নাজিম আক্তার, রতুয়া, দেবাশীষ পাল, মালদা, আপনজন: অবশেষে মালদহে এসে পৌঁছল মিজোরামে রেল ব্রিজ দুর্ঘটনায় মৃত শ্রমিকদের নিথর কফিনবন্দি দেহ। শুক্রবার সন্ধ্যা ৭ টা নাগাদ মিজোরাম থেকে সরাসরি মালদহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসে পৌঁছাল ১৮ জন শ্রমিকদের মৃতদেহ। মালদহে ২৩ জন শ্রমিকের মৃত্যু হলেও শুক্রবার ১৮ জন শ্রমিকদের মৃতদেহ আনা হয়। সেখানে জেলা শাসক নীতিন সিংহানিয়া, পুলিশ সুপার প্রদীপ কুমার যাদব সহ সাংসদ সামিরুল ইসলাম, রাজ্যের মন্ত্রী সাবিনা ইয়াসমিন, ইংরেজবাজার পৌরসভার চেয়ারম্যান কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী উপস্থিত থেকে বাড়ির লোকের হাতে দেহগুলি তুলে দেওয়া হয়। মিজোরাম থেকে বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সে করে মালদহ মেডিক্যালে কলেজ হাসপাতালের মর্গে পৌঁছালে সেখান থেকে প্রশাসনিক নিয়ম নীতি মেনে পরিবারের হাতে মৃতদেহগুলি তুলে দেওয়া হয়। একের পর এক ১৮টি মৃতদেহ ‘স্বর্গরথে’ করে প্রতিটি পরিবারের হাতে তুলে দিয়ে গন্তব্যস্থল অর্থাৎ বাড়ির উদ্দেশ্যে পাঠানো হয়।
অন্যদিকে এদিন, মিজোরামে নির্মীয়মাণ রেল সেতু ভেঙে মালদহের নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রেল সেতু ভেঙে মালদার ২৩জন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পেয়ে শুক্রবার মালদায় ছুটে এলেন রাজ্যপাল।শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ মালদায় পৌঁছন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। রাজ্যপাল স্টেশনে নেমেই সোজা রওনা দিলেন মৃতদের অসহায় পরিবারবর্গের বাড়ির উদ্দেশ্যে। সেই সময় মালদা টাউন স্টেশনে রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে রাজ্য কংগ্রেস নেতা তা বিশিষ্ট আইনজীবী কৌস্তভ বাগচী সহ দলের অন্যান্য নেতৃত্ব। সেখানে তারা মৃত পরিবারের হয়ে বলেন পিছু একজনকে চাকরি এবং ১০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণের দাবি জানালেন। রাজ্যপাল রতুয়া দু’নম্বর ব্লক কোকলামারির চৌদুয়ার গ্রামে যান। ওই গ্রামে একসাথে ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। সেখানে তিনি নিহতদের পরিবারের সাথে দেখা করেন তাদেরকে সান্ত্বনা জ্ঞাপন করেন। পরিবার পরিজনদের সাথে তিনি কথা বলেন। রেলের তরফে সাড়ে ৯ লক্ষ টাকার চেক ও ৫০ হাজার নগদ রাজ্যপাল মৃতদের পরিজনদের হাতে তুলে দেন।এদিন রাজ্যপালের সামনে কান্নায় লুটিয়ে পড়েন নিহতের পরিবারের লোকেরা। এছাড়াও মালদা জেলার যে সব শ্রমিক মারা গিয়েছে তাদের হাতে টাকাও পৌঁছে দেওয়ার আশ্বাস দেন। সরকার প্রত্যেক নিহতের পরিবারের পাশে থাকবে বলে জানান। মিজোরামের আইজল জেলায় একটি নির্মাণাধীন রেলসেতু ধসে ২২ জন শ্রমিক নিহত হওয়ার কারণ অনুসন্ধানের জন্য চার সদস্যের একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠন করেছে রেল মন্ত্রক। রেলমন্ত্রকের জারি করা আদেশে বলা হয়েছে, কমিটি গঠনের তারিখ থেকে এক মাসের মধ্যে তাদের প্রতিবেদন জমা দেবে। কমিটির চার সদস্য হলেন আরডিএসও-র বিপি অবস্থি, আইআইটি দিল্লির ডঃ দীপ্তি রঞ্জন সাহু এবং আইআরআইএসএন-এর শরদ কুমার আগরওয়াল এবং এনএফ রেলওয়ের চিফ ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ার সন্দীপ শর্মা। আদেশে বলা হয়েছে, রেলওয়ে বোর্ডের ওয়ার্কস-১ শাখা কমিটির কাজকর্ম এবং রেলওয়ে বোর্ডের বিবেচনার জন্য প্রতিবেদন জমা দেওয়া, কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন এবং সংশ্লিষ্ট সমস্ত বিষয়গুলির জন্য নোডাল শাখা হবে। আইজলের কাছে বৈরাবি-সাইরাং নতুন লাইন প্রকল্পের নির্মাণাধীন রেলসেতুটি বুধবার ধসে পড়ে ২৩ জন শ্রমিক নিহত এবং তিনজন আহত হয়েছেন। এদিন নিখোঁজ চার শ্রমিকের লাশ উদ্ধার করা হয়। একজন শ্রমিক এখনও নিখোঁজ রয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, নিহতরা সকলেই পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার বাসিন্দা।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct