এম মেহেদী সানি, দত্তপুকুর, আপনজন: উত্তর ২৪ পরগনার দত্তপুকুরে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় এ পর্যন্ত ৮ জন নিহত হয়েছে । মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে ৷ আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে ৮ জনের। হাসপাতালে যাদের চিকিৎসা চলছে, তারা হলেন, ২০ বছরের রেশমা খাতুন, ১৭ বছরের মাসুমা খাতুন, ৪০ বছরের আশুরা বিবি, সেরিনা বিবি, ১৪ বছরের সানাউল আলি, ৫০ বছরের শমসের আলি, ৫২ বছরের সাইদুল আলি। আহতদের মধ্যে একটি ৮ বছরের ছেলেও রয়েছে।রবিবার দত্তপুকুরের মোচপোল গ্রামে যে বাড়িতে বেআইনি বাজি কারখানা ছিল সেটি বিস্ফোরণে ধূলিস্যাৎ হয়ে গেছে । বিস্ফোরণের অভিঘাতে সংশ্লিষ্ট এলাকার একাধিক বাড়ি ভেঙে পড়েছে । ঘটনাস্থলে একাধিক লাশ ছিন্নভিন্ন অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখা যায় । স্থানীয়দের অভিযোগ- শাসকদলের যোগসাজসেই এই বেআইনি বাজির কারবার চলত । এ নিয়ে বারবার অভিযোগ জানিয়ে প্রশাসন কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি বলেও অভিযোগ। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ অবশ্য বেআইনি বাজি কারখানা প্রসঙ্গে ‘আইএসএফ’-এর দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। তিনি আজ বলেন, আমরা যদি জানতাম, তাহলে তো ব্যবস্থা নিতাম । প্রশাসনকে জানালে অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে । রথীন ঘোষের দাবি খারিজ করে দিয়েছেন আইএসএফ বিধায়ক ও পীরজাদা নওশাদ সিদ্দিক । তার বক্তব্য- গরিবদের কাজে লাগিয়ে অনৈতিক কাজ করায় তৃণমূল, অঘটন ঘটলে বিরোধীদের ঘাড়ে দোষ চাপায় ।
উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পরিষদের সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী জানান, ‘এটা দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা যেখানে মুখ্যমন্ত্রী সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বিরোধিতা করছেন তার পরেও যদি কিছু লোকজন সংশ্লিষ্ট পেশার সঙ্গে যুক্ত থাকে তবে এর থেকে দুর্ভাগ্যের কিছু হতে পারে না ৷ তবে সব মৃত্যুই দুঃখজনক’ বলেও মন্তব্য করেন নারায়ণ ৷এ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের বিরোধী দলনেতা ও বিজেপি বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী, প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী এমপি ও অন্যরা রাজ্যে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বাধীন তৃণমূল সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘গোটা রাজ্যটাই বেআইনি। মুখ্যমন্ত্রী বড় বড় লেকচার দিয়েছিলেন, মুখ্যসচিবের নেতৃত্বে টিম তৈরি হয়েছে, বেআইনি বাজি কারখানাকে সরিয়ে দেওয়া হবে, তাদের রুটিরুজির জন্য আলাদা ব্যবস্থা হবে। কিন্তু কিছুই হয়নি।’ প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী এমপি বলেছেন এই সরকার চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই সরকার শুধু ব্যর্থতার দলিল লিখছে। যে সরকার ব্যর্থতার দলিল লিখবে বলে ঠিক করে ফেলেছে, সেই সরকারের নেতৃত্বে এই বাংলায় মানুষের নিরাপত্তার সম্ভাবনা দিনের পর দিন কমে যাচ্ছে। মানুষের জীবন বড় সস্তার হয়ে যাচ্ছে এই বাংলায়। কারণ, বাংলার তৃণমূল সরকার ব্যর্থতার দলিল লিখতে ব্যস্ত।’ প্রসঙ্গত, গত ১৬ মে পূর্ব মেদিনীপুরের এগরায় ভানু বাগ নামে এক ব্যক্তির বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে ১২ জনের মৃত্যু হয়েছিল। দত্তপুকুরের নীলগঞ্জের ঘটনায় শামসুল নামে এক ব্যক্তির কথা জানা গেছে। তার বাড়িতে ওই বেআইনি বাজি কারখানা চলত। গত ২২ মে বজবজে বেআইনিভাবে রাখা বাজি বিস্ফোরণে ৩ জনের নিহত হয়েছিল। তার আগে, ২০ মার্চ মহেশতলায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ৩ জনের। সেই তালিকায় এবার যুক্ত হল দত্তপুকুরের নাম।এই বাজি বিস্ফোরণ নিয়ে এবার বিজেপি সাম্প্রদায়িক তাস খেলতে ময়দানে নেমে পড়েছে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে চিঠি লিখলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। রবিবার পাঠানো চিঠিতে সুকান্তের দাবি, এই বিস্ফোরণকাণ্ডের নেপথ্যে জঙ্গি কার্যকলাপও থাকতে পারে। তাই সেই সব দিক মাথায় রেখে এবং নিরপেক্ষ তদন্তের জন্য এনআইএ-এর হাতে তদন্তভার তুলে দেওয়ার আর্জি জানান সুকান্ত। একই দাবি করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শান্তনু ঠাকুর।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct