২০১১ সালে ২০শে মে পশ্চিমবাংলায় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসীন হয় । ঠিক তারপরেই ২০১১ সালের ১৪ই জুন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সহ রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন কমিটি গুলি সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে বাতিল করে দেয় । লিখেছেন সনাতন পাল।
২০১১ সালে ২০শে মে পশ্চিমবাংলায় মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকার ক্ষমতায় আসীন হয় । ঠিক তারপরেই ২০১১ সালের ১৪ই জুন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সহ রাজ্যের সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন কমিটি গুলি সরকার অর্ডিন্যান্স জারি করে বাতিল করে দেয় । এই পরিচালন কমিটি গুলি গঠিত করা হয়েছিল ১৯৮১ সালের ডব্লিউ বি.ওয়েস্ট বেঙ্গল ইউনিভার্সিটি অ্যাক্ট অনুযায়ী। মমতা বন্দোপাধ্যায়ের সরকারের আমলে এই আইনকে ৩ বার সংশোধন করা হয় । বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালন ব্যবস্থার মাথার উপর রয়েছে সর্বোচ্চ কমিটি ‘ দ্য কোর্ট ‘। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয় গুলির অভ্যন্তরে প্রাত্যহিক পরিচালনার জন্য কমিটি ‘দ্য এক্সিকিউটিভ কাউন্সিল’ রয়েছে । এই দ্য এক্সিকিউটিভ কাউন্সিলে তিন ধরণের সদস্য/সদস্যা রয়েছেন । আগে সেখানে মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকতেন নির্বাচিত প্রতিনিধি গণ আর বাকিটা পদাধিকার বলে এবং মনোনীত সদস্য/ সদস্যারা থাকতেন । এই তথ্য দ্বারা এটা পরিষ্কার ভাবে প্রমাণিত হয় যে ১৯৮১ সালের পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা হত গণতান্ত্রিক উপায়ে। কারণ পরিচালন কমিটির সংখ্যা গরিষ্ঠ সদস্য/সদস্যারাই ছিলেন গণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত। এই নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মানুষের প্রতি একটা আলাদা দায়বদ্ধতা থাকত। নির্বাচিত প্রতিনিধিরা হতেন অধ্যাপক, গবেষক, শিক্ষাকর্মী এবং ছাত্রছাত্রীদের থেকে।
আবার প্রত্যেক ফ্যাকাল্টিরও একটি করে পরিচালন কমিটি ফ্যাকাল্টি কাউন্সিল ছিল। ঐ ফ্যাকাল্টির শিক্ষকরাই নির্বাচিত হয়ে নিজ নিজ ফ্যাকাল্টি কাউন্সিলে থাকতেন। এই কাউন্সিলের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আবার ফ্যাকাল্টির প্রধান ‘ডিন’ নির্বাচন করতেন । এই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় পশ্চিমবাংলার সমস্ত বিশ্ববিদ্যালয় গুলি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার আসার আগে পরিচালিত হত । কিন্তু মমতা বন্দোপাধ্যায়ের আমলে এই আইন সংশোধন করে সমস্ত পরিচালন কমিটিতে সিংহভাগ সদস্য/ সদস্যাদের করা হলো মনোনীত আর বাকিটা পদাধিকার বলে। নির্বাচিত সদস্য/ সদস্যা সংখ্যা কম। এই সিদ্ধান্তে সরকারের অভিসন্ধি পরিস্কার যে, বিশ্ববিদ্যালয় গুলির পরিচালন ব্যবস্থায় নির্বাচিত প্রতিনিধির সংখ্যা কমিয়ে গণতন্ত্রকে হত্যা করে শাসকের খেয়ালখুশি মত ব্যক্তিদের বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিচালন কমিটিতে ঢুকিয়ে দলতন্ত্র কায়েম করার চেষ্টা চলছে। একথা হয়তো অনেকেই জানেন যে প্রত্যেক বিশ্ববিদ্যালয় তাদের নিজস্ব প্রয়োজনে একটি করে স্ট্যাটুট তৈরী করে এবং সেটা আচার্য তথা রাজ্যপালের কাছে অনুমোদন করিয়ে নিতে হয়। সরকার বদলের পরে নতুন নিয়মেই যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় সহ রাজ্যের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় গুলিতে তাদের নিজস্ব স্ট্যাটুট তৈরী করে রাজ্যপালের কাছে পাঠিয়েছিলেন কিন্তু মাননীয় রাজ্যপাল বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য উচ্চ শিক্ষা দপ্তরে পাঠিয়েছিলেন । যাদবপুরের ক্ষেত্রে দেখা গেছে ১০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সেই প্রস্তাবিত স্ট্যাটুট রাজ্যপালের অনুমোদন পাঠায়নি। এমতাবস্থায় রাজ্যের সমস্ত শিক্ষানুরাগী মানুষ এবং অধ্যাপক এবং অধ্যাপিকাগণ প্রশ্ন তুলেছিলেন যে এমন করার সরকারের আসল উদ্দেশ্য কি ? শুধুই কি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে হত্যা করা! নাকি তার সঙ্গে এই দশ বছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে দলদাসদের দিয়ে দলতন্ত্রটাও কার্যকরী করা? বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে যুক্ত সমস্ত সম্মানীয় ব্যাক্তিরাই নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছেন যে সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতন্ত্রকে হত্যা করে দলতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতেই এই ফন্দি এঁটেছেন । ফলে রাজ্যের বিশ্ববিদ্যালয় গুলির পরিচালন ব্যবস্থার যা ঘটার সেটাই ঘটেছে। এখন বিশ্ববিদ্যালয় গুলির পরিচালন সংক্রান্ত কোনো সমস্যা হলে বা কোথাও যদি পরিচালন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে, তাহলে সেই দায় পরিচালন কমিটি গুলির উপরেই বর্তাবে এবং ঘুরে সেই দায় সরকারের উপরেই বর্তাবে। এটা বোঝার জন্য খুব বেশি পড়াশোনা করার দরকার পড়ে না। তাহলে যাদবপুরে স্বপ্নদীপ হত্যা এবং হোস্টেলের বিশৃঙ্খলা, র্যাগিং এসবের দায় সরকার কি ভাবে এড়াতে পারেন? অথচ সুকৌশলে এই বিশৃঙ্খলার দায় সাধারণ অধ্যাপক/অধ্যাপিকাগণের উপরে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। তাই সমস্যার মূল জায়গাটা আড়ালে থেকে যাচ্ছে। কিন্ত সমস্যার মূলে আঘাত করে সমস্যাকে উপড়ে ফেলতে হলে এই পরিচালন কমিটির গঠন প্রক্রিয়াটাকেই বদল করে পূর্বের ন্যায় করা দরকার।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct