সজিবুল ইসলাম, বহরমপুর, সাারিউল ইসলাম, জিয়গঞ্জ, আপনজন: মুর্শিদাবাদের জিয়াগঞ্জ থানার অন্তর্গত লেবুবাগান এলাকায় ৮ই অক্টোবর ২০১৯, পেশায় স্কুল শিক্ষক বন্ধু প্রকাশ পাল, তার অন্তঃসত্তা স্ত্রী বিউটি পাল ও তাদের ছেলে অঙ্কন পাল, তিন জন নৃশংসভাবে খুন হয়েছিল নিজের বাড়িতে। সেদিন দুপুর ১২:০৬ থেকে ১২:১১ পর্যন্ত ৫ মিনিটের মধ্যে তিনটে খুন হয়েছিল জিয়াগঞ্জের লেবুবাগানে। ঘটনায় তোলপাড় হয়েছিল সারা দেশ। ঘটনার ৭ দিন পর ১৫ ই অক্টোবর পুলিশের জালে ধরা পড়ে সাগরদিঘী থানার বাড়ালা গ্রামের এক যুবক।৩০২ ধারায় খুনের অভিযোগ এবং ২০১ ধারা অর্থাৎ প্রমাণ লোপাটের অভিযোগ, এই দুটি অভিযোগের উপর ভিত্তি করে শুরু হয় মামলা। আদালতে ৫০০ পাতার চার্চসিট পেশ করেন সার্কেল ইন্সপেক্টর গোবিন্দ বিশ্বাস। মোট ৭৮ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জন সাক্ষী আদালতে হাজিরা দেয়। পাশাপাশি সাইবার প্রমাণ হিসেবে ভারতে সর্বপ্রথম ব্যবহার করা হয় ‘রাইট ব্লকার’ পদ্ধতি। এই পদ্ধতির মাধ্যমে সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখিয়ে প্রমাণ করা হয় আসামী উৎপল বেহেরা। ঘটনার ৩ বছর ১০ মাস ১৬ দিন পর ২২ শে আগস্ট মঙ্গলবার অভিযুক্ত উৎপল বেহারাকে ভারতীয় দন্ডবিধির ৩০২ ধারা অনুসারে দোষী সাব্যস্ত করেন বহরমপুর তৃতীয় দ্রুত নিষ্পত্তি আদালতের বিচারক সন্তোষ কুমার পাঠক। বুধবার রায়দানের কথা থাকলেও বৃহস্পতিবার আসামি উৎপল বেহেরাকে আদালতে হাজির করানো হয়, খুনের ঘটনায় ফাঁসির নির্দেশ দেন বিচারক।আদালত থেকে বের হওয়ার সময় আসামি উৎপল বেহেরা দাবি করতে থাকে ‘আমি নির্দোষ, আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।’ বৃহস্পতিবার আদালতে সরকারি পক্ষের আইনজীবী বিভাস চ্যাটার্জি সুপ্রিম কোর্টের ১৪ টি ভয়ঙ্কর খুনের ঘটনার সাজা হিসেবে ফাঁসির রায় কে সামনে রেখেছিলেন।তিনি বলেন, ‘মামলা শুরু হওয়ার এক বছর দু মাস পর আমি এতে হস্তক্ষেপ করি। এটা যেহেতু বিরল ঘটনার মধ্যে একটি তাই বিরল ঘটনার রায়দান গুলিকে সামনে রেখে আবেদন করি সেই মতো অবশেষে মূল আসামীকে ফাঁসির নির্দেশ দেন বিচারক।’অন্যদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী কৌশিক দে বলেন, ‘আমার মক্কেল নির্দোষ এবং সেটা প্রমাণে আমি পরবর্তীতে উচ্চ আদালতে যেতে চলেছি।’এই ঘটনায় মৃত শিক্ষক বন্ধু প্রকাশ পালের মা মায়া ঘোষ পাল বলেন, ‘আমিতো ফাঁসি চাইছিলামই, ফাঁসির নির্দেশ দেওয়াই আমি খুব খুশি হয়েছি।’উচ্চ আদালতের জল কতদূর গড়ায় এখন সেদিকে নজর রাজ্যবাসীর।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct