সহস্র প্রাণের অকাল বলিদানের বিনিময়ে রক্তাক্ত পথ বেয়ে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট অর্জিত হয়েছে জনগণের বহু কাঙ্ক্ষিত দেশের স্বাধীনতা । ভারতের স্বাধীনতার ৭৬ বছর সম্পূর্ণ। স্বাধীন ভারত গণতন্ত্রের, প্রজাতন্ত্রের সর্বোপরি ধর্মনিরপেক্ষতায় আজ ও এক এবং অনন্য। স্বাধীনতার মাহেন্দ্রক্ষণের সেই চিত্র আজ ও ভোলার নয় । আজ ও ভারত স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। লিখেছেন এম ওয়াহেদুর রহমান।
সহস্র প্রাণের অকাল বলিদানের বিনিময়ে রক্তাক্ত পথ বেয়ে ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট অর্জিত হয়েছে জনগণের বহু কাঙ্ক্ষিত দেশের স্বাধীনতা । ভারতের স্বাধীনতার ৭৬ বছর সম্পূর্ণ। স্বাধীন ভারত গণতন্ত্রের, প্রজাতন্ত্রের সর্বোপরি ধর্মনিরপেক্ষতায় আজ ও এক এবং অনন্য। স্বাধীনতার মাহেন্দ্রক্ষণের সেই চিত্র আজ ও ভোলার নয় । আজ ও ভারত স্বমহিমায় উদ্ভাসিত। ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট লালকেল্লায় উত্তোলিত হয়েছিল তেরেঙ্গা জাতীয় পতাকা । তারপর থেকে এটি প্রতীকী অনুষ্ঠান হিসেবে পালন হয় প্রতিবছর । পতাকা উত্তোলন, অনুষ্ঠান, কুচকাওয়াজ, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মাধ্যমে সারা দেশ ব্যাপী মহাসমারোহে দিন টি পালিত হয়। কিন্ত নেহরু ও জিন্নাহর বিরোধের চূড়ান্ত পরিণতি হিসেবে অর্থাৎ দ্বিজাতি তত্ত্বের ছুরিকাঘাতে ঐক্যবদ্ধ ভারতীয় জনগণ ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি দেশের অধিবাসী তে পরিণত হয়। সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপনের ফলেই যেহেতু দুটি দেশের জন্ম হয়েছে , তাই দেশের স্বাধীনতাকামী মানুষেরা চেয়েছিলেন আগামীতে প্রজন্মকে সাম্প্রদায়িকতার গরল থেকে রক্ষা করতে । তবে তাদের লালায়িত স্বপ্ন অনেকটাই হয়তো মরিচীকা বিভ্রমে পরিগণিত হয়েছে ! দেশভাগের কালো দিন গুলো কে হয়তো আবার ও মনের গহীনে জাগিয়ে দিচ্ছে আখলাখ, জুনায়েদ, গুজরাট কান্ড , শিখ নিধন, মনিপুর ও হরিয়ানার ঘটনা প্রবাহ কে ! স্বাধীনতার এত বছর পরও শোনা যায় দারিদ্র্যতা , বেকারত্বের অস্ফুট গোঙানী ! আজ ও দেখা যাচ্ছে বর্ণবৈষম্য , ধর্মান্ধতা, জাতপাতের বিচার , হরিজন বা অন্নুনত সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণ -- এ গুলো কী অসংহতির দীর্ঘদিনের লালিত অভিশাপ ?
বিশ্বাসঘাতকতার চরম পরিণতি হিসেবে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের ফলশ্রুতিতে বাংলা তথা ভারতের স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হলে ভারত ও ভারতীয়রা পরাধীনতার পঙ্কিলতায় নিমজ্জিত হয়ে পড়ে । ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকরা শোষণ শাসনের স্টিম রোলার চালিয়ে ভারতে দুশো বছর রাজত্ব কায়েম করেছিল । ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে ভারতের আপামর জনসাধারণ বিশেষতঃ হিন্দু মুসলিম কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে ব্রিটিশ অপশাসন উচ্ছেদ করতে উদ্যোগী হয়েছিল । হিন্দু মুসলিম প্রায় মিলিতভাবে ফকির - সন্ন্যাসি বিদ্রোহ , সিপাহী বিদ্রোহে অংশগ্রহণ করেছিল । কিন্ত বঙ্গভঙ্গ, স্বদেশী আন্দোলন, বন্দে মাতরম ধ্বনি , গীতা ছুঁয়ে শপথ গ্রহণ, রাখিবন্ধন, যুগান্তর ও অনুশীলন সমিতি প্রভৃতির ফলে হিন্দু মুসলিম বিভাজনের সৃষ্টি হয় । ফলে জন্ম নেয় মুসলিম লীগ । কংগ্রেসের অনমনীয় মনোভাব ও জিন্নাহর চৌদ্দ দফা প্রত্যাখানের দরুন অর্থাৎ নেহরু বনাম জিন্নাহর বিরোধের জন্যই দেশভাগের মতো ঘটনা ঘটে। আর তাঁদের এই ক্ষমতার দ্বন্দের ইন্ধনে ঘী দেয় ইংরেজ ঔপনিবেশিকরা , সৃষ্টি হয় ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি দেশ । এর পুরোটাই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত । দেশভাগ সহিংসতার প্রকৃতি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বৈরিতা ও সন্দেহের পরিবেশ তৈরি করেছিল, যা আজও বিদ্যমান । দেশভাগের ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ বাস্তুহারা হয়ে পড়েছিল । সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় হাজার হাজার মানুষ নিহত হয়েছিল । ধর্ম ভেদে দেশভাগের মধ্য দিয়ে ৪৭ যে দ্বিখণ্ডিত স্বাধীনতা এসেছে , সময়ান্তরে তার রক্তক্ষরণ শুকিয়ে এলে ও দেহের যন্ত্রণা সক্রিয় হয়ে গেছে। যার ফলে দেশভাগ থেকে মানুষ ভাগে দেশের মানুষ কে স্বদেশেই পরবাসী করে তোলে । সেই স্বদেশ হারানোর স্বাধীনতা অনেকের কাছেই পরাধীনতার ছিন্নমূল জীবন !
দেশের স্বাধীনতা লাভের ৭৬ বছরে দাঁড়িয়ে তার প্রাপ্তি ও প্রত্যাশার তুল্যমূল্যে ফিরে দেখার অবকাশে আপনাতেই নানা প্রশ্ন পরিপ্রশ্ন উঠে আসে । সেখানে সাফল্য ব্যর্থতার নিরিখটি নিয়েই বিতর্কের বহুমুখী চিন্তার লক্ষ্য করা যায় । তাই অনেকেরই জিজ্ঞেস , এত দিনের স্বাধীনতা আমাদের কী দিয়েছে ? নতুন প্রজন্মের নিকট স্বাধীনতা দিবস উদযাপন কী নিছকই একটি সেলিব্রেশন ? নাকি ফেস্টিভ মুড ছাড়া আর কিছুই নয় ? আমাদের দেশ এখনো আশানুরূপ সাধারণ মানুষের জন্য অন্ন বস্ত্র বাসস্থান, শিক্ষা স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের নূন্যতম চাহিদা মেটাতে সক্ষম হয় নি । আমাদের দেশে সম্পদের অভাব নেই, তবে অভাব রয়েছে সেই সম্পদের সুষম বণ্টনের । অভাব আছে নীতি নির্ধারণের । ভারতীয় সমাজ জীবনের গতিপথে ক্রমশঃ বিস্তার লাভ করছে ধর্ম ভেদ, বর্ণ ভেদ । দলিতর স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন করতে পারবে না, কুয়োর জল আনতে পারবে না, মন্দিরে ও প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ। দলিত রাঁধুনির রান্না করা মিড ডে মিল স্পর্শ করতে পারবে না উচ্চ বর্ণের ছাত্র ছাত্রীরা। তাছাড়া ধর্মের অজুহাতে ধর্মান্ধতার গন্ডি পেরিয়ে সাম্প্রদায়িকতার কদর্য চেহারায় আমাদের আশা আকাঙ্খা অনেকটাই ব্যার্থতায় পরিনত। তাই মাঝে মধ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে হিংসার অনল জ্বলে ওঠে । ভারতে মাথা চাড়া উঠেছে রাজনীতি ও জাতপাতের লড়াই , ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব। স্বাধীনতার এত বছর পরেও দারিদ্রের পীড়ণ, শ্রেনী শোষণ , অপুষ্টি প্রভৃতি সমস্য দেখা যায় । সুতরাং স্বাধীনোত্তর ভারত দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার পর ও হয়তো জনগণের আশা আকাঙ্খা সম্পূর্ণ করতে সক্ষম হয় নি । তবু ও দেশ আজকে এগিয়ে চলেছে উন্নত থেকে উন্নততর দিকে , পরিণত হয়েছে ডিজিটাল ভারতে , বাস্তবে ভারত পরিনত হয়েছে মহামানবের মহাতীর্থে ,ফুটে উঠেছে বৈচিত্রের মাঝে ঐক্য ।
All Rights Reserved © Copyright 2024 | Design & Developed by Webguys Direct