নিজস্ব প্রতিবেদক, আসাম, আপনজন: শিলচর, ২০ আগস্ট : ডিলিমিটেশন নিয়ে অসমের প্রায় প্রতিটি জেলায় ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। জনগণ কোন ভাবে সদ্য ঘোষিত ডিলিমিটেশন মেনে নিতে পারছেন না। যার বহিঃপ্রকাশ হচ্ছে বিভিন্ন নেতাদের পদত্যাগ সহ বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মন্তব্য এবং পরবর্তী আন্দোলনের ঘোষনা । এই চাপা উত্তেজনা হয় তো পরবর্তীতে ভয়ঙ্কররূপ ধারণ করতে পারে বলে সচেতন মহল মনে করেছেন। শুধু বিজেপি সরকারের বিরোধী্ রাজনৈতিক দল ও ব্যক্তিরা যে ডিলিমিটশনের প্রতিবাদ করছেন তা নয়, শাসক বিজেপি ও তার শরিক দলের নেতারাই এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমেছেন। তবে মূখ্যমন্ত্রী ডিলিমিটেশনকে সাদর অভ্যর্থনা করে এটাকে অসমীয়াদের স্বার্থ রক্ষক বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু বাস্তবে প্রতিবাদের ঝড় তুন্ঙে । ডিলিমিটেশন ঘোষনার পরই অসমের বর্তমান আমগুড়ি বিধান সভা কেন্দ্রের বিধায়ক প্রদীপ হাজারিকা বিধায়ক পদ থেকে পদত্যাগ করেন। হাজারিকা বিজেপি সরকারের শরিক অসম গণ পরিষদের বিধায়ক ছিলেন । ১২ আগস্ট হাজারিকা পদত্যাগ পত্র দলীয় সভাপতি তথা রাজ্যের কেবিনেট মন্ত্রী অতুল বরার কাছে প্রেরণ করেন। এদিন আবার আমগুড়ি বিধানসভা বিলুপ্তি করার প্রতিবাদে বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীরা অর্ধ উলন্ঙ হয় বিক্ষোভ মিছিল করেন। বিজেপি দলের প্রবীন নেতা নগাঁও থেকে চার বারের সাংসদ তথা প্রদেশ বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি রাজেন গোঁহাই ডিলিমিটেশনের প্রতিবাদ করে কেবিনেট মর্যাদা সম্পন্ন খাদ্য ও অসামরিক সরবরাহ নিগমের চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এক্ষেত্রে তিনি মূখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মাকে নিশানা করেন।
এদিকে ডিলিমিটেশন নিয়ে অসমের বাঙ্গালী অধ্যুষিত বরাক উপত্যকায় জনক্ষোভ অধিক পরিমাণে পরিলক্ষিত হচ্ছে। উপত্যকার ১৫ টি বিধানসভা অাসন থেকে কমিয়ে ১৩ টি আসন করা হয়েছে। এছাড়া ভৌগোলিক ভাবে আসনগুলো এমনভাবে সাজানো হয়েছে যে দশ পনেরো কিলোমিটার ডিঙ্গীয়ে এবং অন্য আসন অতিক্রম করে নিজ সমষ্টির কেন্দ্রে যেতে হবে। আসন কমানো ও ভৌগোলিক কাটচাটের প্রতিবাদে রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক দল ও সংগঠন সোচ্চার হয়েছে । ইতিমধ্যে সামাজিক সংগঠন বরাক ডেভেলপমেন্ট ফ্রন্ট বা বিডিএফ পৃথক বরাক রাজ্যের দাবী উত্থাপন করেছে। বিডিএফের মুখ্য আহ্বায়ক আইনজীবি প্রদীপ দত্ত রায় এক সাংবাদিক সম্মেলনে বরাক উপত্যকাকে অসম থেকে পৃথক করে ৬০ অাসন বিশিষ্ট পূর্বাচল রাজ্যের দাবি নিয়ে আন্দোলন করার কথা ঘোষনা করেন। শিলচর সংসদীয় আসনটি তপশীলদের জন্য সংরক্ষণ করায় শিলচরের বিজেপি সাংসদ ডা: রাজদীপ রায় নিজের ক্ষোভ নির্বাচন কমিশনকে জানিয়ে দিয়েছেন । এখানে উল্লেখ্য ভারতের নির্বাচন কমিশন গত ১১ আগস্ট ডিলিমিটেশনের চুড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করে। এর আগে খসড়া প্রকাশিত হলে বিভিন্ন দল ও সংগঠন প্রতিবাদ করে। এমনকি কমিশনের তিন সদস্যদের একটি কমিটি শুনানিও গ্রহণ করে। কিন্তু দল সংগঠন বা জনগণের দাবির প্রতি কোন গুরুত্ব না দিয়ে খসড়া কে প্রায় হুবহু ১১ আগস্ট চুড়ান্ত তালিকা হিসাবে প্রকাশিত হয়। আরো আশ্চর্যের বিষয় যে রাতারাতি ১৬ আগস্ট বুধবার রাস্ট্রপতির সিলমোহর ও হয়ে যায়। রাস্ট্রপতি এদিন নির্বাচন কমিশনের নোটিফিকেশনে সাক্ষর করেন। তবে খসড়া প্রকাশের পর কয়েকটি দল ও সংগঠন এর প্রতিবাদে সুপ্রিম কোর্টে আবেদন করে। তার বিচার এখনো বাকি রয়েছে।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct