আপনজন ডেস্ক: ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচন যতই এগিয়ে আসছে, ততই ইন্ডিয়া জোটের অন্যতম অংশীদার তৃণমূলের তরফে মোদি বিরোধী প্রচার জোরাদার হচ্ছে। বেঙ্গালুরুতে ২৬টি বিরোধী দলের সম্মেলনে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছিলেন রাহুল গান্ধি ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মত পার্থক্য সরিয়ে এক মঞ্চে একদিকে রাহুল ও অন্যদিকে সোনিয়াকে পাশে রেখে মমতা বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি বিরোধী ঐক্যের পক্ষে। সেই সম্মেলনে বিরোধীদের প্রধানমন্ত্রীর মুখ হিসেবে মমতার নাম আলোচিত হয়। যদিও মমতা সহ বিরোধী জোট বরাবার বলে এসেছে, আগে বিজেপিকে পরাজিত করাই প্রধান লক্ষ্য। যদিও বেঙ্গালুরু সম্মেলনের সময় তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায় বলেছিলেন, “প্রথম বাঙালি মহিলা হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সিতে বসুন দিদি তা আমরা চাই। এরপর কী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় তা পরের বিষয়। আমরা চাইছি দেশের প্রধানমন্ত্রী মুখ হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।” তার কয়েকদিন পরে কলকাতার ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের শহীদ দিবসের সমাবেশেও তৃণমূল সমর্থকরা দিদিকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চেয়ে আওয়াজ তোলেন। একদল তৃণমূল কর্মীদের দেখা যায় যাদের হাতে ছিল ‘লক্ষ্য ২০২৪ DIDI-কে PM চাই’ লেখা পোস্টার। দিন কয়েক আগেও তৃণমূল সাংসদ তথা বিহারী বাবু বলে খ্যাত শত্রুঘ্ন সিনহা তার মনের আশা ব্যক্ত করে বলেছিলেন, দেশের রাষ্ট্রপতি একজন মহিলা। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় থাকতে মহিলা প্রধানমন্ত্রী হতেই বা সমস্যা কোথায়! প্রধানমন্ত্রীর দৌড়ে তাই মমতাকে নিয়ে জোর চর্চা যখন তুঙ্গে তখন তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে এবার প্রধানমন্ত্রী পদে মূল প্রতিদ্বন্দ্বী মোদিকে কটাক্ষ করতে সোশ্যাল মিডিয়াকে ব্যবহার করা হয়েছে। ট্যুইটারে ‘সর্বদা প্রচার প্রথমে’ শীর্ষক মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির এক কোলাজ ছবি প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে ক্যাপশানে প্রধানমন্ত্রী কথাটি কেটে দিয়ে নীচে লেখা হয়েছে ‘প্রচার মন্ত্রী’। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে বিদেশ সফর থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোদি বারবার প্রচারের আলোতে আসার জন্য নিজেকে তুলে ধরতে সচেষ্ট হয়েছেন। সেই সব ক্ষেত্রের ছবি কোলাজ করে তৈরি পোস্টারকে ব্যবহার করে তৃণমূল নতুন প্রচার শুরু করল।
২০২১-এর নির্বাচনী প্রচারে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ‘দিদি ও দিদি’ এবং ‘পদ্মে ছাপ টিএমসি সাফ’ সংলাপও বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছিল। মোদি হ্যায় তো মুমকিন হ্যায়। বিজেপির অন্দরে কথাটা ভীষণভাবে প্রচলিত। এ নিয়ে নমোর জনপ্রিয়তা কয়েক গুন বেড়েছে। রাষ্ট্রনেতাদের পিছনে ফেলে একাধিকবার জনপ্রিয়তার শীর্ষে উঠে এসেছেন নমো। শুধু তাই নয় স্যোশাল মিডিয়ায় বেশ জনপ্রিয় মোদি। কিছুদিন আগেই টুইটারে ঝড় তুলেছিল মোদির জঙ্গলের মধ্যে তোলা কয়েকটা ছবি। নামিবিয়ান চিতাদের মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে ছাড়লেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী (Narendra Modi)। তাতে দেখা দিয়েছে চোখে রোগ চশমা,গায়ে জঙ্গল সাফারির বিশেষ কোট। মাথায় কাউবয় হ্যাট। শুধু কি তাই অনেক বেশির ভাগ সময় বিমানবন্দরে বিমান থেকে ক্যামেরায় লং শটে দেখা যায় একা মোদিকে। তা সে কেদারনাথের গুহাতে ধ্যানমগ্ন তপস্বী বেশে হোক আর লাল কেল্লায় রেড কার্পেটের উপর হেঁটে যাওয়া। সবেতেই নিজেকে এক অন্যান্য রূপে তুলে ধরতে চেয়েছেন। নমোর মিথ্যা ভাষণের মধ্যে দিয়ে তাঁর চাতুর্যে লক্ষ্য করা যায়, বলে দাবি বিরোধীদের।স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রীর বক্তৃতা হোক কিংবা রাজনৈতিক জনসভায় বক্তব্য সব কিছুতে সাধারণ মানুষের ব্রেন ওয়াশ করতে মিথ্যাভাষ দেন প্রধানমন্ত্রী। অসত্য, মিথ্যা আশ্বাস ও চাতুর্যের সাহায্যে সাধারণ মানুযের কাছে বিশ্বাসযোগ্য হিসাবে তুলে ধরেন। হিন্দুত্ববাদই অস্ত্রতে বারবার শান দিচ্ছে বিজেপি। বিজেপি , আরএসএস , এনডিএ সব কিছুতেই ‘মোদি-তন্ত্র’। অর্থনীতি, বিদেশনীতি, দারিদ্রমোচন, আঞ্চলিক বৈষম্য, এমনকী মণিপুর- ভক্তদের বক্তব্য, সব ক্ষেত্রেই তিনি আশার আলো দেখিয়েছেন। মূল্যবৃদ্ধি বা অর্থনৈতিক সমস্যার কথা স্বীকার করেছেন। প্রোপাগান্ডার জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়াকে, ডিজিটাল প্রযুক্তিকে। আক্রমণের লক্ষ্য করছেন কংগ্রেসকে। এদিন মোদিকে ‘গব্বর’ সাজিয়ে অ্যানিমেশন বাজারে ছেড়েছে কংগ্রেস। ব্যঙ্গচিত্রে মোদিকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘কিতনে আদমি থে’। কংগ্রেসের জবাব, ‘এক হি গান্ধী কাফি হ্যায়’। রাহুল গান্ধীকেও অ্যানিমেশনে ‘হিরো’র ভূমিকায় তুলে ধরেছে তাঁর দল। সোমবার ছাড়া এই অ্যানিমেশন ইতিমধ্যেই ভাইরাল হয়ে গিয়েছে। যদিও এখনও পর্যন্ত বিজেপির তরফে কোনও জবাব মেলেনি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct