ইলিশের স্বাদ
শঙ্কর সাহা
আজ মুখুজ্জ্যে বাড়িতে বড্ড ধূম পড়েছে। রথযাত্রা উপলক্ষে বাড়িতে যে সবাই এসেছে। । তিন মেয়ে, জামাই, নাতি-নাতনি সব মিলে যে আজ চাঁদের হাট বসেছে। জামাইদের জন্যে অনেক পদের রান্না হচ্ছে।কেউ ভালোবাসেন সরষে ইলিশ,কেউবা চিকেন আর কেউ মাটন কষা। তাই বাজারের ফর্দিটাও বেশ বড়ো। বাড়িতে কাজের মাসি দুজন থাকলেও রান্না ঘরের দায়িত্বটি পনেরো বছর ধরে সামলেছেন অরুণিমা। স্বামীহারা অরুণিমা দুটো সন্তানকে নিয়ে কোনোমতে মুখুজ্জ্যে বাড়িতে কাজ করে সংসার চালান। মাসে দুই হাজার টাকা আর দুবেলা ভাত পেয়ে অতিকষ্টে সংসার চালান অরুণিমা । আজ কাজে আসার সময় বছর ছয়ের তার ছোট্ট ছেলেটি পটা অরুণিমার হাতটি ধরে বলে, “ মা, মা...আজ কত্ত কি রান্না হবে। ওদের যা বেঁচে যাবে তা নিয়ে আসবে। আমি আর দিদি পেট ভরে খাবো। ছেলের কথায় একটু হেসে অরুণিমা বলে, “ আনবো রে পটা, বাবা আমার”!!রান্না ঘরে আসার পর থেকে একদন্ড বসার সময় নেই অরূণিমা। এতো পদ রান্না । দুপুরের মধ্যে যে সেরে ফেলতে হবে। আজ জামাইবাবারা খাবেন। ইলিশের গন্ধে ঘর মোহিত। কড়াই এ ইলিশ ভাজতে ভাজতে অরুণিমা বলে, “ মা ঠাকরুন, বাজারে ইলিশের অনেক দাম তাইনা।“ “ হ্যাঁ , হাজার টাকা কিলো। নে ,কথা না বলে তাড়াতাড়ি হাত লাগা,-মা ঠাকরুন অরুণিমার দিকে হাত নাড়িয়ে বলতে থাকেন। হঠাত ছেলে পটার কথা মনে পড়ে অরুণিমার। পটাটা ইলিশ খেতে খুব চায়?দুপুরে সকলের খাওয়া হলে রান্না ঘর মুছতে মুছতে হঠাত ঘড়িতে নজর পড়ে অরুণিমার। দেখে দুপুর গড়িয়ে বিকেল ৪টে বাজে। বাড়িতে পটা আর তার দিদি না খেতে পেয়ে হয়তো এতোক্ষণে ঘুমিয়ে পড়েছে। তাড়াতাড়ি কাজ সেরে বাড়ি আসে অরুণিমা । দেখে বাচ্চাদুটো কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েছে। ছেলের গায়ে হাত দিয়ে অরুণিমা ডাকতে থাকে, “ পটা ,ওঠ বাপ। দেখ, তোর জন্যে ইলিশ আনছি। খাবি ওঠ”। মার ডাকে পটা ও তার দিদি ওঠে পড়ে। চোখ মুছতে মুছতে পটা বলতে থাকে, “ এতো দেরি করলে কেন মা, পেটে বড্ড যে খিদে পায় “। ছেলে-মেয়ের পাতে ভাত দিতে দিতে অরুণিমার চোখটি অশ্রুসজল হয়ে ওঠে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct