এম মেহেদী সানি, কলকাতা, আপনজন: বিভিন্ন সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজ্যপাল সি ভি আনন্দ বসু কর্তৃক নিযুক্ত ভারপ্রাপ্ত উপাচার্যদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রাক্তন চ্যান্সেলরের বিরুদ্ধে “ইচ্ছামতো সংবিধান লঙ্ঘন” করার অভিযোগ করেছেন। তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে সোমবার মেয়ো রোডের জনসভায় বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্যপালের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি দিয়ে মমতা বলেন, ‘আপনার এক্তিয়ারে আমরা যাচ্ছি না। দয়া করে আমাদের এক্তিয়ারে আসবার চেষ্টা করবেন না। মনে রাখবেন আপনি আর চিফ মিনিস্টার এক নন, আপনি নমিনেটেড, আর আমরা ইলেক্টেড। পাঙ্গা নেওয়ার চেষ্টা করবেন না। আর দাঙ্গাকে কমিউনাল করার চেষ্টা করবেন না।’দলনেত্রী মমতা বলেন, ‘এখন তো মাথার ওপর একটা ছাতা দাড়িয়ে গেছে। আমি তার চেয়ারকে সম্মান করি। কিন্তু ব্যক্তি হিসেবে তিনি যে কার্যকলাপ করছেন তা আমি সমর্থন করি না। তিনি সংবিধান লঙ্ঘন করছেন। সব জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে দেখুন টালমাটাল অবস্থা। নিজের বন্ধুকে এনে বসিয়ে দিয়েছেন উপাচার্য করে। যিনি আইপিএস, কোনওদিন শিক্ষার ট্রেনিংই নেননি। ইউজিসির নিয়ম অনুযায়ী ১০ বছর অধ্যাপনা করতে হয় ভিসি হতে গেলে। তাকে এসে বসিয়ে দিয়েছে উপাচার্যের চেয়ারে। যাদবপুরে বিজেপি সেলের প্রেসিডেন্টকে বসিয়ে দিয়েছে ভিসি করে। এটা কি মগের মুলুক নাকি।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে নিয়োগের কথা উল্লেখ করেছিলেন, তা স্পষ্টতই কেরালা ক্যাডারের অবসরপ্রাপ্ত আইপিএস অফিসার এম ওয়াহাবের, যাকে বোস জুলাই মাসে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের দায়িত্ব পালনের জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। অন্যদিকে, যাদবপুরকাণ্ড নিয়ে টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেই গত শনিবার রাজ্যপাল তথা আচার্য সিভি আনন্দ বোস যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ করেছেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ও আরএসএস সমর্থিত শিক্ষক ফোরামের সভাপতি বুদ্ধদেব সাউকে। চলতি মাসের শুরুর দিকে শিক্ষার্থীদের র ্যাগিংয়ের শিকার সন্দেহে এক অপ্রাপ্তবয়স্ক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের মতো একই শর্তে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্টপ-গ্যাপ ভিসি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলির চ্যান্সেলর হিসাবে বোস ইতিমধ্যে ২৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কমপক্ষে ১১টিতে অস্থায়ী ভিসি নিয়োগ করেছেন, যেগুলি পূর্ণকালীন ভিসি ছাড়াই চলছে। কারণ এই শূন্য পদগুলির জন্য প্রার্থীদের চিহ্নিতকরণ এবং নির্বাচন করার জন্য সার্চ কমিটি গঠন নিয়ে অব্যাহত জটিলতা রয়েছে। রাজ্য বিশ্ববিদ্যালয় আইন বিল, যা এই উদ্দেশ্যে বঙ্গ বিধানসভায় সংশোধিত এবং পাস করা হয়েছে, রাজ্যপালের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এই বিলে রাজ্যপালকে সমস্ত রাজ্য সাহায্যপ্রাপ্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর হিসাবে তাঁর পদ অনুসারে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে প্রতিস্থাপিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।এদিকে, পশ্চিমবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ (প্রশাসন ও নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৭-এর বিধান লঙ্ঘন করে সুভাষ চন্দ্র বসুর অ্যাডহক ভিসি নিয়োগকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়েছে রাজ্য সরকার।সোমবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, আমি শুনেছি বাইরে থেকে লোক আনা হচ্ছে এবং বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য রাজভবনে ডেডিকেটেড ফোন লাইন স্থাপন করা হয়েছে, যেখান থেকে ফোন করা হচ্ছে, কর্মকর্তাদের ইচ্ছামতো তলব করা হচ্ছে।মুখ্যমন্ত্রী এই সুযোগটি ব্যবহার করে ঘোষণা করেন, কলেজগুলিতে ছাত্র ইউনিয়নের মুলতুবি নির্বাচন পূজার পরে অনুষ্ঠিত হবে। তিনি স্পষ্টভাবে জানান, এর আগে আমাদের বিদ্যমান আইনে কিছু সংশোধন করতে হবে। আমরা আমাদের পরবর্তী বিধানসভা অধিবেশনে এটি সম্পন্ন করব।পূর্ববর্তী সময়ে ইউনিয়ন নির্বাচনের সময় একাধিক ক্যাম্পাসে সহিংসতার কথা উল্লেখ করে মুখ্যমন্ত্রী তার দলের ছাত্র সংগঠনদের কর্মীদের উদ্দেশ্যে বলেন, তোমাদের প্রতিশ্রুতি দিতে হবে যে তোমরা ক্যাম্পাসে শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সুনিশ্চিত করবে।গত সপ্তাহে বিজেপির প্রতিবাদ সমাবেশ প্রসঙ্গে মমতা বলেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে যারা ‘গোলি মারো’ স্লোগান এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দিয়েছে তাদের গ্রেপ্তার করতে আমি পুলিশকে বলেছি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct