপনার নাক বন্ধ হয়ে থাকলে শোওয়ার আগে গরম জলর ভাপ নিয়ে যথাসম্ভব নাক পরিষ্কার করে ফেলুন।
এছাড়া প্রাকৃতিক কিছু উপাদান যেমন এলাচ, হলুদ, মধু, ঘি এবং অলিভ অয়েল এগুলো খেলেও নাক ডাকাসহ শরীরের নানা সমস্যার সমাধান মিলতে পারে, তবে এগুলো কী পরিমাণে খাবেন বা খাবেন কি না, সে বিষয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া ভালো।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct