আপনজন ডেস্ক: লোকসভার ভোট যত এগিয়ে আসছে ততই কেন্দ্রীয় সরকার ‘আক্রোশমূলক’ মনোভাবের পরিচয় দিতে শুরু করছে। এর আগে কেন্দ্রীয় শিক্ষা মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি প্রাথমিক পড়ুয়াদের জন্য সংখ্যালঘু বৃত্তি ‘প্রিম্যাট্রিক স্কলারশিপ’ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এবার দেশজুড়ে বিভিন্ন রাজ্যে সংখ্যালঘু বৃত্তিদ প্রদানে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে সিবিআইকে দিয়ে তদন্ত শুরু করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি দেশের সংখ্যালঘু বৃত্তিপ্রাপ্ত ১,৫৭২টি সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৩০টি হয় ভুয়ো অথবা অকার্যকর। শুধু তাই নয় তাদের দাবি শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নাকি ৩৯ শতাংশ সংখ্যালঘু স্কুল ভুয়ো অথবা বন্ধ, যাদের পড়ুয়ারা বৃত্তি পেয়েছে। বিশেষ করে পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে ‘আজব’ অভিযোগ তোলায় কেন্দ্রের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। সূত্রের খবর, রাজ্যের সংখ্যালঘু দফতর কেন্দ্রীয় সরকারের এমন দাবি একেবারেই অবাস্তব বলে মনে করছে। জানা গেছে, বুধবার এ রাজ্যের সংখ্যালঘু বৃত্তি দুর্নীতির অভিযোগে কেন্দ্রীয় তদন্ত সংস্থা সিবিআই এফআইআর করেছে। কেন্দ্রীয় সরকারের দাবি, ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ অর্থবর্ষে সংখ্যালঘু বৃত্তি কেলেঙ্কারির ঘটনায় দেশজুড়ে ৮৩০টি ভুয়ো প্রতিষ্ঠান এই প্রকল্পের আওতায় সুবিধা পেয়েছে। যদিও কেন্দ্রীয় সরকারি বৃত্তি প্রাপ্ত দেশের মোট সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা প্রায় ১.৮ লক্ষ। বিষয়টি প্রথম সামনে আসে ২০২০ সালে যখন রাজ্যজুড়ে প্রথম দফার এফআইআর দায়ের করা হয়েছিল। এরপর দ্বিতীয় দফায় গত ১০ জুলাই তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে তুলে দেওয়া হয়। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক (এমএমএ) ২০২২ সালের আগস্ট ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ অ্যাপ্লাইড ইকোনমিক রিসার্চকে (এনসিএইআর) ডিসক্রিপশনগুলি খতিয়ে দেখার দায়িত্ব দেয়। এনসিএইআর তদন্তে দাবি করা হয় ১,৫৭২টি সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৮৩০টি হয় ভুয়া বা অকার্যকর। আরও বলা হয়, দরিদ্র সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নির্ধারিত প্রায় ১৪৪ কোটি টাকার বৃত্তি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রকের অভ্যন্তরীণ তদন্তেও একই দাবি করা হয়। তবে যে ১,৫৭২টি সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে কেন্দ্র তদন্তে নামে সেই তদন্তের ফল হিসেবে যে রিপোর্ট পেশ করা হয় তাতে দেখা যাচ্ছে, ছত্তিশগড়ের ৬২টি সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানের সবকটিই অচল অবস্থায় পাওয়া গেছে, রাজস্থানে ১২৮টির মধ্যে ৯৯টি।
আসামে ৬৮ শতাংশ প্রতিষ্ঠান ভুয়ো বা অকার্যকর বলে প্রমাণিত হয়েছে। কর্নাটকে ৬৪ শতাংশ, উত্তরাখণ্ডে ৬০ শতাংশ, উত্তরপ্রদেশে ৪৪ শতাংশ, মধ্যপ্রদেশে ৪০ শতাংশ এবং পশ্চিমবঙ্গে ৩৯ শতাংশ সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হয় ভুয়ো অথবা বন্ধ অবস্থায় আছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, যে সব প্রতিষ্ঠানে হোস্টেল ছিল না সেখানে হোস্টেলের জন্য ১.৩ লক্ষ আবেদন ছিল। শুধুমাত্র মেয়েদের জন্য পরিচালিত প্রতিষ্ঠানে পুরুষ সুবিধাভোগীরা বৃত্তি পাচ্ছে বলেও অভিযোগ তোলা হয়। কেন্দ্রীয় রিপোর্টে দাবি, ২০১৮-১৯ সালে ২,২৩৯ জন আবেদনকারীর একই ফোন নম্বর ছিল। কেন্দ্রে আরও অভিযোগ, নোডাল অফিসাররা বিশদ বিবরণ যাচাই না করেই বৃত্তি দিচ্ছেন এবং এর ফলে প্রকৃত আবেদনকারী বা অভাবী শিক্ষার্থীরা বৃত্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু মন্ত্রকের দায়ের করা এফআইআর অনুসারে, এগুলি ন্যাশনাল স্কলারশিপ পোর্টালে (এনএসপি) নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান যা “অকার্যকর বা জাল বা আংশিক জাল” বলে দাবি করা হয়।এই ৮৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে মাত্র পাঁচটি রাজ্যে ৭০০টিরও বেশি জালিয়াতির ঘটনা ধরা পড়েছে আসাম (২২৫টি), কর্ণাটক (১৬২টি), উত্তরপ্রদেশ (১৫৪টি), রাজস্থান (৯৯টি), ছত্তিশগড় (৬২টি)। অভিযোগ অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ থেকে ২০২১-২২ সালের মধ্যে এই ৮৩০টি প্রতিষ্ঠানের বৃত্তির মাধ্যমে সরকারি কোষাগারে আনুমানিক ক্ষতির পরিমাণ ছিল ১৪৪.৩৩ কোটি টাকা। পাঁচটি রাজ্য ছাড়াও মধ্যপ্রদেশে ৩১টি, বিহারে ২৫টি, মহারাষ্ট্রে ১৭টি, পশ্চিমবঙ্গে ১৪টি, উত্তরাখণ্ডে ১২টি, তেলেঙ্গানায় ১১টি, ঝাড়খণ্ডে ৬টি, অন্ধ্রপ্রদেশে ৫টি, পাঞ্জাবে ৩টি এবং হরিয়ানা, জম্মু ও কাশ্মীর, তামিলনাড়ু ও মেঘালয়ে একটি করে জালিয়াতি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।উল্লেখ্য, রাজ্যের সংখ্যালঘু বৃত্তি প্রদানের দায়িত্বে রযেছে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগম। সূত্রের খবর, বৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করা হয়। আবেদন করার পর প্রতিটি সংখ্যালঘু প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত নোডাল অফিসার শিক্ষার্থীর বিবরণ যাচাই করেন এবং পোর্টালে আবেদন আপলোড করেন। তারপর তা যাচাই করে তবে বৃত্তি প্রদানের জন্য বিবেচনা করা হয়। তাছাড়া, বৃত্তি প্রদানের ক্ষেত্রে প্রতিটি শিক্ষার্থীর একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে হয় যে অ্যাকাউন্টে বৃত্তির টাকা দেওয়া হয়। সেক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গে ভুয়ো সংখ্যালঘু স্কুল থেকে বৃত্তি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই বলে রাজ্যের সংখ্যালঘু দফতরের দাবি।তবে অভিভাবক সূত্রের দাবি, একটি দুটি ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট না থাকায় তার বাবা বা দাদুর অ্যাকাউন্টে বৃত্তির টাকা যাওয়ার ঘটনা ঘটতে পারে। এ ব্যাপারে অবশ্য সংখ্যালঘু উন্নয়ন ও বিত্ত নিগমের কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct