আপনজন ডেস্ক: প্রায় তিন মাস আগে বরেলিতে দু’জন মুসলিম যাত্রীকে নামাজ পড়তে দেওয়ার জন্য দিল্লিগামী একটি বাস থামানোর অভিযোগে চাকরি হারানো উত্তরপ্রদেশ রাজ্য সড়ক পরিবহন নিগমের (ইউপিএসআরটিসি) এক বাস কন্ডাক্টরকে সোমবার ভোরে মৈনপুরী জেলায় তার গ্রামের কাছে রেললাইনে মৃত অবস্থায় পাওয়া গেছে। মোহিত যাদবের (৩২) ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করা হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।
যদিও কোনও সুইসাইড নোট পাওয়া যায়নি, তবে মোহিতের পরিবার দাবি করেছে যে তিনি চলন্ত ট্রেনের সামনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন। কারণ তিনি তার বরখাস্ত প্রত্যাহার করতে ব্যর্থ হওয়ার পরে মানসিক ও আর্থিকভাবে চাপের মধ্যে ছিলেন।
তার পরিবারের দাবি মোহিতের মনে হয়েছিল যে কোনও কারণ ছাড়াই তাকে চাকরি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
জানা গিয়েছে, কিছু যাত্রী তাদের বাথরুমে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য অনুরোধ করার পরে বাসটি থামানো হয়েছিল। এরই মধ্যে দু’জন যাত্রী নামাজ পড়তে শুরু করেন। সেই সময় সেই নামাজ পড়ার ভিডিও তোলেন এক যাত্রী।
এটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সঙ্গে িভডিও চড়িয়ে পড়ে। ছড়িয়ে পড়ে। ঘটনার সময় ধারণ করা এক ভিডিওতে দেখা গেছে, বাস থামানোর আগে যাত্রীদের বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করছিলেন মোহিত। তিনি বলছিলেন, ‘আমরাও হিন্দু। হিন্দু বা মুসলিম কোনো বিষয় নয়। দুই মিনিটের জন্য বাস থামালে কী এমন হয়ে যাবে।’
ঘটনার পর কোনো ধরনের পূর্ব ঘোষণা ছাড়াই উত্তর প্রদেশের পরিবহণ বিভাগ বাসটির চালক ও তাঁর সহকারী মোহিত যাদবকে বরখাস্ত করে। ঘটনার একটি ভিডিওর ভিত্তিতে কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিয়েছে। তারা মোহিত বা চালকের কাছ থেকে কোনও ব্যাখ্যা চাননি।
মোহিত যাদব ছিলেন পরিবারের বড় সন্তান। তিনি ওই বাসে চুক্তিভিত্তিক কাজ করতেন। বেতন পেতেন ১৭ হাজার টাকা। আট সদস্যের পরিবারটি মোহিতের আয়েই চলত। বরখাস্ত হওয়ার পর অনেক জায়গায় চাকরির আবেদন করেন মোহিত। তবে কোথাও চাকরি পাচ্ছিলেন না।
মোহিত যাদবের খুড়তুতো ভাই টিঙ্কু যাদব, যিনি মৈনপুরীতে একটি ট্রাভেল এজেন্সি চালান, বলেন, “মোহিত হতাশাগ্রস্ত ছিলেন কারণ তিনি পুনর্বহাল করতে পারেননি।
মোহিতের স্ত্রী রিঙ্কি বলেন, ‘আমার স্বামী তার বেতন দিয়ে সংসার চালাচ্ছিলেন। পরিবারের জ্যেষ্ঠ সদস্য হওয়ায় তার কাঁধে দায়িত্ব ছিল। চাকরি হারানোর কারণে তিনি হতাশায় পড়ে আত্মহত্যা করেন।
গাড়ির চালক কেপি সিংও টিঙ্কু যাদবের বক্তব্যকে সমর্থন করেন। তিনি জানান, গত ৩ জুন তাদের বাস প্রতিবেশী রামপুর জেলায় পৌঁছালে কয়েকজন যাত্রী বাথরুমে যাওয়ার জন্য বাসথামানোর অনুরোধ করেন। বাসটি থামলে দুই যাত্রী রাস্তার পাশে নামাজ পড়তে শুরু করেন। বাসটি ওই স্থানে প্রায় তিন মিনিটের জন্য থামিয়ে রাখা হয়। মোহিত রবিবার সন্ধ্যায় পরিবারকে বলে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিল যে সে এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে যাচ্ছে এবং বাজার থেকে কিছু পণ্য কিনুন।
সোমবার সকালে মোহিতের পরিবার জানতে পারে, রেললাইনের পাশে তার লাশ পড়ে আছে। তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায়। পরিচয়পত্রসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের মাধ্যমে পুলিশ তাকে শনাক্ত করে। পরিবারের বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে যেখানে মৃতদেহটি পাওয়া গেছে।
গভর্নমেন্ট রেলওয়ে পুলিশ (জিআরপি) মইনপুরী স্টেশন হাউস অফিসার অরবিন্দ কুমার জানিয়েছেন, রেললাইন পরিদর্শনকরতে গিয়ে এক গ্যাংম্যানের কাছ থেকে মৃতদেহের খবর পান তাঁরা। পুলিশ যখন আসে, তখন ভুক্তভোগীর ফোন বেজে ওঠে। আমরা কলটি তুলেছি এবং তার পরিচয় সম্পর্কে জানতে পেরেছি। এরই মধ্যে স্থানীয়রা এসে লাশ শনাক্ত করে। পরিবারের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে, রেললাইন পার হওয়ার সময় ট্রেনের সংস্পর্শে আসেন তিনি। এ বিষয়ে তদন্ত করা হবে।
মোহিতের প্রতিবেশী সন্তোষ যাদব বলেন, মোহিত সম্প্রতি তার পরিবারকে কৃষিকাজে সহায়তা করছিলেন। তিনি তার চাকরিতে ফিরে আসার কথা বলতেন। তিনি বিশ্বাস করেছিলেন যে তার চাকরি থেকে বরখাস্ত করার পদক্ষেপটি তাড়াহুড়ো করে নেওয়া হয়েছিল।
ইউপিএসআরটিসির অ্যাসিস্ট্যান্ট রিজিওনাল ম্যানেজার (বরেলি) সঞ্জীব শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, তদন্তের পর মোহিত ও কেপি সিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। মোহিত তাকে আরেকটি সুযোগ দেওয়ার জন্য একটি আবেদন জমা দিয়েছিল। আবেদনটি একটি কমিটির সামনে উপস্থাপন করার কথা ছিল। নাগলা কুশলী গ্রামের বাসিন্দা মোহিত স্ত্রী, চার বছরের এক ছেলে ও তিন ভাই রেখে গেছেন।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct