সুব্রত রায়, কলকাতা, আপনজন: বিদেশ থেকে ফিরে সোমবার প্রথমবার ছাত্র সমাবেশের মঞ্চে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়। প্রায় একমাস বাদে বক্তব্য রাখলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ২৫ তম প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে মেয়ো রোডের গান্ধী মূর্তির পাদদেশে আয়োজিত সমাবেশ মঞ্চ থেকেই কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার বিরুদ্ধে আক্রমণ শানালেন অভিষেক। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এদিনের সভায় দাবি করলেন, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) সাম্প্রতিক অভিযানের সময় কম্পিউটারে মিথ্যা প্রমাণ স্থাপন করেছে। কিন্তু কোনও হুমকিই আমাকে নয়াদিল্লির ক্ষমতার সামনে মাথা নত করতে বাধ্য করবে না। স্কুল চাকরি কেলেঙ্কারির তদন্তে গত ২১ আগস্ট কলকাতা ও তার আশেপাশের একাধিক জায়গায় আট ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে তল্লাশি চালিয়েছিল ইডি। মেয়ো রোডের মঞ্চ থেকে লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসে ইডি তল্লাশি প্রসঙ্গে বলেন, আমি যেদিন কলকাতা ফিরেছি পরের দিন ইডিকে পাঠিয়ে দিয়েছে রেড করতে। সেখানে আমার অফিসে গিয়ে তল্লাশি করার সঙ্গে সঙ্গে ১৬টি ফাইল একটা কম্পিউটারে ডাউনলোড করে রেখে চলে এসেছে।
এবার আমি যদি আপনাদের প্রশ্ন করি, এই ১৬টি ফাইল যদি আবার সিবিআই তল্লাশি করে আমার অফিস থেকে সাত দিন পর উদ্ধার করত, তাহলে তো আপনারাই খবর চালাতেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সংস্থার অফিস থেকে কলেজের লিস্ট উদ্ধার হয়েছে। আমাদের ধমকে-চমকে লাভ নেই। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল করা মানুষ। আমি তো বলছি আমার বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকলে ইডি-সিবিআই নয়, আমি মৃত্যুবরণ করব। সেই তল্লাশির পর জল গড়িয়েছে অনেক দূর। একদিকে ইডি প্রেস বিবৃতি দিয়ে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেফতার হওয়া সুজয় কৃষ্ণ ভদ্রের সঙ্গে যুক্ত করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামও। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস- কোম্পানির সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সম্পর্ক নিয়ে ইডি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে লেখে, ‘তৃণমূল সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় লিপস অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেডের সিইও এবং ২০১২ সালের এপ্রিল থেকে ২০১৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্ত তিনি ওই সংস্থার অন্যতম ডিরেক্টর ছিলেন। বর্তমানে লিপ্স অ্যান্ড বাউন্ডস প্রাইভেট লিমিটেড’-এর চিফ এগজ়িকিউটিভ অফিসার তৃণমূলের সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।’ এরপর রাজ্য রাজনীতিতে ব্যাপক শোরগোল শুরু হয়। লিপস অ্যান্ড বাউন্ডসের বিরুদ্ধে বেআইনি লেনদেনের অভিযোগ এনেছে ইডি। আবার সেই সংস্থায় তল্লাশি প্রসঙ্গে এদিন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন,‘আমার অফিস’ শব্দটি ব্যবহার করায় ফের আক্রমণাত্মক বিরোধীরা। এদিন মঞ্চে থেকে বিজেপি নেতাদের উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়ে বলেন, ‘আমাকে যারা বলেছিল নবজোয়ারের সময়ে ঢুকতে দেবে না। বনগাঁয় ঢুকতে দেবে না বলেছিল। তারা নিজেরাই নিজের বুথে হেরেছে। দিলীপ থেকে শান্তনু ঠাকুর সব এক হাল। এমনকী বিজেপি রাজ্য সভাপতির সুকান্ত মজুমদারের দত্তক নেওয়া গ্রামেও হেরেছে বিজেপি।’অভিষেকের আরও অভিযোগ, তিনি যখন চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাচ্ছিলেন, তখন পশ্চিমবঙ্গে গুজব ছড়িয়ে পড়েছিল, তখন তিনি আর দেশে ফিরবেন না।বিজেপির উদ্দেশে আক্রমণ শানিয়ে তৃণমূল সাংসদ বলেন, ‘আপনারা তো দেখেছেন আমি বিদেশে গেলাম চিকিৎসা করাতে। আর এমন হাওয়া তুলল যে যেন আমি আর ফিরব না।’ এই প্রসঙ্গে অভিষেক মোদী, চোকসি ও মাল্য পদবী উল্লেখ করে বলে আমি ওদের সমগোত্রের নই। একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় এজেন্সির কাজ নিয়েও ক্ষোভ উগরে দেন অভিষেক।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct