নাজিম আক্তার, রতুয়া, আপনজন: মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে প্রায় ২৫ কিমি দূরে সাইরাং এলাকায় রেল ব্রিজের কাজ চলাকালনীন মর্মান্তিক মৃত্যু হয় যেসব শ্রমিকের বেশিরভাগ শ্রমিক মালদা থেকে রয়েছেন। সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মালদা জেলার বিভিন্ন এলাকা অন্তত ২৩ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। সরকারিভাবেও ২৩ জনের মৃত্যুর কথা ঘোষণা করেছে মালদা জেলা প্রশাসন। অবশ্য মৃতের সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে অনুমান। মালদা জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে পুখুরিয়া থানার ১৬ জন, ইংরেজবাজার থানা এলাকার ৫ শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। কালিয়াচক ও গাজোলের ১ জন করে শ্রমিকের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। সবচেয়ে বেশি শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে রতুয়া ২ নম্বর ব্লকের কোকলামারি চৌদুয়ার গ্রামে। গোটা গ্রামে এখন শোকের ছায়া। বুধবার মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে ২১ কিলোমিটার দূরে সাইরাং এলাকায় রেল ব্রিজের কাজ চলাকালনীন হুড়মুড়িয়ে তা ভেঙে পড়ে। সেই সময় সেতুতে কাজ করছিলেন প্রায় ৫০ জন শ্রমিক। এর মধ্যে অধিকাংশ শ্রমিকই মালদহ জেলার। দ্রুত ঝশউদ্ধারকাজ শুরু করা হলে একেরপর এক শ্রমিকের দেহ উদ্ধার হতে থাকে। বেঁচে যাওয়া এক শ্রমিক টেলিফোনে খবর দেন পুকুরিয়ার বাড়িতে। গোটা এলাকা জুড়ে খবর ছড়িয়ে পড়ে। ঈদের পর এখান থেকে ৩৭জন মিজোরামে ব্রিজের কাজে যায় মালদা জেলা থেকে। ব্রিজ ভেঙে পড়ার পর ৩০-৩২ জনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না বলে সেখানে থাকা শ্রমিকরা জানিয়েছেন।
দুর্ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, মৃতদের মধ্যে অনেকেই মালদার বাসিন্দা। মিজোরাম প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করতে মুখ্যসচিবকে নির্দেশ দিয়েছি। নিহত ও আহতদের পরিবারের পাশে থাকার জন্য মালদা জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরেই জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে চৌদুয়ার গ্রামে পৌঁছে গিয়েছেন মালদহে অতিরিক্ত জেলাশাসক সাধারণ বৈভব চৌধুরী। সঙ্গে রয়েছেন পুকুরিয়া থানার ওসি গৌতম চৌধুরী। মুখ্যমন্ত্রীর দূত হিসেবে সাংসদ সামিরুল ইসলাম বৃহস্পতিবার মালদা জেলার মৃত শ্রমিকদের পরিবারের বাড়িতে যাবেন। ইংরেজ বাজার ব্লকের বিনোদপুর ও নরহাট্টা গ্রাম পঞ্চায়েতে গিয়েছেন পৌঁছে গিয়েছেন ইংলিশবাজার ব্লকের বিডিও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমস্ত রকম সাহায্যের ব্যবস্থা করা হয়েছে পরিবারদের জন্য বলে জানা গিয়েছে। মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনায় একই এলাকা থেকে এত সংখ্যক শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনায় এলাকা জুড়ে ব্যাপক শোকের ছায়া। উদ্ধার কাজ শেষ হওয়ার পরই মৃতের সংখ্যা স্পষ্ট হবে এমনটাই জানা যাচ্ছে প্রশাসন সূত্রে। ঘটনা স্থলে পৌঁছে পরিবারগুলোর সাথে দেখা করেন অতিরিক্ত জেলা শাসক বৈভব চৌধুরী জানান,গোটা বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রী নির্দেশ মতো দেহ আনতে যা যা ব্যবস্থা প্রয়োজন তা গ্রহণ করা হচ্ছে। আমাদের জেলাশাসক মিজোরামের ও এলাকার জেলাশাসকের সাথে কথা বলেছেন। মালদা জেলা প্রশাসনের তরফে মৃত ২৩ জন শ্রমিকের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। মৃতদের তালিকায় রয়েছেন মোথাবাড়ি থানার লসকরিটোলা গ্রামের জাহিদুল সেখ। তার পাঁচ বছরে সন্তান বাবার জন্য অঝোরে কেঁদে চলেছে। মৃতদের গ্রামজুড়ে এখন শুধু কান্নার রোল। তারা এখন অধীর অপেক্ষায় কখন তাদের স্বজনদের লাশ ফিরবে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct