ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ বদলে যেতে চলেছে, সেটা বলার সময় এখনো হয়নি। কিন্তু দক্ষিণ প্রান্তে রাশিয়ার প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেদ করতে ইউক্রেন যে সক্ষম হয়নি, সে বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ বাড়ছেই। এ অঞ্চলে কুপিয়াস্ক, লাইমেন ও বাখমুতে ইউক্রেনীয় বাহিনী যে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তাতে করে মনে হচ্ছে পুরো যুদ্ধ একটা নিষ্পত্তির দিকে যেতে পারে। লিখেছেন স্টিফেন ব্রায়েন।
ইউক্রেন যুদ্ধের গতিপথ বদলে যেতে চলেছে, সেটা বলার সময় এখনো হয়নি। কিন্তু দক্ষিণ প্রান্তে রাশিয়ার প্রতিরক্ষাব্যূহ ভেদ করতে ইউক্রেন যে সক্ষম হয়নি, সে বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ বাড়ছেই। এ অঞ্চলে কুপিয়াস্ক, লাইমেন ও বাখমুতে ইউক্রেনীয় বাহিনী যে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে, তাতে করে মনে হচ্ছে পুরো যুদ্ধ একটা নিষ্পত্তির দিকে যেতে পারে। এ কারণে বাইডেন প্রশাসন তড়িঘড়ি করে মার্কিন কংগ্রেসের কাছে ইউক্রেনের জন্য ২০ বিলিয়ন ডলার সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এবং দেশটির সেনাদের মনোবল চাঙ্গা করার জন্যই এ পদক্ষেপ। কিন্তু এবার মার্কিন কংগ্রেস বাইডেনের এ অস্বাভাবিক আবদারে খুব সহজে সম্মতি দেবে বলে মনে হয় না। এর কারণ হলো, কী কারণে ২০ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন পড়ছে, সেটা এখন পর্যন্ত পরিষ্কার নয়। এ ছাড়া ইউরোপ ও আমেরিকায় এই ব্যয়বহুল ও কঠিন যুদ্ধের বিকল্প সমাধান খোঁজার ব্যাপারে মত গড়ে উঠছে। যুদ্ধকে প্রলম্বিত করার যুক্তরাষ্ট্রের যে নীতি-কৌশল, তার অর্থ ইউক্রেনের পরাজয়। এ বিষয়ে উদ্বেগ ক্রমশই বাড়ছে। মার্কিন কংগ্রেসে বিরোধীরা যখন সংখ্যাগরিষ্ঠতার খুব কাছাকাছি, সে সময় ইউক্রেন যদি যুদ্ধক্ষেত্রে বড় কোনো বিপর্যয়ের মুখে পড়ে তাহলে তারা দেশটিকে আর্থিকভাবে সহায়তা দেওয়ার চিন্তা থেকে সরে আসতে পারে। একটা বিষয় হলো ওয়াশিংটনের কোনো রাজনীতিবিদের পক্ষে ইউক্রেন যুদ্ধের পক্ষে জনসমর্থন তৈরি করা অসম্ভব। এদিকে রুশ বাহিনীর অভিযান সম্পর্কে, বিশেষ করে কুপিয়াস্ক অঞ্চলে তাদের গতিবিধি সম্পর্কে তথ্য পাওয়া খুবই কঠিন। রাশিয়া তাদের অভিযানকে আক্রমণ অভিযান না বললেও অসমর্থিত সূত্রে জানা যাচ্ছে, ওই অঞ্চলে রাশিয়া এক লাখ কিংবা তার বেশি সেনা এবং প্রচুর পরিমাণে ভারী অস্ত্র ও সাঁজোয়া যান মোতায়েন করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো বিএম-২১ মাল্টিপল রকেট লাঞ্চারের বহর ওই এলাকার দিকে নিয়ে যেতে দেখা গেছে। এ খবরও এসেছে যে ইউক্রেনের সেনারা সেখানে যুদ্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এই বিদ্রোহ দমন করা হয়েছে বলেও খবর বেরিয়েছে। গত কয়েক দিনেই এসব ঘটনা ঘটেছে।ভাগনার গ্রুপের হাতে বাখমুত শহরের পতনের পর জেলেনস্কি আশা করেছিলেন, শহরটির নিয়ন্ত্রণ তিনি আবার ফিরিয়ে নেবেন। কিন্তু এ মুহূর্তে বাখমুত শহরের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর্যায়ে নেই। ইউক্রেনীয়রা শহরটির উত্তর ও দক্ষিণ অংশের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার চেষ্টা করছে। সর্বশেষ তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, প্রথম দিকে দুই দিক থেকেই জেলেনস্কির বাহিনী অগ্রসর হলেও এখন তারা পিছিয়ে আসতে বাধ্য হচ্ছে। আর এ কারণে বাখমুত বিজয়ে জেলেনস্কির স্বপ্ন ছাইয়ে পরিণত হতে বসেছে।
বাখমুত অভিযান জেলেনস্কির জন্য বিশাল সমস্যা তৈরি করেছে। প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে অপসারণ করতে হতে পারে। ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেস্কি রেজনিকভ ইউরোপ ও আমেরিকা থেকে অস্ত্র পাওয়ার ক্ষেত্রে সামনের কাতারে থেকে ভূমিকা পালন করেছেন। রেজনিকভের স্থলাভিষিক্ত হিসেবে যাঁদের নাম শোনা যাচ্ছে, তাঁদের কারোরই অভিজ্ঞতা কিংবা যুদ্ধের সঙ্গে যোগাযোগ নেই। ওলেস্কি রেজনিকভকে সম্ভবত যুক্তরাজ্যে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত করে পাঠানো হতে পারে। এ ব্যাপারে কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী এখনো জেলেনস্কিকে সমর্থন করছে কি না। কিন্তু কিয়েভে নতুন নতুন জটিলতা দেখা যাচ্ছে। ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যদি নিজেদের হাতে যদি সব কর্তৃত্ব নিয়ে নেয়, তাহলে জেলেনস্কিকে সরে যেতে হতে পারে। রুশ বাহিনী যাতে বড় কোনো অভিযান পরিচালনা করতে না পারে, সেটা রুখতে ইউক্রেন রিজার্ভ বা মজুত ইউনিটগুলো যুদ্ধক্ষেত্রে নিয়ে আসছে। এগুলোর অনেক ইউনিটই ন্যাটোর প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। রুশদের লক্ষ্য যখন স্থল, নৌ ও আকাশপথে আক্রমণ শাণিয়ে বিপর্যস্ত করে দেওয়া, তখন স্বল্প প্রশিক্ষিত ব্রিগেডের সঙ্গে সুপ্রশিক্ষিত ব্রিগেড মিলিয়ে দেওয়া মোটেই যুক্তিযুক্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। জানা যাচ্ছে যে ইউক্রেন তাদের জনগণকে গণহারে সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে। একই সঙ্গে রাশিয়ার অগ্রগতি ধীর করতে ব্রিজ ও সড়কে মাইন পুঁতছে। অন্যদিকে রুশরা যুদ্ধক্ষেত্র ব্যবস্থাপনায় সুস্পষ্ট বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে। রুশরা এরই মধ্যে কিয়েভে কিছু আক্রমণ করেছে। এর মধ্যে ইউক্রেনের গোয়েন্দাকেন্দ্রও রয়েছে। এর মধ্যে জানা যাচ্ছে, বেলারুশে যাওয়া ভাগনার গ্রুপের সেনারা রাশিয়ায় ফিরতে শুরু করেছেন। এর প্রধান কারণ হলো বেলারুশ তাঁদের বেতন-ভাতা দিতে ও তাঁদের জন্য সরঞ্জাম কিনতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। এই সম্ভাবনা আছে যে তাঁদের অনেককে আফ্রিকায় পাঠানো হতে পারে। সম্প্রতি ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটস এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা নাইজারে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে একত্রভাবে সামরিক অভিযান পরিচালনা করবে। এ সিদ্ধান্ত রাশিয়া ও ভাগনার গ্রুপের জন্য বড় সুযোগ তৈরি করবে।কেননা ইকোনমিক কমিউনিটি অব ওয়েস্ট আফ্রিকান স্টেটসের সেনাদের পারদর্শিতা নাইজারের সেনাদের মতোই মন্দ পর্যায়ের। তাদের পরিবহন, যোগাযোগ ও সরবরাহের ঘাটতি রয়েছে। বাইরের বড় শক্তির সাহায্য ছাড়া সেখানে যুদ্ধ শুরু হওয়ার অর্থ হলো আরেকটি জয়-পরাজয়হীন যুদ্ধ চলতে থাকা। এখন পর্যন্ত কেউই জানে না, পুতিন ভাগনার গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোশিনকে তাঁর বাহিনীসহ নাইজারে পাঠাবেন কি না। যা হোক, ভূরাজনৈতিক বিবেচনায় ইউক্রেন অবশ্যই রাশিয়ার কাছে কেন্দ্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ। নাইজারের গুরুত্ব ততটা নয়। বিশাল কোনো আক্রমণে পরাজিত করার চেয়ে ধীরে ধীরে ইউক্রেনকে শক্তিহীন করতে এবং কিয়েভের প্রতি পশ্চিমাদের সমর্থনে বিভক্তি সৃষ্টি করতে চায় রাশিয়া। মস্কোর যুদ্ধ পরিকল্পনাকারীরা ভালো করেই জানেন কখন কী করতে হবে। তাঁরা এখন মনে করছেন, বড় আক্রমণ অভিযান শুরু করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। আগামী কয়েকদিন কুপিয়াস্কের দিকে আমাদের চোখ রাখতে হবে।
সৌ: প্র: আ:
স্টিফেন ব্রায়েন সেন্টার ফর সিকিউরিট পলিসি অ্যান্ড ইয়র্ক টাউন সেন্টারের সিনিয়র ফেলো
এশিয়া টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনূদিত
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct