আপনজন ডেস্ক: জ্ঞানবাপি মসজিদ মামলার পাঁচ হিন্দু মহিলা বাদীর মধ্যে একজনের প্রতিনিধিত্বকারী তথা বিশ্ব বৈদিক সনাতন সংঘের (ভিভিএসএস) প্রধান জিতেন্দ্র সিং ভিসেন। জ্ঞানবাপি মসজিদ মামলা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি হওয়ায় তিনি হিন্দু পক্ষের তরফে ইস্যুটি নিয়ে আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির জন্য মসজিদ পরিচালনা কমিটি আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদের (এআইএম) সাথে সংলাপের প্রস্তাব দিয়েছেন। সূত্রের খবর, জিতেন্দ্র সিং ভিসেন সোমবার এই বিষয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটির কাছে। বুধবার মসজিদ কমিটির তরফে নিশ্চিত করা হয়েছে, তারা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে চিঠিটি পেয়েছে। আর চিঠিটি পাওয়ার পর যথাযথ উত্তর দিয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এ ব্যাপারে আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটির যুগ্ম সচিব এস এম ইয়াসিন ভিসেনের প্রস্তাবে এআইএমের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু না জানালেও বলেন, আমরা হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ভিভিএসএস প্রধান ভিসেনের কাছ থেকে চিঠি পেয়েছি। আমরা তাকে এবং (ভিভিএসএস-এর জাতীয় সভাপতি) সন্তোষ সিংকে জবাব দিয়েছি। তবে মসজিদটি পরিচালনা কমিটির পূর্ণাঙ্গ কমিটির সামনে চিঠিটি উপস্থাপন করা হবে বলে জানান ইয়াসিন। উল্লেখ্য, আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটি বারাণসীতে প্রায় ২২ টি মসজিদ পরিচালনা করে। অন্যদিকে,জ্ঞানবাপি মসজিদ প্রাঙ্গণে দেবী শ্রিংগার গৌরী এবং অন্যান্য দেবদেবীদের সারা বছর পূজা করার অধিকারে দাবিতে যে পাঁচ জন হিন্দু মহিলার মধ্যে একজন হিসাবে রাখি সিং। তার প্রতিনিধিত্বকারী ভিসেন জিতেন্দ্র সিং ভিসেন আঞ্জুমান ইন্তেজামিয়া মসজিদ কমিটির উত্তর প্রসঙ্গে জানিয়েছেন,হ্যাঁ, কমিটি চিঠির জবাব দিয়েছে। রাখি সিংয়ের পাশাপাশি মামলার অন্যবাদীরা হলেন বারাণসীর রেখা পাঠক, সীতা সাহু, লক্ষ্মী দেবী এবং মঞ্জু ব্যাস, জ্ঞানওয়াপি প্রাঙ্গণের শ্রিংগার গৌরী স্থলে দৈনন্দিন উপাসনার অধিকার চেয়েছিলেন। মামলাটি বারাণসী জেলা আদালতে বিচারাধীন রয়েছে এবং পরবর্তী শুনানি বৃহস্পতিবার ১৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত হবে।
ভিসেনের ঘনিষ্ঠ সূত্রের মতে, তিনি বিরোধ নিষ্পত্তির জন্য মুসলিম পক্ষের সাথে সংলাপের পক্ষে ছিলেন এই বিশ্বাসে যে, “কিছু অসামাজিক উপাদান” তাদের ব্যক্তিগত লাভের জন্য আইনি বিরোধের সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করছে যা দেশ এবং সমাজ উভয়ের জন্য ক্ষতিকারক প্রমাণিত হতে পারে। সূত্র জানায়, ভিসেন বলেছেন, দেশ ও সমাজের নিরাপত্তার স্বার্থে পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে সৌহার্দ্যপূর্ণভাবে এই আইনি ইস্যুনিষ্পত্তি করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করা সবার কর্তব্য। সুতরাং, আমি আপনাদের সকলকে খোলা এবং ধার্মিক মনের সাথে এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করার এবং উপরোক্ত ইস্যুটি (জ্ঞানবাপি ইস্যু) নিষ্পত্তির জন্য আলোচনার জন্য এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি। ভিসেন তার চিঠিতে বলেন,পারস্পরিক আলোচনার মাধ্যমে উপরোক্ত বিষয়টির আদালতের বাইরে একটি শান্তিপূর্ণ সমাধান পাওয়া সম্ভব। আমরা আপনাদের সবাইকে খোলা এবং বিশুদ্ধ হৃদয়ে এই সংলাপে স্বাগত জানাই, এদিকে, অন্য চার হিন্দু নারী বাদীর আইনজীবীরা বিষয়টি আদালতের বাইরে নিষ্পত্তির বিষয়ে তাদের আপত্তি প্রকাশ করেছেন। মামলার অন্য চার মহিলা বাদীর প্রতিনিধিত্বকারী সুভাষ নন্দন চতুর্বেদী রয়টার্সকে বলেন, তারা কোনও নিষ্পত্তির দিকে তাকিয়ে ছিলেন না। তারা বলেন, আমরা পরিষ্কার। আমরা আইনি পথেই যাব, যা আমরা শুরু থেকেই অনুসরণ করেছি। এই বছরের মে মাসে আমরা বারাণসী জেলা আদালতে একটি আবেদন দায়ের করে জ্ঞানবাপি মসজিদ প্রাঙ্গণে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ (এএসআই) দ্বারা বৈজ্ঞানিক সমীক্ষার আদেশ চেয়েছিলাম। উভয় পক্ষের শুনানি শেষে গত ২১ জুলাই আদালত ওজু খানা সিলকরা এলাকা বাদ দিয়ে জ্ঞানওয়াপির ব্যারিকেড এলাকায় এএসআই সমীক্ষার নির্দেশ দেয়। সেই নির্দেশ অনুযায়ী জ্ঞানবাপি মসজিদে এএসআই দ্বারা সমীক্ষা করা হচ্ছে। তাই আমরা সমীক্ষা প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করব এবং এই মামলায় আরও এগিয়ে যাব।উল্লেখ্য, বাবরি মসজিদ মামলার সমং আদালতের বাইরে গিয়ে মীমাঙসা করার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়। তবে, যে পাঁচজন হিন্দু মহিলা জ্ঞানবাপি মসজিদটি মন্দির বলে দাবি করেছেন তাদের একজনের প্রতিনিধি আদালতের বাইরে মীমাংসা করার প্রস্তাব দেওয়ায় নিঃসন্দেহে তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct