আপনজন ডেস্ক: হরিয়ানার নুহ জেলার সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের ১৫ দিন পর গ্রেফতার করা হল দাঙ্গার অন্যতম চক্রী বলে অভিযুক্ত বিট্টু বজরঙ্গীকে। উগ্রপন্থী হিন্দু সংগঠন বজরঙ্গ দলের এই নেতাকে গতকাল মঙ্গলবার তাঁর ফরিদাবাদের বাড়ি থেকে হরিয়ানা পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।গত ৩১ জুলাই রাজ্যের নুহ, গুরুগ্রাম ও পার্শ্ববর্তী জেলায় ওই সংঘর্ষে মোট ছয়জন নিহত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে দুজন ছিলেন রাজ্য পুলিশের হোমগার্ড।হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের এক ধর্মীয় শোভাযাত্রা ‘ব্রজমণ্ডল যাত্রা’–কে কেন্দ্র করে নুহ জেলায় ওই সংঘর্ষ বেধেছিল। অভিযোগ, ওই যাত্রা শুরুর দিন কয়েক আগে থেকেই সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার চালানো হয়েছিল। তাতে সহিংসতার ইন্ধন জোগানো হয়েছিল। যাঁদের নাম ওই প্রচারের সঙ্গে জড়িয়ে গিয়েছিল, তাঁদের একজন বিট্টু বজরঙ্গী, অন্যজন মনু মানেসর। দুজনেই গোরক্ষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। মনু মানেসরের বিরুদ্ধে রাজস্থানের দুই মুসলমান যুবককে পুড়িয়ে হত্যার অভিযোগও রয়েছে। রাজস্থান পুলিশের অভিযোগ, মনুকে গ্রেপ্তারের জন্য তারা হরিয়ানা পুলিশের সহযোগিতা পাচ্ছে না। গতকাল বিট্টু গ্রেপ্তার হলেও মনু এখনো অধরা।
ফরিদাবাদ পুলিশ জানিয়েছে, জিজ্ঞাসাবাদের পর বিট্টু বজরঙ্গীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে অস্ত্র আইন ও হিংসায় প্ররোচনার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযোগ, তিনি ও তাঁর সঙ্গীরা খোলা তলোয়ার হাতে এক মন্দিরের সামনে দাঁড়িয়ে সহকারী পুলিশ সুপার উষা কণ্ডুর সামনেই হিংসার প্ররোচনা দিয়েছিলেন। উষা কণ্ডুর দায়ের করা অভিযোগের ভিত্তিতেই বিট্টুকে গ্রেপ্তার করা হয়। বিট্টুকে গ্রেপ্তার করতে গতকাল তাঁর পাড়ায় হাজির হয়েছিল সাদাপোশাকের পুলিশের একটা বড় দল। সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের টুইট করা এক ভিডিও ক্লিপিংয়ে গ্রেপ্তারের সেই দৃশ্য ধরা পড়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, ১৫ থেকে ২০ জনের সশস্ত্র একটা দল একটি রাস্তা ধরে এগিয়ে যাচ্ছে। তারপর বিট্টুকে সঙ্গে নিয়ে চলে যাচ্ছে। বিট্টু বজরঙ্গীর আসল নাম রাজ কুমার। সবজি বিক্রি তাঁর পেশা। নুহ জেলা মুসলমান–অধ্যুষিত। সেখানে একটি শিবমন্দির আছে। শ্রাবণ মাসে সেই মন্দিরে ধর্মীয় অনুষ্ঠান হয়। গত ৩১ জুলাই সেই উপলক্ষে এক শোভাযাত্রার আয়োজন করা হয়েছিল। ওই সময় মনু মানেসর ও বিট্টু বজরঙ্গীদের নাম করে বেশ কয়েকটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচারিত হয়। বলা হয়, ওই দুজন সেই শোভাযাত্রায় উপস্থিত থাকবেন। সে নুহ জেলায় ঢুকতে গেলে শুরু হয় সংঘর্ষ। ওই সংঘর্ষের রেশ ছড়িয়ে পড়ে পার্শ্ববর্তী গুরুগ্রাম, মানেসরসহ বিভিন্ন এলাকায়। তারপর হরিয়ানা প্রশাসন গুরুগ্রাম ও নুহ এলাকার বহু বস্তি ভেঙে দেয়। অবৈধ নির্মাণ ও স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়। হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে মুসলমানদের অন্যত্র চলে যেতে প্রচার চালানো হয়।মুসলমানদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক দিক থেকে বর্জন করার ডাকও দেওয়া হয়। ওই সব অঞ্চলের মুসলমানের অধিকাংশই পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি। অনেকেই এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গিয়েছেন। যাঁরা আছেন, তাঁরা ভয়ে ভয়ে রয়েছেন। হরিয়ানার কৃষকসমাজ অবশ্য উগ্র হিন্দুত্ববাদীদের বিরোধিতায় সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে। হিন্দুত্ববাদী সংগঠন সম্প্রতি এক মহাপঞ্চায়েতে গ্রেপ্তার হিন্দুদের মুক্তির দাবি জানিয়েছে। পাশাপাশি তারা ঘোষণা করেছে, ২৮ আগস্ট ওই নুহ জেলায় নতুন করে ‘ব্রজমণ্ডল যাত্রা’ অনুষ্ঠিত হবে। হরিয়ানা গোরক্ষক দল এই উপলক্ষে মহাপঞ্চায়েতে বলেছে, কেউ যেন এফআইআরের ভয় না পায়। আত্মরক্ষার্থে তারা অন্তত ১০০ রাইফেল সংগ্রহ করার ঘোষণা দিয়েছে। রাজ্য পুলিশ এখনো এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct